গাজায় ইজরায়েলের চলতি গণহত্যার বিরুদ্ধে শুক্রবার দিল্লির যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে প্যালেস্তাইন সংহতি সংগঠন। এদিনের বিক্ষোভে ছাত্র-যুব-মহিলা-শ্রমিক সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ অংশ নিয়েছে। গত মঙ্গলবার ভোরে একতরফা ভাবে সংঘর্ষ বিরতি ভেঙে, গাজার উপর ফের বেলাগাম আক্রমণ শুরু করেছে ইজরায়েল। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ জন। এই হামলাকে বেআইনি এবং অনৈতিক বলে কটাক্ষ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
যাবতীয় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গণহত্যা ও জবরদখলের এই নৃশংস অভিযানের বিরুদ্ধে মোদী সরকার এখনও মুখ খোলেনি। বিক্ষোভ সমাবেশের মঞ্চে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য সুভাষিণী আলি। ইজরায়েলের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন,‘‘গাজায় লাগামহীন গণহত্যা চালাচ্ছে ইজরায়েল। প্যালেস্তিনীয়দের সম্পূর্ণ রূপে মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। গোটা দুনিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী লুটেরা রাজ কায়েম করতেই ইজরায়েল এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরণের ঘটনা বারেবারে আমাদের কাছে সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরে। সংঘর্ষ বিরতির ব্যর্থতা আদতে সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বিচারিতার প্রমাণ। গোটা দুনিয়া জানে নেতানেয়াহুর আবদার সব সময় শোনা হবে। তা সত্ত্বেও তথাকথিত শক্তিধর দেশগুলি এতদিন ধরে যে শান্তিরক্ষার নামে ভনিতা ও ভণ্ডামি করছিল, তা এখন জলের মতো পরিষ্কার।’’
একই সঙ্গে গাজায় নতুন সংঘর্ষের প্রতি মোদী সরকারের নীরবতা পালন নিয়েও তীব্র আক্রমণ করেছেন সিপিআই(এম) নেত্রী। মোদীর আমলে ভারত ট্রাম্প ও নেতানেয়াহুর গোলামে পরিণত হয়েছে। এমনই কটাক্ষ করেছেন সুভাষিণী আলি। ‘‘এই দাসত্ব স্বীকার করে, মোদী সরকার দেশের জনগণের আপামর স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ভেবে অবাক লাগে, দেশের যারা নিজেদের রাষ্ট্রবাদী বলে দাবি করেন, তারাই দেশের বাইরে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের সামনে মাথা নত করেন।’’ বলেছেন তিনি। একই সুরে ইজরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশন’র সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। নারী, শিশু ও বৃদ্ধ নির্বিশেষে গাজার সাধারণ মানুষের উপর জায়নবাদীদের এমন বেলাগাম হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বের সমস্ত শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এদিন বিক্ষোভ সমাবেশে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন,‘‘ভারতের জনগণ চিরকাল হিংসা, শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সেই ঐতিহ্যকে স্মরণে রেখেই এই সময়কালে আমরা প্যালেস্তাইনে পাশে দাঁড়াচ্ছি। অথচ দেশের সরকার এই ঐতিহ্যের জলাঞ্জলি দিয়ে এই জঘন্য ঘটনাতেও নীরবতা পালন করছে। এদিকে আমেরিকায় ইজরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ভারতীয় নাগরিকদের আটক করা হচ্ছে, প্রত্যর্পণ করা হচ্ছে। দেশের সাধারণ জনগণের স্বার্থে ভারত সরকারকে এই ট্রাম্প-নেতানেয়াহু জোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেই হবে।’’
এদিনের সমাবেশে উল্লেখযোগ্য ভাবে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই নেতা আজিজ পাশা, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অচিন বিনায়ক সহ দশটি বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বিক্ষোভের মঞ্চ থেকে ভারত সরকারের কাছে, বিদেশনীতির প্রকৃত বোঝাপড়া মেনে প্যালেস্তাইনের সাধারণ জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ইজরায়েলে অস্ত্র এবং শ্রমিক পাঠানোর যাবতীয় চুক্তি বাতিলের দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ইজরায়েলের এই নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে প্যালেস্তাইন সংহতি সংগঠন।
CPI(M) PROTEST
দিল্লিতে প্রতিবাদ বামপন্থীদের

×
Comments :0