Manipur

মণিপুরে আরেক নৃশংসতা

জাতীয়

Manipur


বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি


প্রথমে গুলি করে খুন করেও আক্রোশ মেটেনি। সমাধি খুঁড়ে দেহ তুলে কুচি কুচি করে কেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে গিয়েছে ঘাতক বাহিনী। এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে মণিপুরেই। সোমবার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। 
জানা গিয়েছে, ৩ মে  রাজ্যে জাতি সংঘর্ষ শুরু হওয়ার ২৭ দিনের মাথায় ২৯ মে চুরাচান্দপুর জেলার লুনথাঙ খঙসাই ও জাঙনেমের ৩৮ বছরের সন্তান পাওখোহাও খঙসাইকে দিনদুপুরে খুন করে ঘাতক বাহিনী। সেদিন রাজ্যে সেনাবাহিনীকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ থাকায় কেউ বাড়ি থেকে বেরনোর সাহস করেননি। ফলে পাওখোহাওর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গ্রামবাসীরা অংশ নিতে পারেননি। দেহ কফিনে ঢুকিয়ে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে শেষকৃত্য করা সম্ভব হয়নি। খুন হওয়ার দিনই  মা-বাবা, স্ত্রী ও তাঁর তিন মেয়ে মিলে পাওখোহাওর দেহ সাইচাঙ পাহাড়ে দাফন করেন। তারপর গ্রাম ছেড়ে শিবিরে আশ্রয় নেয় পাওখোহাওর গোটা পরিবার। ছেলের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান বৃদ্ধা মা জাঙনেমের দেবী ছেলের সমাধিস্থলে যেতে বার কয়েক চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রাণহানির আশঙ্কার জন্য তাঁকে জোর করে আটকানো হয়। গত ২১ জুলাই সব বাধা উপেক্ষা করে ছেলের সমাধিস্থলে ছুটে যান মা। গিয়ে তিনি দেখেন, ছেলের দেহ টুকরো টুকরো করে সমাধির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা রয়েছে। তিন-চার ফুট গভীর গর্ত করে নিজের হাতে ছেলের দেহ সমাধিস্থ করে গিয়েছিলেন তিনি। সমাধি খুঁড়ে দেহ তুলে কেটে ছিন্নভিন্ন করে গিয়েছে ঘাতকরা। এমন নিষ্ঠুরতা দেখে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধা। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

এদিকে, রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মণিপুর ফের উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। টেঙনৌপাল জেলা থেকে রাজ্য পুলিশকে না সরানো হলে পাহাড়ি জেলাগুলি স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ‘ইন্ডিজেনিয়াস ট্রাইবাল লিডার ফোরাম’। সোমবার চরমপত্র দিয়ে ফোরাম জানিয়েছে, ‘এদিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে টেঙনৌপাল জেলা থেকে রাজ্য পুলিশকে সরাতে হবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অমিত শাহ রাজ্য সফরে এসে বলে গিয়েছিলেন পাহাড়ি জেলায় রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হবে না। শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তারপরও রাজ্য পুলিশ পাঠিয়ে পাহাড়কে উত্তপ্ত করছে বীরেন সিং সরকার।’ রাজ্য পুলিশকে ঢুকতে বাধা দিতে টেঙনৌপাল জেলার জেলা সদর মোরে শহরে অবরোধ গড়ে তুলেছেন প্রায় হাজার খানেক মহিলা। চারদিন ধরে টানা অবরোধ চলছে। সোমবার গোর্খা রেজিমেন্টের এক কোম্পানি জওয়ান মোরে শহরে পাঠানো হলে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান মহিলারা।

অশান্ত মণিপুরে আচমকা বায়োমেট্রিকের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠায় এনিয়ে সোমবার সাফাই দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পিটার সালাম। তিনি বলেন, রাজ্যে অবৈধ বিদেশি শণাক্তকরণের কাজ অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। রাজ্য পুলিশের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো একাজ করছে। ইতিমধ্যে আড়াই হাজার বিদেশি শনাক্ত হয়েছে। বেশিরভাগ বিদেশি চান্দেল ও টেঙনৌপাল জেলায় রয়েছেন। গত মে মাস থেকে রাজ্যে হিংসা শুরু হওয়ায় বিদেশি শনাক্তকরণের কাজ থমকে দাঁড়ায়। সালাম বলেন, রাজ্যের দু’টি ডিটেনশন ক্যাম্পে ১০৪ জন বিদেশিকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। শণাক্ত হওয়া বিদেশিদের বায়োমেট্রিক নেওয়া হচ্ছে। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিবের এমন মন্তব্য নিয়ে রাজ্যের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু কুকিদের মধ্যে নতুন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ১৯৯৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন আসামের ভোটার তালিকায় প্রায় চার লক্ষ ভোটারকে সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিক তকমা সেঁটে তাঁদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। এই ভোটাররা মূলত আসামের ভাষিক সংখ্যালঘু বাঙালি। এবার মণিপুরের সংখ্যালঘু কুকিদেরও কি একই অবস্থা হতে চলেছে?

Comments :0

Login to leave a comment