Brinda Karat

ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সমান তৎপর যোগীর মতো মমতার সরকারও

রাজ্য

হাওড়ার মুক্তিরচকের ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতারা মাথা নত করেননি। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করি না, করবো না। মুক্তিরচকের অপরাধীদের বাঁচাতে হাসপাতালে গিয়ে, থানায় গিয়ে ঘটনা চাপতে পুলিশকে চাপ দিয়েছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক নির্মল মাজি। তাঁকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। রবিবার আমতা পীতাম্বর হাইস্কুলের মাঠে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির হাওড়া জেলা কমিটির ডাকে মুক্তিরচকের ধর্ষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে গিয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কথাগুলি বলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী বৃন্দা কারাত।   
মুক্তিরচকের ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীদের সাজা হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেই সমাবেশ হলো আমতায়। এদিনের সমাবেশে বৃন্দা কারাত ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ, সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী জাহানারা খাতুন, হাওড়া জেলা সম্পাদিকা দুলু দাস, মহিলা নেত্রী অপর্ণা পুরকাইত। সমাবেশ পরিচালনা করেন কেয়া দাস। সমাবেশে রাজ্য  ও জেলা স্তরের বহু মহিলা নেত্রী উপস্থিত ছিলেন। প্রখর গরমকে উপেক্ষা করে সমাবেশে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহিলারা এই সমাবেশে শামিল হয়েছিলেন। এদিনের সমাবেশে আসা মানুষ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, রাজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, আনিস খানের খুনিদের শাস্তির দাবিতে, পঞ্চায়েত ও পৌরসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার দাবিতে সরব হন।
সমাবেশে বৃন্দা কারাত বলেন, আমরা কোনোদিন মাথা নত করব না। নির্যাতিতারা বলেছেন আমরা পিছু হটবো না। পুরুষ প্রধান সমাজে সবচাইতে চাপ গরিব মহিলাদের ওপর। আমাদের দেশের বিকাশের কথা মহিলাদের বাদ দিয়ে হতে পারে না। বৃন্দা কারাত বলেন, ২০১০ সালের মুক্তিরচকের ধর্ষণের ঘটনাকে চাপা দিতে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক কিভাবে ন্যক্কারজনক ভূমিকা নিয়েছিলেন। হাথরসে ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীরা মুক্তি পেয়েছে। কারণ উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গেও একইভাবে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার মুক্তিরচকের অপরাধীদের অপরাধ চাপা দিতে চেষ্টা করেছিল। ওরা পারেনি। নির্যাতিতারা মাথা নত না করে শেষ পর্যন্ত সাহসের সাথে লড়াই করেছে। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের মতোই ঘটনা মুক্তিরচকে ঘটেছিল। এর পিছনে তৃণমূলের ফ্যাসিস্ত রাজনীতি রয়েছে। মুক্তিরচকের অপরাধীরা কারা! দশজনের নাম নির্যাতিতা বোনেরা এফআইআর-এ উল্লেখ করেছেন। পুলিশের ক্যাম্প বাড়ির পাশে থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুতের লাইন কেটে শিশুকে ফেলে দিয়ে শাশুড়ি ও বউমাকে ধর্ষণ করে। তৃণমূলের সেই কীর্তিমানদের ধিক্কার জানান তিনি। মমতা ব্যানার্জির সরকারের কাছে আমরা দাবি করছি‌ কামদুনির মতো মুক্তিরচকের দুই অত্যাচারিত মহিলাদের পরিবারকে চাকরি দিতে হবে। আমরা এই পরিবারের পুনর্বাসনের দাবি করছি। 
তিনি বলেন, তৃণমূলের জন্যই বাংলায় আরএসএস এবং বিজেপি মানুষের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে পারছে। তাই আমরা বিকল্প চাই। বিজেপি-আরএসএস’র বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। ছাত্রনেতা আনিস খানের বাবা সালেম খানের কথা মমতা ব্যানার্জির সরকার শোনেনি‌। তাই সালেম খান আমাদের সাথে‌। অত্যাচারিতা, নির্যাতিতা পরিবারগুলির পাশে আমরা আছি। তিনি বলেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। এবার নিজের ভোট নিজে দিতে হবে। সামনের লড়াইয়ে জিততে হবে।
কনীনিকা ঘোষ এদিন বলেন, আমতার মুক্তিরচক গোটা পশ্চিমবঙ্গের কাছে তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম আলোকবর্তিকা। মানুষের হৃদয়ে, মহিলাদের হৃদয়ে আমরা আছি। তার প্রমাণ হাওড়া জেলার সমাবেশ। যাঁরা ধর্ষিতা হয়েছিলেন তাঁরা বলেছেন, মুখ ঢাকবেন না। লজ্জা পেলে পাবে দুষ্কৃতীরা। তিনি বলেন আমাদের আদর্শ বা লড়াই বদলায় না। নয় বছর লেগেছে, তিল তিল লড়াই করতে। আইনজীবীদের কুর্নিশ। আনিস খানকে শহীদ করে ওরা ভেবেছিল সবাইকে ওরা কিনতে পারে। আনিসের বাবা সালেম খান সেইদিন‌ বলেছিলেন আমি বিক্রি হবো না। ছেলের খুনের বিচার চাই। নিয়োগ দুর্নীতি, পঞ্চায়েতের চুরি, বালি, কয়লা, পাথরের চুরির হিসাব প্রতিদিন চাইছেন মানুষ। মমতা ব্যানার্জি ভাইপোর জন্য ভাবছেন, আর একজন শিশুর অ্যাম্বুলেন্সের জন্য তাকিয়ে রয়েছেন শিশুর বাবার।
জাহানারা খাতুন রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের কথা তুলে ধরে বলেন, তোমরা সমস্ত জঘন্য কাজ করতে পারো, আমরা সেই কাজের প্রতিবাদ করতে পারবো না কেন? মুক্তিরচকের আন্দোলন গোটা রাজ্যের বুকে সাহস জুগিয়েছে। ২০১১ সালের পর তৃণমূল জমানায় হাঁস, মুরগি, ছাগল চুরির পর এখন বালি, গোরু, কয়লা থেকে সিন্ডিকেটের ঘটনা সামনে আসছে। সব অপরাধীদের, চোরদের ধরতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

 

Comments :0

Login to leave a comment