সম্প্রতি রাজ্য সরকার আয়োজিত ছাত্র-ছাত্রীদের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গর্ব করে বলেছিলেন আগে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় কম নম্বর পেত। তাঁর ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি নম্বর পাচ্ছে। অনেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৮, ৯৯-ও পাচ্ছে। এ পর্যন্ত শুনে অনেকেরই কৌতূহল তবে কি এ জমানায় শিক্ষাক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি ঘটে গেছে। স্কুল-কলেজে পড়াশোনার দারুণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পড়ুয়ারা সকলে দারুণ মনোযোগী ও উচ্চ মাত্রার মেধাবী হয়ে উঠেছে। ঘোর কেটে যায় পরক্ষণেই যখন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়ে দেন নম্বর বৃদ্ধির আসল রহস্যটি। মুখ্যমন্ত্রীর অপকট স্বীকারোক্তি, তিনি ক্ষমতায় আসার পরই সর্বত্র নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন বেশি করে নম্বর দিতে হবে। সিবিএসই সহ কেন্দ্রীয় বোর্ডগুলির ছেলেমেয়েরা বেশি নম্বর পায় বলে ভালো জায়গায় বা ভালো বিষয়ে পড়ার সুযোগ এরাজ্যের ছেলেমেয়েরা পায় না। তাই কেন্দ্রীয় বোর্ডের সঙ্গে পাল্লা দিতে রাজ্যের ছেলেমেয়ের নম্বর বাডিয়ে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থাৎ গুণগত মান উন্নয়ন নয়, কৃত্রিমভাবে বেশি নম্বর দিয়ে তিনি তাঁর আমলে শিক্ষার উন্নতি দেখাতে চেয়েছেন।
এই ধরনের ভাবনায় চলছে তৃণমূল সরকার। যোগ্যতা থাক বা না থাক খেয়াল খুশি মতো যে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া যায় সেটা মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই ফরমুলাই সম্ভবত অনুসরণ করেছে প্রাথমিক শিক্ষক। সচেতনভাবে খুশিমতো অযোগ্যদের নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে অবৈধভাবে শিক্ষকের চাকরি দেওয়া হয়েছে। আর তার বিনিময়ে প্রার্থী পিছু যে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে সেটা এখন দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ।
মমতা জমানায় বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে যে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে তার তদন্ত করছে সিবিআই এবং ইডি। প্রতিদিনই প্রায় আদালতে পিলে চমকানো নতুন নতুন তথ্য হাজির হচ্ছে। নিয়োগ দুর্নীতির রহস্য খুঁজতে আদালতে নির্দেশ দিয়েছিল টেট উত্তীর্ণদের প্রাপ্ত নম্বর বিভাজন প্রকাশ করার। সেটা দেখে যেকোন মানুষের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। উত্তীর্ণদের অধিকাংশই পেয়েছেন মোট নম্বরের থেকে বেশি। এই বেশি নম্বর পাওয়ারা এখন কেউ পাঁচ বছর বা দু’বছর বা দু’বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়েই কি নম্বর বেড়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর ফরমুলা অনুসরণ করেই?
টাকা কামানোর জন্য এতটাই মরিয়া যে দিক-বিদিক শূন্য হয়ে যেখানে মনে হয়েছে অনিয়ম করেছে। কেউ ১৫ নম্বরের মধ্যে ২৪ পেয়েছেন, কেউ ১০-এ ১১, কেউ ৫-এ ৬ নম্বর পেয়ে যোগ্যতামানে উত্তীর্ণ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ফেল করাও দিব্যি চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। আর যোগ্যরা রাস্তায় বসে।
Comments :0