মধুসূদন চ্যাটার্জি
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ১৬ বছর বয়ি এক আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ছাতনা থানা এলাকার। ধর্ষণের পর সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর এই ছাত্রীকে তার কোমরে থাকা ঘুনসি গলায় বেঁধে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে পরিবারের লোকজনেরও স্পষ্ট বক্তব্য। যদিও এটা সাধারণ খুন বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায় পুলিশ। ঘটনা যাতে প্রকাশ্যে না আসে তার চেষ্টা করে প্রশাসন। গ্রামের মানুষ সরব হলে সোমবার রাতে গ্রামে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন সিপিআই(এম) নেতা ও আদিবাসী অধিকার মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি পরেশ হাঁসদা ও পার্টিনেতা দেবেন গাঙ্গুলি।
এদিন রাতে ওই ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল সকলেই শোকাচ্ছন্ন, ঘটনায় গোটা গ্রামে থমথমে পরিবেশ। ছাত্রীর মা জানান, তাঁর তিন মেয়ে, এক ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। গতবছর আগস্ট মাসে তাঁর স্বামী মারা যান। জনমজুরি করে সংসার চলে। ছেলেটি গুরুতর অসুস্থ। তাঁর ছোট মেয়ে গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও পাশ করতে পারেনি। এবারও সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিত। মা জানান, প্রতিদিনই তাঁর মেয়ে সকাল ১১টা নাগাদ বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে বাড়ির গোরু নিয়ে স্থানীয় জোড় (জলের স্রোত) সংলগ্ন মাঠে চরাতে যেত। গত শনিবার সকালেই রান্না করে নিজে খেয়ে মাঠে গোরু চরাতে গিয়েছিল। তিনি ঝাটিপাহাড়িতে ধান ঝাড়তে গিয়েছিলেন। বিকাল ৩টার সময় তিনি ফেরেন। সাধারণভাবে বিকাল ৪টার মধ্যে তাঁর মেয়ে বাড়ি ফেরে। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মেয়ের কাছে থাকা ফোনে তিনি বারবার ফোন করেও কোনও উত্তর না পেয়ে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি মেয়েকে খুঁজতে বের হন।
মা জানান, মাঠে গিয়ে গোরুগুলিকে দেখতে পেলেও মেয়েকে দেখতে পাননি। মাঠের মাঝেই বইখাতা পড়েছিল। কারণ পরীক্ষার জন্য সে বই, খাতা নিয়ে যেত গোরু চরানোর সময়। গোরুগুলিকে ছেড়ে দিয়ে সে পড়াশোনা করতো। তাঁর মা জানান, মেয়ের নাম ধরে বহুবার ডাকাডাকি করি। পরে তিনি লক্ষ্য করেন গোরুগুলি জোড়ের নিচের দিকে তাকাচ্ছে। তিনি সেইমতো নিচে তাকিয়ে দেখেন তাঁর মেয়ে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। মেয়েটির ওপরের পোশাক অর্ধেক খোলা, নামানো ছিল নিচের দিকের পোশাকও। শরীর হাত দিয়ে দেখেন মুখে রক্ত। আর গলায় জড়িয়ে আছে মেয়ের কোমরে পড়া ঘুনসিটি। শরীরে কোনও প্রাণ নেই। বইখাতার জায়গায় পড়ে আছে মোবাইলটি। তিনি মেয়ের মোবাইল থেকেই পড়শিদের ফোন করে ঘটনাটি জানান। গ্রামের মানুষজন ছুটে আসেন।
এলাকার লোকজন জানান, যেখানে বইখাতা ছিল, সেখান থেকে নিচে বরাবর একটা দাগ রয়েছে। এটা মেয়েটিকে টেনে সেখানে নিয়ে যাওয়ার দাগ বলে মনে করছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য, মেয়েটিকে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটে সেখানে কোনও মানুষের বসতি নেই।
এলাকার বাসিন্দা মনোহর বাস্কে, শান্তি টুডু জানান, আমরা এর প্রকৃত বিচার চাই। পরিবারের লোকজন জানান, পুলিশের কাছে ধর্ষণ করে খুনের কথা তাঁরা জানিয়েছেন। স্থানীয় এক যুবক চাপু কিস্কুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। চাপু কিস্কুর সঙ্গে ওই ছাত্রীর কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা তা গ্রামের মানুষ বলতে পারছেন না। ছাত্রীর মা জানায়, তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য তিন মাস হাসপাতাল যাতায়াত করতেন। বাড়িতে ওই মেয়ে একাই থাকত। তবে কোনোদিন ধৃত যুবকের সঙ্গে মেয়েকে মিশতে দেখিনি। মানুষজনের বক্তব্য, এই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন যুক্ত থাকতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে দু’দিন গ্রামে টহল দেওয়া হচ্ছে। মানুষের দাবি, এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত তা তদন্ত করে জানাক পুলিশ।
Comments :0