বিশ্বনাথ সিংহ: রায়গঞ্জ
চোপড়ার সালিশি সভাকাণ্ডে গ্রেপ্তার আরও ১। ধৃতের নাম আমিরুল ইসলাম ওরফে বুধুয়া। পুলিশ সূত্রে খবর, ভিডিয়ো দেখে পুলিশ আমিরুল ইসলামকে চিহ্নিত করেছে এবং গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার তাকে ইসলামপুর আদালতে তোলা হয়েছে।
জানা গেছে, ধৃত আমিরুলের বাড়ি লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাককাটি এলাকায়। এদিন সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বুধুয়া বলে, 'আমি শুধু দর্শক ছিলাম'।
চোপড়ার সালিশি সভার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে। তবে ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
চোপড়া কাণ্ডে ‘জেসিবি গ্যাং’-এর আরও এক সাগরেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতের নাম নাম আমিরুল। লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা সে। চোপড়া থানার আইসি অমরেশ সিংহ বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতকে বুধবার ইসলামপুরে আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।’’
চোপড়ার লক্ষ্মীপুর এলাকায় খাপ সালিশি সভায় এক যুগলকে নির্মমভাবে নিপীড়নের ভিডিও ভাইরাল ঘিরে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তাজিমুলকে (জেসিবি) জনমতের চাপে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই তাজিমুল হকের বিরুদ্ধে এক বছর আগে সিপিআই(এম) কর্মী মনসুর আলমকে হত্যার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।
এলাকায় বিরোধীদের অভিযোগ প্রায় ৭ বছর ধরে চোপড়ার লক্ষীপুর এলাকায় জেসিবি রাজ চলছে। চা বাগানের দখলদারি থেকে লক্ষীপুরের কাঁচা লঙ্কার বাজারের নিয়ন্ত্রণে জেসিবি। জমি কেনা-বেচা থেকে শুরু করে বিরোধীদের ভোটে না দাঁড়ানো সব কিছুতেই ধৃত এলাকার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান ঘনিষ্ঠ জেসিবি জড়িত বলে অভিযোগ।
ঘিরনিগাও লক্ষীপুর চুটিয়া খোর গ্রামের বহু মানুষ অভিযোগ করে বলেন, ভিডিয়ো ভাইরাল না হলে শোরগোল হত না। চাপে পরে পুলিশ বুধুয়া জেসিবিদের গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে বুধবার কলকাতায় বিধানসভায় বিধায়ক হামিদুল রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এখন জেসিবি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছেন। জেসিবি’র সমর্থনে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানকে ঘিরেও ক্ষোভ রয়েছে। বুধবার বিধানসভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে যান বিধায়ক। সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, জেসিবির মাথার উপরে তাঁর হাত কোনও দিন ছিল না, তাই হাত তুলে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। পরে তড়িঘড়ি ট্যাক্সিতে উঠে বিধানসভা চত্বর ছাড়েন হামিদুল রহমান।
কিন্তু ১ জুলাই জেসিবি’র সমর্থনে বিধায়ক বলেছিলেন যে নির্যাতিতা যুবতীই অসামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন। তাঁকে শাসন করতে গিয়ে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে জেসিবি।
জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের অনেক আগে থেকেই জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপারকে কয়েক দফায় স্মারকলিপি গণ-ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছিল। ইসলামপুর ব্লকের সুজালী গোবিন্দপুর গোটা চোপড়া ব্লক বারুদের স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। শান্তিপ্রিয় জেলাকে অশান্তির হাত থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনকে আন্তরিক হতে হবে। সমস্ত বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার হয়েছে। আবারও জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার করা হবে।’’
চোপড়া কাণ্ডের ঘটনার সাথে যুক্ত দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবীতে ইসলামপুর জেলা পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সিপিআই(এম) ইসলামপুর-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক আব্দুল করিম বলেছেন, সোমবার এবং মঙ্গলবার, দু’দিন ইসলামপুর শহর গ্রাম জুড়ে ঘটনার নিন্দা করে মিছিল পথসভা সংগঠিত হয়েছে। প্রশাসন যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেই তবে অসভ্যতা বর্বরতার শেষ দেখে ছাড়বে লালঝাণ্ডা।
Comments :0