CHOPRA KANGAROO COURT

শহীদকে হত্যায় অভিযুক্তই বসাচ্ছে বিচারসভা! তৃণমূলের প্রশ্রয়ে ধিক্কার সর্বত্র

রাজ্য

উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় এভাবেই বিনা বাধায় চলেছে নির্যাতন।

বিশ্বনাথ সিংহ: রায়গঞ্জ
সালিশী সভা ডেকে যুবক-যুবতীকে নির্লজ্জ মারধরের ঘটনা এখন গোটা দেশের সামনে বেরিয়ে পড়েছে। প্রধান অভিযুক্ত তৃণমূলের মাতব্বর তাজমুল হকের কড়া শাস্তির দাবিতে সরব বহু অংশ। এই মাতব্বরই গত বছর সিপিআই(এম) কর্মী শহীদ কমরেড মনসুর আলমের হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত। দুষ্কৃতী রাজে প্রশ্রয়ের সামাজিক বিপদ আরও স্পষ্ট করেছে চোপড়ার ঘটনা। 
চোপড়া ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দীঘলগাঁও গ্রামের ঘটনা শুক্রবারের হলেও ছড়িয়েছে রবিবার। এদিন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সোশাল মিডিয়ায় সালিশী সভায় অসভ্য নিপীড়নের ছবি পোস্ট করেন। বের হয় ভিডিও। দেখা যায়, এক যুবক এবং এক যুবতী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছেন। তাঁদের লাঠিগাছা দিয়ে বারবার মারছে এক দুষ্কৃতী। চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়ানো স্থানীয়রা দেখলেও কিছু বলতে পারছেন না। 
সেলিম পোস্টে লেখেন, ‘‘সালিশী সভার চেয়েও বেশি কিছু চলছে। পুলিশ এবং মমতা ব্যানার্জর সরকারের প্রশ্রয় দুষ্কৃতীদের। রাস্তায় ডেকে বিচার এবং সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি।’’ 
এরপর খবরও হতে থাকে। ছড়াতে থাকে ধিক্কার। শনিবারই কোচবিহারে ধিক্কার মিছিল হয়েছিল আরেক মহিলার ওপর তৃণমূলের জঘন্য নির্যাতনের প্রতিবাদে। 
সেলিমই জানিয়েছিলেন এই দুষ্কৃতী তাজমুল এলাকায় ‘জেসিবি’ নামে পরিচিত। তিনি লেখেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জির শাসনে সত্যিই বুলডোজার বিচার ব্যবস্থা।’’ ভিডিও যিনি তুলেছিলেন তিনিও যে ঘরছাড়া জানিয়েছিলেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর এই সদস্য। 
অথচ, ‘জেসিবি’ বা তাজমুল হককেই মনসুর আলম হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত করে দায়ের হয়েছিল অভিযোগ। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে চোপড়ায় সিপিআই(এম)’র মনোনয়ন জমা দেওয়ার মিছিলে সশস্ত্র হামলা হয়েছিল। ১৫ জুনের এই হামলায় আহত একুশ বছরের কমরেড মনসুর আলম ২২ জুন মারা যান হাসপাতালে। খুনীর শাস্তি তো দূর, গ্রেপ্তারও করেনি পুলিশ। অথচ গত এক বছরে বারবার মনসুরের সাহসী পরিবার এবং সিপিআই(এম) গ্রেপ্তারির দাবিতে সরব হয়েছে। সেই তাজমুলই উলটে জনতার চোখের সামনে সালিশী সভা বসিয়ে মারধর চালানোয় পুলিশের প্রশ্রয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। 
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, যুবতী বিবাহিত হলেও ওই যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। খাপ সালিশী সভায় ডেকে তাঁদের ওপর ২ লক্ষ টাকার জরিমানা বসায় তাজমুল। টাকা দিতে অস্বীকার করলে শুরু হয় মার। যুবক-যুবতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে আর্তনাদ করতে থাকলেও মার থামেনি। বিনা বাধায় চলেছে নির্মম অত্যাচার।
জানা গিয়েছে, চোপড়ার বিধায়ক হামিদুর রহমানের হাত রয়েছে দুষ্কৃতী এবং একাধিক খুনের আসামী তাজেমুলের মাথায়। 
সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকে কেউ জানে না আহত যুবক-যুবতীর খোঁজ। বর্বর ঘটনা। পুলিশ প্রশাসন এখনও যদি চুপ করে বসে থাকে তবে ভবিষ্যতে চোপড়া ব্লক নিয়ন্ত্রণ করবে লুম্পেনরা।’’ 
দুষ্কৃতীর কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন হক। এই দাবিতেই সরব এখন কেবল চোপড়া নয়, সারা রাজ্যের মানুষ।

Comments :0

Login to leave a comment