Kolkata New year

ঠান্ডার অভাব, মন্দার প্রভাবই যেন বেঁধে রাখল বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসকে

কলকাতা

 কাঙ্ক্ষিত শীত নেই। মহানগরের দুঃখ। ইংরেজি বছরের প্রথম দিনের অন্যতম ভিলেন ছিল আবহাওয়া। 
কিন্তু মধ্যবিত্ত, গরিবের ভিলেন কি আর একটি? তারই মধ্যেই বর্ষবরণে শহর থেকে দূরে থাকার প্রবণতা এবারও আছে। কিন্তু মন্দার ছায়া সেখানেও পড়েছে। শহরকে এড়িয়ে গেছেন অনেকে। নতুন ইংরেজি বছরের গোড়ায় কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহর, মফঃস্বলের মানুষের গন্তব্য পাহাড়ে। এর মধ্যে নতুনত্ব কী আছে? না, নেই। ঠিক। তবে দার্জিলিঙের পাশাপাশি অনেককে দেখা যাচ্ছে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের জঙ্গলঘেরা এলাকাগুলিতে। বেলপাহাড়ি, অযোধ্যা পাহাড়, বান্দোয়ান সহ পশ্চিমাঞ্চলে ভিড় করেছেন অনেকেই। শান্তিনিকেতন এই রাজ্যের মানুষের স্বাভাবিক পছন্দ। এবার সেখানেও দেখা গেছে থাকার জায়গাগুলি ভরতি। অনেকেই সপরিবারে গেছে ডুয়ার্সে। তবে শুধু তাই নয়। কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের স্পটেও ১জানুয়ারি চড়ুইভাতিতে দেখা গেছে অনেককে। 
তবে এই সব ছবিই মূলত মধ্যবিত্তের। আর্থিক টানে তাঁরাও পড়েছেন। তাই দূরের পরিকল্পনা কমছে। গরিব অথবা যাঁরা মধ্যবিত্তদের মধ্যে বেশি বিপন্ন, উৎসব কী তাঁদেরও ছোঁয় না? ছোঁয়। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মহানগর জানিয়েছে—উচ্ছ্বাস কম। এরই মাঝে সঙ্কট স্পষ্ট। যেমন, বর্ষবরণের দিনেও ধর্মতলায় মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নিচে ন্যায্য চাকরির দাবিতে অবস্থানে দেখা গেল আন্দোলনকারীদের।
হাতে টাকা পয়সা নেই। চরম আর্থিক সঙ্কটের টানপড়নের জীবনে উধাও হচ্ছে উৎসব পার্বণের আনন্দ উচ্ছ্বাস। ১জানুয়ারি আনন্দ, উচ্ছ্বাস, হই হুল্লোড়ের যে ছবিটা মহানগরে ধরা পড়ে এবছর তা কার্যত নেই বললেই চলে। ১ জানুয়ারি ইংরেজি বছরের এই প্রথম দিনে মহানগরের ময়দান, ভিক্টোরিয়া, শহীদ মিনার, ধর্মতলা সহ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের যে ঢল রাজপথ থেকে বিভিন্ন প্রান্তে ফি বছর লক্ষ্য করা যায় এবার সেই চেনা ছবিটা নেই। শহীদ মিনার ময়দানে এদিন বিকাল চারটা পর্যন্ত হাতে গোনা লোককেই দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে আবার বেশিরভাগই জীবিকার তাগিদে নিত্যদিনের মতো মহানগরে এসেছেন।‘‘গরিবের আবার আনন্দ কিসের? নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর জীবনে দু’মুঠো জোগাড় করাই দায় তার ওপর বাড়তি খরচ করে আনন্দ, উচ্ছ্বাসের কথা ভাবতেই পারি না’’। বছরের প্রথম দিন হতাশায় ভরা চোখ মুখ নিয়ে কথাগুলো বললেন নদীয়ার শিমুরালির বাসিন্দা অর্ণব বৈদ্য। পেশায় সেলসম্যান অর্ণব বৈদ্যর ছেলে আছে। আছেন স্ত্রী। আছেন আরও কয়েকজন। ৬ জনের সংসার। এই ৬ জনের মুখে দু’মুঠো তুলে দেওয়ার দুশ্চিন্তা নিয়েই বছরের প্রথম দিন তিনি ঘুরছেন মহানগরের রাজপথ থেকে অলিগলিতে। ব্রিগেডের মাঠেও বছরের প্রথম দিন যে জমাটে ভিড়, হই হুল্লোড় দেখা যায় এবার সে ছবিটা বিকাল পর্যন্ত দেখা যায়নি। কলকাতা ও শহরতলির আশপাশের কিছু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসলেও চোখেমুখে আর্থিক দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ছেলে-মেয়ের আবদারেও খানিকটা মন মরা অনেকে। আর্থিক টানাপড়েনের এই দূর্বিষহ জীবনে যে দোলনায় চড়া ২০ টাকাও মহার্ঘ তা স্পষ্ট করলেন কসবার বাসিন্দা নিমাই জানা। ছেলে-মেয়ের আবদার, জেদে তাকে পরিবার নিয়ে বের হতে হয়েছে। খরচে রাশ টানতে বাড়ি থেকে আনা মুড়ি আলু ভাজা দিয়েই ময়দানে বসে চলছিল তাদের দুপুরের ভোজন। বছর সাতের ছেলে বিপ্লব দোলনায় চড়ার আবদার করতেই বলে উঠলেন বাবা অনেক টাকা। পরে একদিন তোমাকে দোলনায় চড়াবো। ছোট্ট ছেলের আবদারে ২০ টাকা খরচ করার আগে বাকি মাসের হিসাব কষতে হচ্ছে নিমাই জানাদের। উৎসব সকলের। এই কথাটাই কার্যত দুরমুশ হয়েছে মমতা ব্যানার্জির শাসনকালে। যার টাকা আছে উৎসব, আনন্দ তাদেরই। এই ভাষ্যই বছরের প্রথমদিন ধরা পড়েছে মহানগরের বিভিন্ন প্রান্তে।
 

Comments :0

Login to leave a comment