ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী আরএসএস। তথাকথিত গণতন্ত্র, উদারতা ও সহিষ্ণুতার আবরণ খুলে দৃশ্যমান হচ্ছে হিংস্র চেহারা। সঙ্ঘ প্রধান সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন এই দেশ ‘হিন্দুস্থান’ ছিল ‘হিন্দুস্থানই’ থাকবে। নিজেদের প্রাধান্য পাওয়ার আশা ত্যাগ করে মুসলিমদের এদেশে থাকতে হবে হিন্দুদের অধীনতা মেনে। সমানাধিকার, সমনাগরিকত্ব ও সমমর্যাদার সাংবিধানিক অধিকারকে নস্যাৎ করে দিয়ে সঙ্ঘ প্রধান বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের হিন্দুস্থানে মুসলিমদের সমানাধিকারের কোনও সুযোগ নেই। হিন্দু আধিপত্য মেনে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবেই থাকতে হবে। মুসলিম বিদ্বেষের জিগির তুলে হিন্দুত্ববাদী অন্ধ ভক্তদের নৈরাজ্যের বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক প্রকল্পের হোতা আরএসএস ভারতে হিন্দু বা হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন নয়। হিন্দু ও হিন্দু সমাজ ভারতের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মিলনধর্মী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রবণতার অংশ। হিন্দুত্ববাদীরা তাদের সেই বহমান ধারা থেকে বের করে মুসলিম বিদ্বেষী ও উগ্র সংখ্যাগুরুবাদী করে তুলতে চায়। তার জন্য আশ্রয় করে বিকৃত ও মনগড়া ইতিহাসের। যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানকে বর্জন করে অনুসরণ যুক্তিহীন অবৈজ্ঞানিকতাকে। মানবিক সত্তার উপর ধর্মীয় সত্তাকে জায়গা করে দিয়ে বিধর্মীকে অবদমনের জন্য হিংস্রতার আশ্রয় নেয়। সঙ্ঘ প্রধান ঘুরিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল হবার আহ্বান জানিয়েছেন। বিগত সময়কালে বিশেষ করে কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর হিন্দুত্ববাদীদের আগ্রাসী মনোভাব বেড়েছে। শাসকের মদতে তাদের সংখ্যালঘুদের ভীত সন্ত্রস্ত করার কার্যকলাপ বেড়েছে।
ক্রমাগত মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার বেড়েছে। বলা হয় মুসলিম জনসংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। বাড়ছে মুসলিম অভিবাসীর সংখ্যা। তেমনি নাকি ধর্মান্তরকরণ বাড়ছে। এইভাবে মুসলিম সংখ্যা বেড়ে তারা নাকি ভারত দখল করে নেবে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোন তথ্য পরিসংখ্যান নেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মোটেই বেশি নয়।
ধর্মান্তরকরণ হিসাবের মধ্যেই আসে না। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে ক্ষেপিয়ে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। লক্ষ্য ধর্মীয় মেরুকরণ। যত বেশি মেরুকরণ হবে ততই বিজেপি’র লাভ। বস্তুত মেরুকরণ ছাড়া, মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দুদের এককাট্টা করা ছাড়া আরএসএস-বিজেপি’র ক্ষমতায় ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। আট বছরে মোদী যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার বেশিটাই ব্যর্থ। উলটে এমন এমন কাজ করেছে যা মানুষের যন্ত্রণা বাড়িয়েছে। ফলে কাজের সাফল্যে ভর করে নির্বাচনে জয়ের আশা ক্ষীণ।
একমাত্র রাস্তা সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও মেরুকরণ। হিন্দুত্ববাদীদের কাছে এখন এটাই প্রধান অস্ত্র। এবছর বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন, তারপরে লোকসভা নির্বাচন। তাই আগে থেকেই বিভাজনের জমি তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। তাতে জোরালো ধাক্কা দিতে আসরে নেমেছেন মোহন ভাগবত।
Comments :0