অনিল কুণ্ডু : ক্যানিং
সুরেশ মুরাইয়া। চপ্পল নম্বর ২৪। মধ্য প্রদেশের নরসিংহপুরের বাসিন্দা। মানসিক ভারসাম্যহীন এই যুবককে রবিবার ক্যানিংয়ে তাঁর মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রায় ২১ বছর পর নিখোঁজ ছেলেকে কাছে পেয়ে দুই চোখের আনন্দাশ্রু ফেললেন মা কান্তিবাই মুরাইয়া। মায়ের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন সুরেশ মুরাইয়া। বিরল এই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন ক্যানিংয়ের বাসিন্দারা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিংয়ের দাঁড়িয়া অঞ্চলে প্রায় মাস ছয়েক ধরে ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে এই যুবক। তাঁর পায়ে ছিল চপ্পল। চপ্পলের উপর লেখা সাদা কালিতে ২৪ নম্বর জ্বলজ্বল করছে। তাঁর সঙ্গে থাকা আঁধার কার্ড থাকলেও কার্ডে কোন ঠিকানা নেই। সপ্তাহখানেক আগে ক্যানিংয়ের এই ভবঘুরে যুবকের খবর জানতে পেরে খোঁজখবর নিতে শুরু করে ওয়েস্ট বেঙ্গল হ্যাম রেডিও। তাঁরাই যোগাযোগ করে মধ্যপ্রদেশে তাঁর পরিবারের সন্ধান পায়।
মধ্যপ্রদেশের সেন্ট্রাল জেলে ২৪ নম্বর সেলে বন্দি ছিলেন সুরেশ মুরাইয়া। চপ্পল নম্বর ২৪। জেল থেকেই তাঁকে ২৪ নম্বর লেখা চপ্পল দেওয়া হয়েছিল। নিজের ভগ্নিপতির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ায় রাগের মাথায় মোটর সাইকেল থেকে তাঁকে ফেল দিয়েছিল সে। হাসপাতালে ৭দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। জেলে যেতে হয় তাঁকে। ২০ বছর পর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নিজের বাড়িতে ফিরে দেখে বাড়িতে কেউ নেই। তাঁরা সবাই অনত্র চলে গেছেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। মধ্যপ্রদেশ থেকে কিভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্যানিংয়ের প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছলো মনে করে সে আর কিছুই বলতে পারছিলেন না। ওয়েস্ট বেঙ্গল হ্যাম রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস রবিবার এবিষয়ে বলেন, মধ্যপ্রদেশের সেন্ট্রাল জেল সূত্রে জানা গেছে পূর্ণ শাস্তির পরেই সে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। গ্রামের মানুষের সঙ্গে হ্যাম রেডিওর প্রতিনিধি যোগাযোগ করলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ও তো আসামী হ্যায়। ৩০২ কেস মে সেন্ট্রাল জেল মে থা। উনকা পরিবার গাঁও সে চলা গিয়া। কাহা গিয়া মালুম নেহি। আসলে জেলের আসামীর খোঁজ করায় গ্রামবাসীরা ভয়ে মুখ খুলতে চায়নি। তারপর ওর পরিবারকে খুঁজে বের করা হয়। মা কান্তিবাই মুরাইয়া ছেলের ছবি দেখে কাঁদতে থাকে। তাঁকে ছেলের খোঁজ জানানো হয়। সুরেশকে তাঁর মায়ের ছবি দেখানো হয়। মায়ের ছবি দেখে সে কেবলই বলতে থাকে মামিকো পাশ জানা হ্যায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জগন্নাথ কুমারকে সঙ্গে নিয়ে রবিবার কান্তিবাই মুরাইয়া ক্যানিংয়ে আসেন। ক্যানিং থানার পুলিশ ওই যুবককে তাঁর মায়ের হাতে তুলে দেয়। প্রায় ২১ বছর পর মায়ের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন সুরেশ মুরাইয়া।
Comments :0