SUKANYA ARREST

অনুব্রত কন্যা গ্রেপ্তার দিল্লিতে

জাতীয় রাজ্য

SUKANYA ARREST

দীর্ঘ জেরার পর দিল্লিতে ইডি গ্রেপ্তার করল সুকন্যা মণ্ডলকে। এর আগে বারকয়েক ইডি’র সমন এড়িয়েছিলেন সুকন্যা। বুধবার দিল্লিতে ইডি’র দপ্তরে দীর্ঘ জেরা চলছিল। 

গোরু পাচার দুর্নীতিতে জেলে রয়েছেন সুকন্যার বাবা তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁকেও দিল্লিতে তিহার জেলে রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমে গোরু পাচারে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতির খোঁজ মিলেছে। সুকন্যার নামেও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে বিপুল টাকা। এই টাকার উৎস কী, কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা নেই বলে আগেই জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। 

২০২২’র আগস্টে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই।  ইডি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভেনিউ আদালতে হাজির করা হবে সুকন্যাকে। তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধী পিএমএলএ আইনে মামলা রুজু হবে বলে জানা গিয়েছে। 

ইডি সূত্রে খবর, অনুব্রত কন্যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ মূলত ২টি। সুকন্যা মন্ডল পেশায় প্রাথমিক শিক্ষিকা। ইডি’র আধিকারিকরা তদন্ত করতে গিয়ে জেনেছেন, সুকন্যা  মন্ডলের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ১ কোটি  ৪৪ লক্ষ টাকা। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, একজন প্রাথমিক শিক্ষিকা কীভাবে এত টাকা আয় করলেন?

এর পাশাপাশি এএনএম অ্যাগ্রোকেম ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড এবং নীড় ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে দুটি কোম্পানির ডিরেক্টর পদে রয়েছেন সুকন্যা মন্ডল। ইডি’র তদন্তকারীদের অনুমান, গরু পাচারের টাকা ঘুর পথে এই দুই সংস্থায় লগ্নি করা হয়েছে। 

এর পাশাপাশি জমি, চালকল সহ ২৬টি সম্পত্তি  রয়েছে সুকন্যা মন্ডলের নামে। এছাড়া  কয়েক কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোসিটও  রয়েছে তাঁর নামে। এই বিপুল পরিমাণ টাকা এবং সম্পত্তি কোথা থেকে এল, সুকন্যাকে সেই বিষয়েও বিস্তারিত জেরা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

ইডি’র একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে সুকন্যা মন্ডলে জমা দেওয়া আয়করের হিসেব অনুযায়ী, তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৩ লক্ষ টাকা। ৭ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ বার্ষিক আয় বৃদ্ধির হার ৪৮০০ শতাংশ! 

মূলত এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতেই সুকন্যা মন্ডলে এর আগে ৩ বার দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। প্রতিবারই সমন এড়ান সুকন্যা। ইডি’র সূত্র জানাচ্ছে, সুকন্যাকে তাঁর বাবার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সুকন্যার অসহযোগিতায় সবটাই ভেস্তে যায়। 

বুধবারও জেরায় অসহযোগিতা করেন সুকন্যা। ইডি’র গোয়েন্দাদের করা প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই তাঁর জবাব ছিল, ‘‘ আমি কিছু জানি না। সবটা বাবা এবং মনীশ কোঠারি বলতে পারবেন।’’  একইসঙ্গে তদন্তকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টাও আগাগোড়া করে গিয়েছেন সুকন্যা। 

এই অসহযোগিতাকে হাতিয়ার করেই বুধবার দীর্ঘ জেরার পরে সুকন্যাকে গ্রেপ্তার করে ইডি। 

প্রসঙ্গত, অনুব্রত মন্ডলের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মনীশ কোঠারিকেও ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। তিনি বর্তমানে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।

অনুব্রত এবং মনীশ ছাড়াও গরু পাচার কান্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন অনুব্রত দেহরক্ষী তথা রাজ্য পুলিশের কর্মচারী সায়গল হোসেন এবং গরু পাচারের অন্যতম মূল পান্ডা এনামুল হক। 

অপরদিকে চলতি বছরের মার্চ মাসে বর্ধমানের শক্তিগড়ে খুন হন কয়লা মাফিয়া তথা বিজেপি নেতা রাজু ঝাঁ। সেই হত্যাকান্ডে নাম জড়ায় আব্দুল লতিফের। এই লতিফও গরু পাচার কান্ডের অন্যতম মাথা। রাজু ঝাঁ হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে রাজ্য। কিন্তু তারপরেও তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি। রাজু খুনের ১৮ দিন পরে শক্তিগড় থেকেই এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এখনও মূল ষড়যন্ত্রকারীদের নাগাল পাননি রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা।

ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, রাজু ঝাঁ গরু পাচার মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি হয়ত মুখ খোলার কথা ভাবছিলেন। তাই তাঁকে খুন হতে হয়েছে। 

Comments :0

Login to leave a comment