গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বিজেপি যে বেশ চাপে আছে তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেই ১৯৯৮ সাল থেকে বিজেপি গুজরাটে ক্ষমতায়। তার মধ্যে নরেন্দ্র মোদীই প্রায় ১৬ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবার পর গত আট-নয় বছরে বেশ কয়েকবার মুখ্যমন্ত্রী বদলানো ক্ষমতায় টিকে থাকার তাগিদে। নরেন্দ্র মোদীর পক্ষেও দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া অসম্ভব হয়ে যেত যদি গোধরা কাণ্ড এবং ভয়াবহ গুজরাট দাঙ্গার মাধ্যমে তীক্ষ্ণ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করা না হয়। বস্তুত সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মেরুকরণ ছাড়া হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির শক্তিবৃদ্ধি বা ক্ষমতা দখল সম্ভব নয় গুজরাট দাঙ্গাই সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বস্তুত গুজরাটে দীর্ঘস্থায়ী আরএসএস-বিজেপি’র শাসনের মূলে আছে এই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ। এটাই আসল গুজরাট মডেল। এই মডেল অন্যান্য রাজ্যে প্রয়োগ করে ক্ষমতায় আসা ও ধরে রাখায় তারা বদ্ধপরিকর। উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডেও চলছে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের সেই মডেলের প্রয়োগ। এখন গত কয়েক বছর ধরে একই মডেল প্রয়োগে মরিয়া হয়ে উঠেছে কর্ণাটকে।
২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পর থেকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের যে ফসল এতকাল বিজেপি ঘরে তুলছিল এখন তার ধারও অনেক কমে গেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও বোঝা গেছে বিজেপি’র জমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ভোটে বিজেপি এবং কংগ্রেসের আসন সংখ্যার ব্যবধান অনেকটাই কমে গেছে। কংগ্রেস ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে বিজেপি’র। এবারের নির্বাচনে কি হয় তা নিয়ে শীর্ষ নেতাদের উদ্বেগ অস্বাভাবিক নয়। বিজেপি নিশ্চিত নয় যে তারা ক্ষমতায় ফিরবে। তাই গত পাঁচ বছরে রাজ্য সরকারের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে নির্বাচনে লড়তে তার ভয় আছে। তাই কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়ে সরাসরি আসরে নামিয়ে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি বুঝে গেছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য নেতাদের সামনে রেখে নির্বাচনে লড়লে ভরাডুবি নিশ্চিত। তাই তারা সামনে রেখেছে মোদীকে। মোদীই গুজরাট নির্বাচনে বিজেপি’র সুখ। মোদীকে দেখিয়েই তারা বিজেপি ভোট দেবার আবেদন জানাচ্ছে।
কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপি’র নতুন উদ্বেগ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিকে নিয়ে। এবার কেজরিবাহিনী আঁটঘাট বেঁধে গুজরাটের ভোটের ময়দানে নেমেছে। গুজরাটের মানুষের যে সাড়াও মিলছে তাতে সন্দেহ নেই। বিজেপি’র সবচেয়ে যেটা ভয় তা হলো গুজরাট না পাঞ্জাব হয়ে যায়। একটা ক্ষীণ সান্ত্বনা অবশ্য আছে, আপ বিরোধী ভোট ভাগ করে বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতে পারে। তেমনি আপ বিজেপি’র ভোট কেটে নেবে কিনা সেটা আন্দাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এমন ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে হাল ধরেছেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর ঘন ঘন গুজরাট সফর, একটার পর একটা প্রকল্প ঘোষণা এবং লাগাতার ভোট প্রচার দেখে বোঝাই যাচ্ছে না তিনি প্রধানমন্ত্রী না মু্খ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে সহায় হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটমুখী গুজরাটে প্রধানমন্ত্রীর এমন হাই ভোল্টেজ প্রাক ভোট প্রচারের সুযোগ মিলেছে নির্বাচন কমিশনের কল্যাণে। বস্তুত কোনও সঙ্গত কারণ বা ব্যাখ্যা ছাড়াই উত্তরাখণ্ড ভোট সূচি ঘোষণা করলেও ঝুলিয়ে রাখে গুজরাটের সূচি। এই সুযোগেই প্রধানমন্ত্রী চুটিয়ে রাজ্যজুড়ে চষে বেড়িয়ে প্রকল্প ঘোষণা, শিলান্যাস ও উদ্বোধন করে গেছেন। দায় তো মোদীরই বেশি। গুজরাট ফসকে গেলে ২০২৪ সালে দিল্লিও ফুড়ুৎ হয়ে যাবে।
Comments :0