রবিবার বিকেলে নিউটাউনের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের স্নাতক স্তরের পড়ুয়া শাকিল আহমেদ। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘন্টারও বেশি সময়। ঘটনার জন্য দায়ী গাড়িটিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও পুলিশ এখনও সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারেনি, দুর্ঘটনার সময় চালকের আসনে কে ছিলেন। ১ ব্যক্তিকে আটক করা হলেও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
পুলিশের এই আপাত ‘গাফিলতিতেই’ উঠতে শুরু করেছে একধিক প্রশ্ন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আশঙ্কা, প্রভাবশালী কাউকে আড়াল করতেই পুলিশ ‘ঢিমেতালে’ তদন্ত করছে। তাঁরা তদন্ত প্রক্রিয়ায় কারচুপিরও অভিযোগ তুলছেন। ‘অবিলম্বে ঘাতক গাড়ির মালিকের নাম জানাতে হবে’, এই দাবি তুলে অনড় অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা।
পড়ুয়াদের এমন সন্দেহের পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলের, অর্থাৎ নিউটাউনের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্মীরা। সহপাঠীর মৃত্যুর জন্য দায়ী দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পথে নামা পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন বিধাননগর কমিশনারেটের শীর্ষ আধিকারিকরা। পড়ুয়াদের কিছুটা শান্ত করার জন্য তাঁরা জানান, ঘাতক গাড়িটি মূলত দুইজন ব্যবহার করতেন। তাঁরা হলেন প্রতীক খাঁড়া এবং আলি নামে দুই ব্যক্তি। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন?
এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে। কেন্দ্রীয় সরকারের চালু করা অ্যাপ ‘এম পরিবহণ’ কিংবা ‘ডিজি লকারে’ আটক গড়িটির নম্বর দিলেই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। পড়ুয়াদের বক্তব্য, গাড়িটি ‘সন্মার্গ’ সংবাদপত্রের নামে নথিভুক্ত। এই পত্রিকার মালিক বিবেক গুপ্ত আবার বড়বাজার কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক।
এই জায়গা থেকেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ‘প্রভাবশালী’ যোগের তত্ত্বে অনড় রয়েছেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তন পড়ুয়া তারিকুল আনোয়ারের অভিযোগ,ঘটনার সময় চালকের আসনে নিশ্চিত ভাবেই কোনও ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁকে আড়াল করে মামলা সাজাতেই পুলিশের এহোন দীর্ঘসূত্রিতা। তাঁর আরও আশঙ্কা, সেই প্রভাবশালীকে আড়াল করতে সংস্থার সাধারণ দুই কর্মচারীর নাম সামনে আনা হচ্ছে। যদিও পুলিশের তরফে এবিষয়ে মুখে কুলুপ আঁটা হয়েছে। তার ফলে জোরালো হচ্ছে যাবতীয় সন্দেহ।
কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র তথা রাজ্য মন্ত্রীসভার সদস্য ফিরহাদ হাকিমের কথায় বেড়েছে ক্ষোভ। সোমবার সাংবাদিকদের ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘‘আলিয়ার পড়ুয়ারা অবাস্তব দাবিতে আন্দোলন করছেন’’। মেয়র বলেছেন, ‘‘প্রভাবশালী মানে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে বোঝায়, সম্পদশালী ব্যক্তিকে নয়। এক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত নেই, তাই প্রভাবশালী তত্ত্ব একেবারেই খাটে না।’’
হাকিম সম্পদশালী ব্যক্তিকে ‘প্রভাবশালী’ তালিকার বাইরে আনতে ব্যস্ত কেন উঠেছে সেই প্রশ্ন। সম্পদশালীই বা কে? ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ সরকারের মনোভাবেও। তাঁরা বলছেন, বেপরোয়া গাড়ি চালনায় সহপাঠীকে হারানোর পর বিচার চাইলে তা ‘অবাস্তব আন্দোলন’ কিভাবে?
বিধাননগর পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গাড়িটির মালিক ইএম বাইপাস সংলগ্ন অজয়নগরের বাসিন্দা এক ব্যক্তি। ঘটনার পরে তিনি প্রতীক খাঁড়া এবং আলিকে দিয়ে কসবার একটি বহুজাতিক গাড়ি কোম্পানির সার্ভিস সেন্টারে গাড়িটি পাঠান। সেই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেই গাড়িটি এবং এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সামনে এসেছে।
Comments :0