দীর্ঘ টালবাহানা এবং প্রশাসনিক অসহযোগিতার পরে মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের বারাণসী কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন জমা দিতে পারলেন জনপ্রিয় কমেডিয়ান শ্যাম রঙ্গিলা। একদম শেষ দিনে তাঁর মনোনয়ন গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১০ মে থেকে বারাণসীতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন রাজস্থানের আলওয়ারের বাসিন্দা শ্যাম রঙ্গীলা। এই কেন্দ্রেরই সাংসদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেন তিনিও। কিন্তু বারবার নির্দল হিসেবে ভোটে লড়তে চাওয়া রঙ্গিলাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল কেন সেই প্রশ্ন এখনও ঘুরছে উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে। এর আগে গুজরাটের গান্ধীনগরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা অমিত শাহের কেন্দ্রে মনোনয়ন জোর করে তুলিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নকল করে কৌতুকাভিনয়ে জনপ্রিয় হন শ্যাম রঙ্গীলা। নিজের একের পর এক কাজে কৌতুকের মোড়কে নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছেন শ্যাম। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শ্যাম রঙ্গীলা নিজে নির্বাচনে দাঁড়ালে প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠস্বর নকল করেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রচার চালাবেন তিনি। যা নরেন্দ্র মোদীর ইমেজের জন্য যথেষ্ট বিড়ম্বনার। তাই বারংবার উত্তর প্রদেশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে শ্যাম রঙ্গীলার মনোনয়ন জমার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে শ্যাম জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে তাঁকে বারাণসীর ডিএম অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নিজের মনোনয়ন পত্র জমা করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষার বিষয়টিকে হাতিয়ার করে অন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়ার নিদর্শন স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুব বিশেষ নেই বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সোমবারও মনোনয়ন জমা দিতে এসে ফিরে যেতে হয়েছিল শ্যাম রঙ্গিলাকে। নির্বাচন কমিশনকে সেই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে তরুণ এই শিল্পী লিখেছিলেন, "মনোনয়ন জমার প্রক্রিয়াকে অতিরিক্ত শ্লথ করা হয়েছে। প্রার্থীদের ঘন্টার পর ঘন্টা রিটার্নিং অফিসারের ঘরের বাইরে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে অভব্যতা করা হচ্ছে। নিম্নস্তরের আধিকারিকদের দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে জানতে চাওয়া হচ্ছে কেন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইছেন।"
শ্যাম রঙ্গিলা মনোনয়ন জমা দিতে সফল হলেও একাধিক প্রার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি প্রশাসনিক অসহযোগিতার কারণে।
মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে কংগ্রেস প্রার্থীকে শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন তুলে নিয়ে বিজেপি’তে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। গুজরাটের সুরাটে তো কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে বিজেপি প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। সুরাটে বিজেপি প্রার্থী মুকেশ দালালের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানো কংগ্রেস সহ সমস্ত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। নজিরবিহীন ভাবে লোকসভা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় বিজেপি। ইন্দোর কেন্দ্রে মনোনয়ন জমার পরে বিজেপিতে যোগদান করানো হয় কংগ্রেস প্রার্থী অক্ষয়কান্তি বামকে। ইতিমধ্যেই ইন্দোরে 'নোটা-র সঙ্গে বিজেপি’র ভোট হয়েছে ১৩ মে। কারণ নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, কোনও কেন্দ্রে নোটায় বেশি ভোট পড়লে সেই আসনের ভোট বাতিল হবে।
মনোনয়নের পরে শ্যাম রঙ্গিলা বলেছেন, "ভারতের গণতন্ত্র যে কোনও নাগরিককে নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার দিয়েছে। আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি, যাতে বারাণসীতে সুরাট, ইন্দোরের মত ঘটনা ঘটতে না পারে। মানুষ যদি মনে করেন, তাঁরা নির্দিষ্ট কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দিতে চান, সেই সুযোগ গণতন্ত্রে থাকা উচিত। সেটা নিশ্চিত করতেই আমার ভোটে দাঁড়ানো।"
Comments :0