সঞ্জিত দে- বানারহাট
বিদায়ী বছরের শেষ মাসের প্রথম দিনে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গেই অন্ধকার নেমে এল বানারহাটের রিয়া বাড়ি চা বাগানের শ্রমিক মহল্লায়। এই বাগানের দেড় হাজার শ্রমিক কর্মহীন হলেন এক ফতোয়াতে।
১১ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বানারহাট আসার কথা। তার আগেই বন্ধ হয়ে গেল বানারহাটের আরও একটি চা বাগান।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে জেলা শাসক, জেলা পুলিশ সুপার সহ সমস্ত আধিকারিক গত কয়েকদিন ধরে বানারহাটের অলিতে গলিতে ঘুরছেন। এরই মধ্যে চা বাগান বন্ধ করে মালিক পক্ষ চলে যান কী করে তা নিয়ে ঘোরতর প্রশ্ন উঠেছে।
চা শ্রমিক সোমরা ওঁরাও, সাত্তার হোসেনরা জানিয়েছেন যে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি সময় কাজ করার জন্য অনেক দিন ধরে আমাদের চাপ দেওয়া হচ্ছিল। নিত্যদিনের মতো শুক্রবার সকালে চা বাগানে কাজে গিয়েছিলেন ওই শ্রমিকরা। কিন্তু বাইরে থেকে বন্ধ ছিল কারখানার গেট। এই খবর দ্রুত চাউর হয়ে যায় এলাকায়। শ্রমিকরা দেখেন চা বাগানের কারখানার গেট বন্ধ।
সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি চা বাগান খুলে গিয়ে মুখে হাসি ফুটেছিল শ্রমিকদের। তবে অন্য আরও একটি বাগান বন্ধ হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কর্মরত শ্রমিকদের। জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫০০ জন শ্রমিক হারালেন কাজ। এদের মধ্যে ৯৫৪ জন স্থায়ী শ্রমিক ও ৫৫০ জন অস্থায়ী শ্রমিক ছিলেন।
লোকসভা নির্বাচনের আগে পাখির চোখ এই চা বলয় তৃণমূলের। সেখানেই বেছে নেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল। আর সেই এলাকায় আবারও বন্ধ হয়ে গেল এক চা বাগান।
চা শ্রমিক শাকিলা খাতুন বলেন, “আজও সকালে কাজে এসেছিলাম। তখনই শুনি বাগান মালিক তালা দিয়ে চলে গিয়েছে। তবে নোটিশও লাগায়নি এখনও।”
চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের রিজিওনাল সম্পাদক নারায়ণ রাজগড় ও সভাপতি অজয় মাহালি বলেছেন, ‘‘একের পর এক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকারের মালিক তোষণ নীতি বহাল। আবার ভোট আসছে। দুই শাসক দল আবার প্রতিশ্রুতির ফানুস ওড়াবে জানি। ভোট মিটে গেলে আবার যে কে সেই। আমরা চাই দ্রুত বাগান চালু করে শ্রমিকদের হাতে কাজ দেওয়া হোক। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করছি মালিক পক্ষকে বাধ্য করুক আলোচনায় বসে বাগানের তালা খুলুক।’’
তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা কুমার বিশ্বকর্মাও মালিকপক্ষের জুলুম মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাজের সময় বাড়ানোর জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ অনেক দিন ধরেই চাপ দিচ্ছিল। রাত্রি ১টা অবধি কাজ করার কথা বলছিল। তার বদলে অতিরিক্ত মজুরিও দেবে না। এখানে বুনো জন্তু জানোয়ার বাগানে ঘুরে বেড়ায়। নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কে কাজ করবে? তাই আমরা মালিকের কথা শুনিনি। এরপর আজ দেখি কোনও নোটিশ না দিয়েই কারখানার গেটে তালা মেরে দেওয়া হয়েছে।”
Rheabari Tea Garden
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের মুখে বন্ধ চা-বাগান, কাজ হারালেন ১৫০০ শ্রমিক
×
Comments :0