Tigress Zeenat

এখনও অধরা জিনাত, প্রবল আতঙ্কে রানীবাঁধের গোঁসাইডিহি গ্রাম

রাজ্য জেলা

মধুসূদন চ্যাটার্জি-রানীবাঁধ  
বাঘিনী জিনাত শনিবার ভোর চারটে নাগাদ পুরুলিয়ার মানবাজার ২ ব্লকের বোরো এলাকা থেকে বেরিয়ে বাঁকুড়ার রানীবাঁধ ব্লকের নারকোলির কাছে গোঁসাইডিহি গ্রামের ঝোপে আশ্রয় নিয়েছে। পুরুলিয়ার বোরো থেকে এখানে আসতে ফুলবেরিয়া ধানাঢ়া হয়ে ছোট একটি নদী পেরিয়ে জিনাতকে আসতে হয়েছে। দেশের অন্যতম আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র খাতড়া— রানীবাঁধ ব্লকের মাঝে অবস্থিত মুকুটমনিপুরে জিনাতের প্রবেশে বাধা পড়ে বিশাল জলাধারের জন্য। তাই ভোরেই মুকুটমনীপুরের পশ্চিমপ্রান্তে নারকোলি গ্রামের ডিয়ারপার্কের দিকে অগ্রসর হয় এই বাঘিনী। সেই সংকেত বনদপ্তরের কাছে পৌঁছানো মাত্রই যাতে ডিয়ারপার্কে কোন মতেই জিনাত ঢুকতে পারে তার জন্য মাঝপথেই তার গতি আটকানো হয়। সকালেই জিনাত আশ্রয় নিল ১৬টি আদিবাসী পরিবারের বসতভূমি গোঁসাইডিহি গ্রামে। তার পর থেকেই একদিকে কৌতুহল অন্যদিকে চরম আতঙ্ক শুরু হয়েছে পুরো গ্রাম ও সংলগ্ন মুকুটমনিপুরে। এই সময় পর্যটকে ভরপুর মুকুটমনিপুর। আর মুকুটমনিপুরে এলে একবার ডিয়ারপার্ক ঘুরতে আসবেননা, এরকম পর্যটক থাকেননা। মুকুটমনিপুরের নীল জলে নৌকা, মটরচালিত যান নিয়ে পর্যটকরা বেরিয়ে পড়েন পশ্চিমপ্রান্তের ডিয়ারপার্কে। কিন্তু সেই এলাকাতেই বাঘিনী এখন অবস্থান করছে। তাই শনিবার কার্যত পর্যটক শূন্যই রইল ডিয়ারপার্ক। আর বাঘিনী দেখার অসীম কৌতুহল নিয়ে দিন কাটালেন মুকুটমনিপুরে আসা পর্যটকরা। মুকুটমনিপুরে যখন এই অবস্থা তখন নারকোলি, গোপালপুরের মাঝে গোঁসাইডিহির অবস্থা কার্যত ভয়াবহ। 
এদিন ভোরেই বনদপ্তরের লোকজন গ্রামে চলে আসেন, বলেন এখানে ঝোপে বাঘিনী ঢুকেছে, কেউ ঘর থেকে বের হবেনা, ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও বনদপ্তরের লোকজন আমাদের ঘর থেকে বের করে দুরে নিয়ে এসেছে। বিকাল পর্যন্ত কোন খাবার, জল পায়নি। জানান, গোঁসাইডিহি গ্রামের বাসিন্দা ফুলটুসি হাঁসদা, স্বপন বাস্কেরা। এদিন গ্রামের স্কুলও বন্ধ করে দেওয়া হয় বাঘিনীর ভয়ে। বনদপ্তরের উপস্থিত আধিকারিকরা জানান, এই গোঁসাইডিহি গ্রামের মাঝে ২০০ মিটারের ব্যাসার্ধের একটি ঝোপে ৩ বছরের বাঘিনী জিনাত অবস্থান করছে। পুরো গ্রাম এখন সাজ সাজ রব। বনদপ্তর ও পুলিশের লোকজন গ্রামের সেই ঝোপ বরাবর জাল বিছিয়ে রেখেছে। বাঘিনীকে খাঁচায় বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরী রয়েছে গাড়িও।
ঘটনা হল যেখানে জিনাত রয়েছে সেই গোঁসাইডিহি- গোপালপুর ঝোপের কিছুটা দুরেই কুমারি নদী। কুমারি নদী পের হলেই সহজেই রানীবাঁধের বিস্তৃর্ণ ঘন জঙ্গল বারো মাইল জঙ্গলে পৌঁছে যাওয়া যায়। যা সুতান, ঝিলিমিলি জঙ্গলের সঙ্গে এক হয়ে আছে। ঠিক সেই কারণেই রেডিও কলার ট্র্যাকিং অ্যান্টেনার সাহায্য নিয়ে বাঘিনীর অবস্থান চিহ্নিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বনদপ্তরের আধিকারিক, কর্মীরা। উড়িশার সিমলিপাল এলাকা থেকে বের হয়ে ঝাড়ঘন্ড, বাংলার ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার বিস্তৃর্ণ এলাকা ঘুরে বেরাল তিনবছরের বাঘিনী জিনাত। শনিবার ভোর থেকে বাঁকুড়ার মুকুটমনিপুর সংলগ্ন এলাকায় এসে সাময়িক ডেরা বাঁধল। বনদপ্তর প্রতিটি মুহূর্তে সব ধরনের চেষ্টা করেও একে খাঁচায় বন্দি করতে পারছেনা। অনেকেই আশ্চর্য্য হয়ে যাচ্ছেন জঙ্গলের মাঝে বাঘিনী খাবার পাচ্ছে কোথায়? বাঘিনীটিকে টিকে থাকতে গেলে যে খাবার দরকার তা ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার জঙ্গলে তো ছিলনা। শনিবার যেখানে রয়েছে সেখানেও তো খাবার নেই। 
এদিন বনদপ্তরের মুখ্যবনপাল কুনাল ডাইভাল, বিদ্যুৎ সরকাররা রানীবাঁধের গোপালপুর জঙ্গল এলাকা থেকে জানান, বাঘিনী এখানে রয়েছে তার প্রমান পাওয়া গেছে। দ্রুততার সঙ্গে তাকে খাঁচায় বন্দি করার চেষ্টা চলছে। বনদপ্তর থেকে স্থানীয় মানুষজনের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঘিনীর কোন আওয়াজও পাওয়া যায়নি। পুরো এলাকা থমথম করছে। আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন মানুষজন।

Comments :0

Login to leave a comment