Natunpata GOLPO TEKOBURO

নতুনপাতা গল্প টেকোবুড়ো

ছোটদের বিভাগ

Natunpata GOLPO  TEKOBURO 4 JUNE

টেকোবুড়ো

সুচিত চক্রবর্তী

পাড়ার টেকোবুড়োকে সবাই চেনে। প্রয় বিশ বছর ধরে টেকোবুড়ো বর্ধমানের একটি গ্রামে থাকেন। এলাকায় খুব নাম ডাক আছে তাঁর। নাম ডাক হবেই না কেন ? টেকোবুড়োর চলাফেরা, আদবকায়দা ও আচার-ব্যবহারের মধ্যে  
কমেডীভাব লুকিয়ে আছে। পাড়ার ছেলেরা টেকোবুড়োকে নিয়ে বেশ মজা করে।টেকোবুড়ো রেগে যান।টেকোবুড়ো রেগে গেলে লাফাতে লাফাতে যা নয় তাই বলেন।


টেকোবুরো বেশ কিপটে প্রকৃতির রাজপ্রাসাদের মত তাঁর বাড়ি।বাড়ির সামনে বড় বাগান। বাগানে ফুল, ফল ও সবজির চাষ হয়। খুব প্রয়োজন না হলে টেকোবুড়ো বাগানের জিনিস খান না। কাওকে ভালোবেসে বাগানের কোনো জিনিস  
দেন না।


সেদিন কয়েকটি বাচ্চা ছেলে গাছে উঠে পেয়ারা পাড়ছিল। বাচ্চাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে টেকোবুড়ো দরজা খুলে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। টেকোবুড়োকে বেরিয়ে আসতে দেখে সমু চিৎকার করে বলল, টেকোবুড়ো আসছে,  
টেকোবুড়ো আসছে সবাই ছুটে পালা। সবাই ছুটে পালায়। সমু হোচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়, পালাতে পারে না।টেকোবুড়ো সমুকে ধরে ফেলেন।


সমু কেঁদে কেঁদে বলল, আমার মা, বাবা নেই। সেই কবে মারা গেছে। এখন এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে বেড়াই। যেখানে যা পাই, তাই খাই। বন্ধুরা বলেছিল, ওদের সাথে গেলে পেয়ারা দেবে তাইত এসেছিলাম দাদু।


টেকোবুড়ো সমুর দুই গালে হাত দিয়ে আদর করে বললেন, আবার বল দাদু ? দাদু।


টেকোবুড়ো সমুর দু চোখের জল মুছে দিয়ে সমুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তোর ও কেউ নেই, আমার ও কেউ নেই। আজ থেকে তুই আমার কাছেই থাকবি। কীরে রাজিতো ?


সমু মাথা নেড়ে হাল্কা হাসি হেসে বলল, আমি রাজি।

সমুকে পাবার পর থেকে টেকোবুড়োর মধ্যে পরিবর্তন আসে।

এলাকার শিশু ও কিশোররা এখন টেকোবুড়োর বন্ধু। ওরা টেকোবুড়ো বলতে অস্থির। তারা এখন আর টেকোবুড়ো বলে ডাকে না। সবাই দাদু বলে ডাকে।


সমুকে পাবার পর টেকোবুড়োর মধ্যে একটা মহৎ গুণ দেখা যায়। কে লেখাপড়া করতে পারছে
না, কে টাকাপয়সার জন্যে চিকিৎসা করতে পারছে না,কে খেতে পারছে না টেকোবুড়োর কানে 
গেলেই টেকোবুড়ো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে  
দেন।

টেকোবুড়ো তার বাড়িতে এখন একটা কোচিং খুলেছেন। বিনে পয়সায় সবাইকে পড়ান। আসলে টেকোবুড়ো সবার সাথে যখন মেলামেশা শুরু করেছেন তখন সবার অভাব অভিযোগ খুব কাছের থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন।

আজকের শিশুরা শৈশব থেকে বঞ্চিত। প্রতি পদে পদে মা ও বাবারা তাদের সন্তানকে ঘরে বন্দি করে লেখাপড়ার জন্যে চাপ দিচ্ছেন। প্রায় প্রত্যেক মা, বাবারাই চান তাদের ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় ফাস্ট হোক। এইভাবে শিশু ও  
কিশোরদের মনে একটা জেদ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে শিশুরা মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে। তাইত টেকোবুড়ো শিশু ও কিশোরদের সাথে মেলামেশা করে ওদের সেই অভাবটা পূরন করতে চাইছেন।

 

 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment