বইকথা
নতুনপাতা
"বর্ণপরিচয়" বাঙালির পরিচয়
সিরাজ সেনগুপ্ত
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এত দিনকার বর্ণমালর সংস্কার করতে চেয়েছিলেন, এত দিনকার বাল্যশিক্ষায় যে টোলপ্রথা চলে আসছিল তিনি তা অচল করতে চেয়েছিলেন, বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগে তিনি স্বর-ব্যঞ্জন বর্ণ হিসেবে বর্নমালাকে সাজাতে গিয়ে আগে প্রচলিত বহু বর্ণকে স্বরবর্ণ থেকে ব্যঞ্জন বর্ণে এনে স্থান দিয়েছেন। আবার অনেক বর্ণকে সংস্কৃত থেকে এনে বাংলায় স্বতন্ত্র হরফের মর্যাদা দেন। মদনমোহন তর্কালঙ্কার মহাশয়ের বাংলা বর্ণমালায় সংখ্যা ছিল ৪৮, কিন্তু বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়ে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ তে। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়অর্ধে তর্কালঙ্কার মহাশয়ের শিশু শিক্ষার সাথে, বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়ের এক অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়, ১৮৯০ সালে যে খানে শিশু শিক্ষার ১৪৯টি সংস্করণ প্রয়োজন হয়, সেখানে বর্ণপরিচয়ের দরকার পরে ১৫২ টি সংস্করণ। বিদ্যাসাগর স্কুল মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের বলেছিলেন কোনো ছাত্রের সাথে অস্মানজনক ব্যবহার না করা হয়, এ কারণেই আমরা হয়তো বর্ণপরিচয়ের মধ্যে উপদেশ, নীতিকথা, উচিত অনুচিতের প্রভেদটা খুব পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারি।
শিশু শিক্ষাকে চিরতরে পিছনে ফেলে দেয় বর্ণপরিচয়। বর্ণপরিচয়ের প্রয়োজনীয়তা, সর্বজনীনতা ও ব্যপকতার চূড়ান্ত বৈশিষ্ট্য হল এই যে বর্ণপরিচয় সস্তা নিউজ প্রিন্টে ছাপা হয়ে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে, হাটে, মুদির দোকানে, ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে সমানে বিক্রি হয়েছিল শিশুশিক্ষার মূখ্য বই হিসেবে। সেই শুরু ১৬৫ বছর পরেও সেই ট্রাডিশন সামনে চলছে।
বর্ণপরিচয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত একটি বাংলা বর্ণশিক্ষার প্রাইমারি বা প্রাথমিক পুস্তিকা। দুই ভাগে প্রকাশিত এই পুস্তিকাটির দুটি ভাগই প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। দুই পয়সা মূল্যের এই ক্ষীণকায় পুস্তিকার প্রকাশ।
Comments :0