JANA AJANA — TAPAN KUMAR BAIRAGYA / NATUNPATA - 22 SEPTEMBER

জানা অজানা — কালাজ্বরের আবিষ্কারক / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

JANA AJANA  TAPAN KUMAR BAIRAGYA  NATUNPATA - 22 SEPTEMBER

জানা অজানানতুনপাতা

কালাজ্বরের আবিষ্কারক
তপন কুমার বৈরাগ্য

সারাবাংলা তখন কালাজ্বরের আতঙ্কে আতঙ্কিত।শয়ে শয়ে মানুষ
মারা যাচ্ছেন;অথচ এই জ্বর থেকে আরোগ্য লাভের কোন উপায়
নেই। ম্যালেরিয়ার পর এটা ছিলো দ্বিতীয় মারণ রোগ।এই রোগের
কারণ হিসাবে ধরা হয় বেলমাছি। ১৯০৪ সালে রর্জাস নামে এক জীবাণুতত্ত্ববিদ নানা পরীক্ষা করে দেখান যে এই রোগের কারণ স্যান্ড ফ্লাই অর্থাৎ বেলেমাছি।

এই মাছির প্রকোপে বাংলাদেশের যশোহর,পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া,কলকাতা,হুগলি,বর্ধমান প্রভৃতি জেলায়এই রোগ
ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে অন্যান্য জেলায়ও।এমনকি
আসামের চা বাগান অঞ্চলে ব্যাপকভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
এক বাঙালী বিজ্ঞানী এই সময় মানুষকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে
আসেন।১৯১৫সাল থেকে ক্যাম্পবেল মেডিকেল কলেজের একটা
ছোট্ট ঘরে রাতদিন গবেষণা চালিয়ে গেলেন।একটায় চিন্তা
মানুষকে এই রোগের হাত থেকে বাঁচাতেই হবে। খাওয়া নেই,
রাতে ঘুম নেই।শরীর তাঁর দুর্বল হতে লাগল। তবু তিনি থেমে নেই।
তিনি যে মানবপূজারী।মানুষের আশীর্বাদে ধন্য হয়ে তিনি
১৯২২সালে কালাজ্বরের ঔষধ আবিষ্কার করলেন।
এই রোগের লক্ষণ প্রথমদিকে অল্প অল্প জ্বর আসতো। তারপর
প্লীহা ও যকৃৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতো।রক্তাল্পতা দেখা
দিতো। মাথার চুল উঠে যেত।শরীর শুকিয়ে যেত এবং দেহের
নানান স্থান থেকে রক্ত ক্ষরণ হতো। শেষে অকাল মৃত্যু।
জানা যায় সত্যজিৎ রায়ের পিতা স্বনামধন্য শিশু সাহিত্যিক
সুকুমার রায় ১৯২৩ খ্রীস্টাব্দে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে
মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরে মারা যান।
যিনি এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন,সেই মহান ব্যক্তির
নাম উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।এর আগে অবশ্য তিনি ম্যালেরিয়ার
প্রতিষেধক আবিষ্কারের দিকে সচেষ্ট হন;কিন্তু রোনাল্ড রস ১৮৯৭
খ্রীস্টাব্দের ২০শে জুন ম্যালেরিয়া আবিষ্কার করার পর তিনি
ঐ পথ থেকে সরে আসেন।


উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ১৮৭৩ সালের ১৯শে ডিসেম্বর 
পূর্ববর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীরনিকটস্থ সরডাঙ্গা গ্রামে 
জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম নীলমণিব্রহ্মচারী।
পিতার নামে পূর্বস্থলীতে একটা উচ্চ বিদ্যালয় আছে।
মায়ের নাম সৌরভসুন্দরী।স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশুনার পর
হুগলী মহসীন কলেজে পড়াশুনা করেন।পরে প্রেসিডেন্সি
বিশ্ববিদ্যালয় এবংকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশুনা
করেন।১৮৯৯সালে ভেষজ বিজ্ঞান ও শল্য চিকিৎসায়
প্রথম স্থান নিয়ে এম,বি পাশ করেন।এর আগে বেশ কিছুদিন
তিনি ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। অবশ্য রোনাল্ড রস
এই কাজে সফল হন।যার জন্য তিনি এই গবেষণা ছেড়ে
দেন। এরপর তিনি শরীরতত্ত্বে পি ,এইচ,ডি উপাধি লাভ
করেন।ঢাকা মেডিকেল কলেজ,নীলরতন মেডিকেল কলেজ,
কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক হিসাবে কাজ
করেন। 
তিনি ফাইলেরিয়া,ডায়াবেটিস,কুষ্ঠ, মেনিনজাইটিস নিয়েও
গবেষণা করেন।এই সব গবেষণায় তিনি বেশ কিছু সাফল্যও
পেয়ছিলেন। তিনি মেমোরিয়াল পুরস্কার, মিণ্টো পদক,
জোনস পদক, কাইজার ই-হিন্দ স্বর্ণপদক ছাড়াও তিনি আরও
বেশ কিছু পুরস্কার পান।


১৯২৯ এবং ১৯৪২খ্রীস্টাব্দে নোবেশ পুরস্কারের জন্য তাঁর
নাম নির্বাচিত  হয়েছিল। কিন্ত তার ভাগ্যে এই পুরস্কার জোটে নি।
প্রথমতঃ ব্রিটিশ সরকারেরঅসযোগিতা এবং অন্যান্য কিছু 
কারণের জন্য তিনি এইনোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হন।
চিন,ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ তার আবিষ্কারের স্বীকৃতি দিয়েছিল । কিন্তু
ভারতবর্ষের ব্রিটিশ সরকার তাহা সহজভাবে মেনে নেন নি।
এই মহান মানুষটিকে আমরা হারাই ১৯৪৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী।
বর্তমানে সরডাঙ্গায় তাদের বংশের প্রতিষ্ঠিত ৩টি শিবমন্দির
আছে।তাঁদের কুলদেবতা রাজরাজেশ্বরের মমন্দির সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। এখানে অতীতে দোল মেলা হতো।সেটি আবার পুনরায় শুরু করার ব্যবস্থা কথা চলছে।স্থাপন করা হয়েছে সংগ্রহশালা 
এবং উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী স্মৃতি পাঠাগার।
আছে তাঁর আবক্ষ মৃর্তি। তার নামে বিশ্বরম্ভা থেকে সরডাঙ্গা
পর্যন্ত ইউ,এন,ব্রহ্মচারী সরণি স্থাপন করা হয়েছে। 


 

Comments :0

Login to leave a comment