Editorial

লোক ঠকানো স্বপ্ন

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


স্বাধীনতার ৭৫বছরে ‘অমৃত মহোৎসব’ ঘটা করে পালন করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অতঃপর পা বাড়িয়েছে স্বাধীনতার ‘অমৃতকাল’-য়ে। আগামী ২৫বছর নাকি এই ‘অমৃতকাল’ পেরিয়ে পৌঁছাবে স্বাধীনতার শতবর্ষে। তখন নাকি ভারত পরিণত হবে উন্নত দেশে। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি প্রভৃতি দেশের সমকক্ষ হবে। এমনকি সকল দেশকে ছাড়িয়ে সর্বোন্নত দেশও হতে পারে। নি‍‌জে নিজে আপন মনে স্বপ্ন দেখায় কোনও দোষ নেই। নরেন্দ্র মোদী ভারত স্বর্গ বানানোর স্বপ্ন দেখতেই পারেন। রামরাজ্য বানানোর কথা তো বহুকাল ধরে মানুষ শুনছে। অবশ্য স্বপ্ন দেখানোর ক্ষেত্রে মাত্রাজ্ঞান থাকা উচিত। তাছাড়া নতুন স্বপ্ন দেখানোর আগে ভেবে দেখা উচিত ইতিমধ্যে দেখানো স্বপ্নগুলি কি অবস্থায় আছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখানো, নতুন নতুন প্রকল্প ঘোষণা, সময় বেঁধে প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক ডজন প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার ঘোষণা তিনি করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি লক্ষ্যও পূরণ হয়েছে এমন দাবি তিনি করতে পারবেন না। যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে নোট বাতিল করেছেন তাই একটিও সফল হয়নি। বরং হিতে বিপরীত হয়েছে। মানুষ জীবন যন্ত্রণা বেড়েছে। দেশের অর্থনীতি, মানুষের জীবিকার অবনতি ঘটেছে। বড়গলা করে ঘরে ঘরে শৌচালয় বানিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিস্তর হাততালি কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। গঙ্গা নদীকে স্বচ্ছ করার প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। পারেননি। গঙ্গা এখন আগের থেকেও বেশি দূষিত। পূর্বতন সরকারের ‘লুকইস্ট’ নীতি বদল করে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি ঘোষণা করেছিলেন। কাজ এক ইঞ্চিও এগোয়নি।


ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী গোলপোস্ট হিসেবে ঠিক করেছিলেন স্বাধীনতার ৭৫বছর অর্থাৎ ২০২২ সালকে। এই ২০২২সালের মধ্যে করে ফেলবেন এমন কত প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন তার কোনও হিসাব তাঁর কাছেও সম্ভবত নেই। বলেছিলেন কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন। অতীতে পোস্ট অফিসে টাকা জমালে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হত। এখন দশ বছরেও হয় না। ত‍‌বে অতি উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার মূল্য পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হত। এখন দশ বছরেও হয় না। তবে অতি উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার মূল্য পাঁচ বছরে অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। তাই সংখ্যার হিসেবে কৃষকের আয় খানিকটা বাড়লেও প্রকৃত আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। মনে রাখতে হবে প্রকৃত আয় বাড়লেই মানুষের জীবনে সমস্যা কমে স্বাচ্ছন্দ বাড়ে। তি‍‌নি আর একটি মহা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২০২২ সালের মধ্যে ভারতকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পরিণত করবেন। বাস্তবে কোনও রকমে ৩.৪বিলিয়ন ডলার হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির হার বিবেচনায় রাখলে আদতে একটুও বাড়েনি। এখন মুখ রক্ষার জন্য গোল‍‌পোস্ট সরিয়ে ২০২৪সাল করা হয়েছে। পদে পদে ব্যর্থ ‍ হয়েও তাঁর শিক্ষা হয় না। লোক ভুলিয়ে ভোট আদায় তার রাজনীতির একটা কৌশল। তাই লোকসভা ভোটের আগে নতুন স্বপ্ন ফেরির জন্য রাস্তায় নেমেছেন। ২০৪৭সালের মধ্যে উন্ন বিশ্বের শরিক হবেন। এক্ষেত্রেও তি‍‌নি সংখ্যার গোঁজামিলে লোক ঠকা‍‌নোর ফন্দি আটছেন। উন্নত দেশ মানে জিডিপি নয়। নাগরিকদের জীবনমানের উন্নতি একটা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম। সেই নিরিখে ভারত এখনো পেছনের সারিতে। যে গতিতে এগোচ্ছে তাতে আগামী আরও একশ বছরেও প্রকৃত উন্নতির আলো দেখার সম্ভাবনা নেই।

Comments :0

Login to leave a comment