MD SALIM NEW BINARY

দ্বৈরথ তৈরির নতুন কৌশলকেও হারাতে পারবে বামপন্থীরা: সেলিম

রাজ্য

MD SALIM NEW BINARY শনিবার সভায় বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম।

রামশংকর চক্রবর্তী  (তমলুক) ও লক্ষীকান্ত সামন্ত (হলদিয়া)

হয় তৃণমূল, নয় বিজেপি। বাংলার রাজনীতিতে বামপন্থীদের কোণঠাসা করতেই তৈরি হয়েছিল এই দ্বৈরথ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই দ্বৈরথ ভেঙে এগিয়েছে বামপন্থী এবং সহযোগীরা। তাই দ্বৈরথের নতুন কৌশলে বেঙ্গালুরুর বৈঠককে হাজির করছে সংবাদমাধ্যম। শ্রেণি বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করে এই কৌশলও ব্যর্থ করবে বামপন্থীরা। 

শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও হলদিয়ায় সিপিআই(এম)’র দু’টি সভায় পরিস্থিতিকে এ মর্মেই ব্যাখ্যা করেছেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

সেলিম বলেছেন, ‘‘এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিআই(এম) সহ বামপন্থীদের লড়াই করতে হয়েছে রাষ্ট্রশক্তিভাড়াটে রাজনৈতিক সংস্থার সঙ্গে। তাদের বাহিনীর সামনের সারিতে ছিল বিডিওএসডিওওসিআইসি-রা। তা সত্ত্বেও বামপন্থীরা উত্তরণের জায়গায় পৌঁছেছে। এই পরিবর্তনটাকেই প্রসারিত করতে হবে আরও।’’ 

এদিন পার্টির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির ডাকে তমলুক মহকুমার এরিয়া কমিটির সদস্যদের নিয়ে কুলবেড়িয়ায় কমরেড সুকুমার সেনগুপ্ত ভবন এবং হলদিয়া মহকুমা এলাকার এরিয়া কমিটিপার্টি সদস্যসমর্থকদের নিয়ে হলদিয়ার সিপিটি অডিটোরিয়ামে সাধারণ সভা হয়। মহম্মদ সেলিম ছাড়াও আলোচনা করেন অনাদি সাহু। সভাপতিত্ব করেন নিরঞ্জন সিহি। ছিলেন পার্টিনেতা হিমাংশু দাসইব্রাহিম আলি সহ পার্টির জেলা সম্পাদক মন্ডলী ও জেলা কমিটির সদস্যরা।

‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আমাদের কর্তব্য’ শীর্ষক আলোচনায় সেলিম বলেন‘‘এ রাজ্যে লড়াইকে তৃণমূল এবং বিজেপি’র দ্বৈরথ বলে দেখানোর চেষ্টা করেছিল। পঞ্চায়েতে সেই দ্বৈরথ ভাঙল। ফের নতুন কায়দায় প্রচার শুরু হয়েছে। বলা হলো, বেঙ্গালুরুতে এক মঞ্চে তৃণমূল ও সিপিআই(এম)। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পাটনা বৈঠকের সময় এত চর্চা হয়নি। কারণ তখন মিডিয়া ‘বিজেপি বনাম তৃণমূল’ প্রচারে ব্যস্ত ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মিডিয়ার বানানো দ্বৈরথ ভেঙেছে। তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এটাই আশঙ্কা দক্ষিণপন্থার কাছে। আবারও নতুন করে বাইনারি তৈরি করা হচ্ছে। মানুষের বিবেচনায় কেবল দু’টি দলকে রাখার পরিকল্পনা। আমরা পরিষ্কারভাবেই বলছি। সিপিআই(এম)'র পাটি কংগ্রেসে যা লাইন স্থির হয়েছে সেই মতোই সিপিআই(এম) রাজনৈতিক লড়াই লড়ছে।’’

সেলিম বলেন, ‘‘শাসক শ্রেণি তাদের মনোমতো একজন নেতা তৈরি করছে। যাকে সামনে রেখে দেশের ব্যাঙ্কবীমাসম্পদ যা কিছু সব লুট হবে। দারিদ্র্য সীমার নিচে দেশের মানুষের অবস্থান হবে। একমাত্র বামপন্থীরাই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। তাই আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে বারে বারে বামপন্থীদেরকেই রাখা হচ্ছে।’’

 মহম্মদ সেলিম বলেন ‘‘যাদবপুর কাণ্ডে মমতা ব্যানার্জি ও বিজেপির মুখে একই কথা। আক্রমণের তীর সিপিআই(এম)'র দিকে। এটা আরএসএসর লাইন। এটাই ওদের সমঝোতা।’’

সেলিম দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রতিরোধের স্পৃহা জাগাতে হবে বামপন্থীদের। নিজের শ্রেণি বন্ধুদের আরো সক্রিয় করে লড়াই জোরদার করতে হবে। নিজেদের মতাদর্শ নীতি অবলম্বন করে ভবিষ্যতের দিকে এগোতে হবে। তবেই দক্ষিণপন্থার এই চক্রান্ত রুখে দেওয়া যাবে।’’

মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘এ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস আরএসএসের একটি শাখা সংগঠন রূপে সুপরিকল্পনা মাফিক কাজ করে চলেছে। আরএসএস’র জায়গা করে দিতে তৃণমূল সরকার পুজো কমিটিকে ৭০ হাজার টাকা বা ইমাম, পুরোহিতদের ভাতা দিচ্ছে।’’ 

হলদিয়ার সভায় অনাদি সাহু বলেন, ‘‘২০১৪ সালে বিজেপি বলেছিল কৃষকের স্বার্থ দেখবেসকলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হবেসবকা সাথ সবকা বিকাশ হবে। কিন্তু সরকারে এসে রেলব্যাংকবন্দরকে বেসরকারি করতে লাগলো। রান্নার গ্যাসের দাম বারোশো টাকাকেরোসিন খোলাবাজার ১০০ টাকাঔষধের দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখীনিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামছাড়া। শ্রমিকের অধিকার লুট হচ্ছে। স্থায়ী ক্ষেত্রে অস্থায়ীচুক্তিভিত্তিকঠিকাদার শ্রমিক নিয়োগ বেড়েই চলছে। ২৪ আগস্ট দিল্লিতে শ্রমিক কৃষকের যৌথ সংগ্রাম গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের লড়াই গড়ে তুলতে হবে।"

দুটি সভাতেই সভাপতিত্ব করে আগামী দিনের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে ঘোষণা করেন পার্টির জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। তার মধ্যে ৩১ আগস্ট ধর্মতলার সমাবেশে জেলা থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায় জমায়েতের লক্ষমাত্রা রয়েছে বলে জানান তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে পার্টির লাইন বিরুদ্ধে গিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে শোকজ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

Comments :0

Login to leave a comment