রামশংকর চক্রবর্তী-তমলুক
সপ্তাহ দুয়েক আগে অর্থাৎ গত ২ ফ্রেব্রুয়ারি রাসায়নিক বর্জ্য সাফাইয়ের কাজে নেমে পরপর তলিয়ে যান কলকাতা পৌরসভার তিন অস্থায়ী সাফাই কর্মী। চার ঘণ্টা পর নালা থেকে উঠে আসে তিন সাফাইকর্মীর নিথর দেহ। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে বানতলায় কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সে। সেই দুর্ঘটনায় সামান্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে যাবতীয় দায় ঝেড়ে ফেললেন রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই ঘটনার পর ফের সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে নন্দীগ্রামে মৃত্যু হল দুজনের। আশঙ্কাজনক অবস্থা আরও একজনের। মৃতদের নাম মৃত্যুঞ্জয় জানা(৬০), মানস গিরি(৫২)। মৃত্যুঞ্জয় জানা সেফটি ট্যাংক পরিষ্কারের মিস্ত্রি ছিলেন। তাঁর বাড়ি মনুচক্। মানস গিরি বাড়ির মালিকের আত্মীয়।
রবিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের ভেকুটিয়া গ্রামে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। কোনওরকম সুরক্ষা না নিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে এমন ঘটনা বলে জানায় প্রশাসন।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে ভেকুটিয়ার বাসিন্দা কানাই জানার বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার জন্য দুই শ্রমিক ট্যাঙ্কের ভেতরে নামেন। ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে দুই শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ির মালিক কানাই জানা ও তাঁর বৌমা মৌমিতা জানাও সাফাই এর কাজে হাত লাগিয়েছিল। চারজনই সঙ্গাহীন হয়ে পড়েন।
প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে নন্দীগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা মানস গিরি এবং মৃত্যুঞ্জয় জানা নামে দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মৃত্যুঞ্জয় জানা, মানস গিরি, কানাই জানা ও মৌমিতা জানা এই চারজন সকালে বাড়ির সেফটির ট্যাংক পরিষ্কার করছিলেন। মৃত্যুঞ্জয় জানা ও মানস গিরি নিচে ছিলেন। একটু উপরে ছিলেন কানাই জানা ও মৌমিতা জানা। হঠাৎই চিৎকার শুনে সেফটিক ট্যাংকে গিয়ে যখন দেখা যায় মৃত্যুঞ্জয় জানা ও মানস গিরি ট্যাঙ্কের জলে সম্পূর্ণ ডুবেছিল। কানাই জানার খানিকটা মাথা দেখা গিয়েছিল এবং মৌমিতা জানার মুখ দেখা গিয়েছিল। ট্যাঙ্কের ঢাকনা ছোট হওয়ার জন্য একজন একজন করে উদ্ধার করতে হয়। ফলে নিচের দুজনকে উদ্ধার করতে খানিকটা সময় লাগে।’’
কানাই জানা ও তার বৌমা মৌমিতা জানার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভর্তি আছেন আইসিইউতে। ঘটনাস্থলে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ পৌঁছায়। প্রশাসনের কথায় ‘‘কোনওরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা না নিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার ফলেই এমন ঘটনা। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া চলছে।’’
সপ্তাহ দুয়েক আগে কলকাতায় এমন একটি ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তিন জনের। তার পরেও হুস ফেরেনি। নন্দীগ্রামের এই ঘটনায় জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
Comments :0