অমিত কুমার দেব: কোচবিহার
কারও ত্রিশ বছর, কারও পঁচিশ বছর আবার কারও কুড়ি বছর ধরে চলছিল দোকান। কোচবিহার শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে ফুটপাতে দোকান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। তাঁরাই শনিবার আর্তনাদ করেছেন। আর্তি চাপা দিয়ে চলল বুলডোজারের নির্মম দাপট।
কারও চা ও রুটির দোকান, কেউ বসেছিলেন পানের দোকান নিয়ে, আবার কারও ছিলো ফাস্টফুড, আবার কেউ শিশুদের রেডিমেড বস্ত্রের দোকান সাজিয়ে বসেছিলেন। ফুটপাতের এই সামান্য ব্যবসার ওপরেই সংসার প্রতিপালিত হচ্ছিল এই হকারদের।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই রাজ্যের অন্যান্য শহরের পাশাপাশি কোচবিহার শহরেও শুরু হয়েছে এই উচ্ছেদ অভিযান। হকারদের বলতে শোনা গিয়েছে, "দিদি, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাঁচবো কিভাবে? তাদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেবো কিভাবে? কী করে শোধ করব ঋণ?"
শনিবার প্রশাসনের বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই আর্তনাদ করতে দেখা গেল কোচবিহার শহরের ফুটপাতে দোকান থাকা হকারদের। তবে গতি কমল না প্রশাসনের বুলডোজারের। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো কোচবিহার শহরের স্টেশন চৌপথি থেকে শুরু করে ব্যাংচাতরা রোডের ফুটপাতে হকারদের দোকান। নিজেদের দোকানঘর খুলে নিয়ে যাওয়ার বা দোকানের জিনিসপত্র অন্যত্র সরানোর সময়টুকু পেলেন না। পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা না করেই, নির্মম ভাবে উচ্ছেদ করা হলো হকারদের।
এদিন ফুটপাত ব্যবসায়ী আজগর রহমান বলেন, ফুটপাতের এই সামান্য ব্যবসার ওপরেই সংসার চলত। এখন কিভাবে চলবে সংসার? ব্যাংকের থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, সাপ্তাহিক এই ঋণের সুদের টাকা গুনতে হয় তাকে। এখন কিভাবে এই ঋণের টাকা মেটাবেন তিনি? একথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই উচ্ছেদ হওয়া ফুটপাত ব্যবসায়ী। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, এই উচ্ছেদ হওয়া ফুটপাত ব্যবসায়ীদের জন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে তাদের।
একইভাবে ফুটপাত ব্যবসায়ী রমা দে জানান যে প্রায় ৩০ বছর যাবত ফুটপাতে চা-রুটি বিক্রি করে সংসার চলে তাদের। স্বামী-স্ত্রী মিলে এই দোকান চালাচ্ছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি স্বামী বিমল দে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি সুস্থ হলেও কোন ভারি কাজ করার কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। তাঁরও দোকান ভেঙে দিয়েছে।
একই ভাবে এদিন পুনর্বাসনের দাবি করেন উচ্ছেদ হওয়া হকাররা।
Comments :0