CBI R G KAR

সন্দীপের গাড়ি চালক, ৫ জুনিয়র ডাক্তারকেও জেরা সিবিআই’র

রাজ্য

লাগাতার ৬ দিন জিজ্ঞাসাবাদ সন্দীপ ঘোষকে, একইসঙ্গে সিবিআইয়ের জেরার মুখে ৫ জুনিয়র চিকিৎসক সহ সন্দীপ ঘোষের গাড়িচালক। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছান সন্দীপ ঘোষ। রাত ৯টা তেও সিজিও কমপ্লেক্সে রয়েছেন সন্দীপ ঘোষ। এখনও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন সিবিআই’য়ের আধিকারিকরা। গত শুক্রবার থেকে বুধবার-টানা ৬দিন সিবিআই’য়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তল্লাশি চালানো হয় তাঁর গাড়িতে। তারপর গাড়ির চালককে সিবিআই দপ্তরে ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনও চলছে জিজ্ঞাসাবাদ এমনটাই সূত্রের খবর। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আর জি করের চিকিৎসক খুনের তদন্তভার সিবিআই’য়ের হাতে চলে যায়। টানা সাত দিনের তদন্তে শুধু জারি রয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। কবে শুবিচার পাবে শেই অপেক্ষায় নিহত চিকিৎসকের বাবা- মা।
এদিন সিবিআই দপ্তরে তলব করা হয় নিহত তরুণীর ৫ সহকর্মীকে। তার মধ্যে রয়েছেন ২ জন মহিলা। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ সিবিআই দপ্তরে আসেন তাঁরা। ৫ জনকেও টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থার আধিকারিকরা। সিবিআই একাটি সূ্ত্রে জানা গেছে এই পাঁচ জন ঘটনার দিন কোথায় ছিলেন, ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে তাঁরা কি জানেন সহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। বৃহস্পতিবার সিবিআই তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেবে সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্য সরকার রিপের্ট জমা দেবে গত ১৪ আগস্ট রাতে ঘটে যাওয়া আরজি কর হাসপাতালে হামলার ঘটনার। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ক্রমশ ক্ষোভ ছড়াচ্ছে জনমানসে। ক্ষোভ রয়েছে আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও। ক্ষোভ থেকে রেহাই পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সন্দীপ ঘোষ। আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি দাবি করেন, যে কোনও সময় হামলা হতে পারে তাঁর ওপরে। তার বাড়িতেও হামলা হতে পারে। তাঁর স্ত্রী এবং পুত্রের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তাঁর আইনজীবী। রাজ্যকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। 
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে হামলার ঘটনার তদন্ত জেরে বুধবার সন্ধ্যায় তিন পুলিশ আধিকারিককে সাসপেন্ড করে কলকাতা পুলিশ। সাসপেন্ড হওয়া আধিকারিকদের মধ্যে দু’জন অ্যাসিস্টান্ট কমিশনার এবং এক জন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার। তাঁদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের নিরাপত্তার কর্তব্যে গাফিলতির প্রমাণের কথা বলা হয়েছে। ৯ অগস্ট আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে চারিদিকে শুরু হয় প্রতিবাদের জোয়ার। দোষীদের বিচারের দাবিতে পথে নামেন সমাজের সমস্ত স্তরের বহু সাধারণ মানুষ। আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনার পরে পুলিশ বেশ কিছু অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে এবং গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারির সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৩৭। ধৃতরা বেশিরভাগই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় মেলে। 
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আর জি করের চিকিৎসক খুনের তদন্তভার সিবিআই’য়ের হাতে চলে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ওই মামলা হাতে নেয়। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে আর জি করের ভাঙচুরের ঘটনার প্রসঙ্গে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ভর্ৎসনার সুরে বলেন, ‘‘১৫ অগস্টে এত লোক ঢুকে হাসপাতাল ভাঙচুর করল, পুলিশ কী করছিল ? পুলিশ কেন পদক্ষেপ করল না ? পুলিশ কি হাসপাতাল ভাঙচুর করার অনুমতি দিচ্ছিল?’’ শুনানিতে আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন খোদ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতিও। বলেন, রাজ্য কী ভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর করতে দিল?’ তার পরই আর জি কর হাসপাতালের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এদিন সকাল ৯টা নাগাদ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আর জি কর মেডিক্যালে টিম নিয়ে পৌঁছে যান সিআইএসএফ এর ডিআইজি কে প্রতাপ সিং। হাসপাতালে বিল্ডিং’র সংখ্যা কতো, কতো পুলিশ রয়েছে, কোথায় কত আধাসেনা মোতায়েন করতে হবে এবং কিভাবে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায় সেই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং হাসপাতালের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। 
এদি নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা মায়ের সাথে দেখা করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ফেরার পথে  রাজ্যপাল বললেন, ‘আমি দিল্লি থেকে ফিরেছি। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। খুব নির্মম ঘটনা। আমি ওদের মনের ভাব বুঝতে পারছি। আমি এখান থেকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে এই বিষয়ে চিঠি লিখব।’
বুধবার আরজি কর হাসপাতালের চার আধিকারিককে বদলির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে রাজ্য। এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল যায় স্বাস্থ্য ভবন। তাঁদের একাধিক দাবির মধ্যে ছিল এই বদলি। বদলি করা হয়েছে হাসপাতালের সুপার, অতিরিক্ত সুপার, নতুন অধ্যক্ষ এবং চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে। নিহত চিকিৎসক চেস্ট মেডিসিন বিভাগেই কর্মরত ছিলেন।  এই চিকিৎসকদের দাবি ছিল আরজি করের বর্তমান অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল, সুপার বুলবুল মুখার্জি সহ চার আধিকারিককে বদলি করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment