দ্বিতীয় দফায় দার্জিলিঙ লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করে পুরুষ ভোটকর্মীদের পাশাপাশি মহিলা ভোটকর্মীরা ভোট প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে নিজস্ব ভোট কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন শুক্রবার সকাল থেকে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য শিলিগুড়ি কলেজ ডিসিআরসি কেন্দ্র প্রাঙ্গনে বৃহস্পতিবার খুব সকাল থেকেই ভোটকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ কর্মীদের ব্যস্ততা নজরে এসেছে। শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রের ডিস্ট্রিবিউশন কাম রিসিভিং সেন্টার (ডিসিআরসি) কেন্দ্র করা হয়েছে শিলিগুড়ি কলেজে। শিলিগুড়ি কলেজের ডিসিআরসি কেন্দ্র থেকে ভোটকর্মীরা ইভিএম মেশিন, ভোটার তালিকা সহ ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে নিজ নিজ কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। জানা গেছে, শিলিগুড়ি বিধানসভায় ২৪৫টি, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি বিধানসভায় ৩২৫টি ও ফাঁসিদেওয়া বিধানসভায় ২৬১টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতে পাঁচটি করে মহিলা পরিচালিত বুথ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি কলেজ মাঠ থেকে ভোটকর্মীরা বিভিন্ন বুথের উদ্যেশ্যে রওনা হচ্ছেন।
অন্যদিকে দার্জিলিঙ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত উত্তরদিনাজপুর জেলার চোপড়া বিধানসভার ভোটকর্মীদের ডিসিআরসি কেন্দ্র হয়েছে ইসলামপুর কলেজে। ইসলামপুর কলেজ থেকে ভোট কর্মীরা বুথের দিকে বেরিয়ে গেছেন। দার্জিলিঙ, কার্শিয়াঙ, কালিম্পঙ থেকেও ভোটকর্মীরা তাদের নিজ নিজ বুথের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন। দার্জিলিঙ গভর্নমেন্ট কলেজ, কালিম্পঙ স্কটিশ ইউনিভারসিটি, মিশন ইন্সটিটিউট, কার্শিয়াঙ সেন্ট আলফনসাস স্কুলের ডিসিআরসি কেন্দ্র থেকে ভোট কর্মীরা সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। দার্জিলিঙ লোকসভার মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ভোটারের সংখ্যা ১৭ লক্ষ ৭৬হাজার ৮৯৭জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৮লক্ষ ৯৫হাজার ২৮৭জন ও মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৮লক্ষ ৮১হাজার ৬১০জন। ভোটগ্রহন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯৯৯টি। এর মধ্যে ৫৮টি ভোটকেন্দ্র পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন মহিলা ভোটকর্মীরা।
রায়গঞ্জ পলিটেকনিক কলেজে ভোট কর্মীদের ভীড়।
রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটকে কেন্দ্র করে এদিন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। রায়গঞ্জ পলিটেকনিক কলেজ থেকে সকাল থেকে দেখা গেছে ভোট কর্মীরা তাঁদের নিজস্ব সরঞ্জাম নিয়ে ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে। প্রবল তাপপ্রবাহকে মাথায় নিয়েই চলছে তাদের ভোট সামগ্রী সংগ্রহ ও মিলিয়ে নিয়ে রওনা দেওয়ার তোড়জোড়। নির্বাচন কমিশন তথা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট থাকলেও, ডিসিআরসি এর মধ্যে কিছু অব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ভোটকর্মীরা। বিশেষ করে কিছু কিছু কেন্দ্রে পুলিশ ট্যাগিং করাতে হিমশিম খাচ্ছেন ভোটকর্মীরা। চরম অব্যবস্থা, নিজেদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ব্যস্ত পুলিশ কর্মীরা। ফলে সব কাজ সারা হলেও বেলা গড়িয়েও হচ্ছে না পুলিশ ট্যাগিং। যদিও সরকারি সহায়তা নিয়ে কোন অসন্তোষ প্রকাশ করেন নি ভোটকর্মীরা। তবে এই তীব্র গরমে পুলিশ ট্যাগিং নিয়ে যে নাজেহাল অবস্থা তা কার্যত স্বীকার করেছেন বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া ভোট কর্মরা।
এবারের লোকসভা ভোটে উত্তর দিনাজপুর জেলায় ২২ লক্ষ ৮৭ হাজার ২৫২ জন ভোটার। অতিরিক্ত বুথ সহ ১৭০২ টা বুথ তৈরি করা হয়েছে। জেলার ৯ টা ব্লকে ১৯৯ টা সেক্টর অফিস হয়েছে। এর মধ্যে চোপড়া বিধানসভা ক্ষেত্র দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে এবং ইটাহার বিধানসভা ক্ষেত্র বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে প্রশাসন সুত্রে পাওয়া তথ্য অনুয়ায়ী রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৭ লক্ষ ২৫ হাজার ৭৫৫ জন এবং মোট বুথের সংখ্যা ১৩৩৬। রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সব থেকে বেশি ভোটার কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দের। ঐ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৯৪হাজার ৩৮১ জন। মোট ২০ জন প্রার্থী। মহিলা ভোটার ৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩২০ জন। পুরুষ ভোটার ৯ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৩৭ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৮ জন। মোট ভোটকর্মীর সংখ্যা ৮ হাজার ৮৪ জন। স্পর্শকাতর বুথ ২১০ টি। তার মধ্যে ইসলামপুর মহকুমা ১১১টি, ৯৯ টি রায়গঞ্জ মহকুমায়। থাকছে ১১১ কোম্পানির কেন্দ্রীয় বাহিনী। চার হাজার রাজ্য পুলিশ। প্রতি বুথে থাকবে চারজন কেন্দ্রীয় জওয়ান। সব বুথেই ক্যামেরা ও ওয়েবকাস্টিং করার ব্যবস্থা রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কতার মধ্যেই ভোটের সামগ্রী নিয়ে ভোট কর্মীরা বুথে বুথে রওনা দিয়েছেন বৃহস্পতিবার। বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের ১৫ লক্ষ ৬১হাজার ৯৬৬ জন ভোটারের জন্য ১ হাজার ৫৬৯ টি বুথ এবং দুটি অক্সিলারি বুথের ব্যবস্থা হয়েছে। মহিলা ভোট কর্মীরা ৭টি বিধানসভার ৩৬টি বুথে ভোট নেবেন। বালুরঘাট কেন্দ্রে ক্রিটিকাল বুথের সংখ্যা ৩২৪ টি। ৭৩ কোম্পানী কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ৩০০০ রাজ্য পুলিশ ভোট পরিচালনায় ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে জেলা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।
এদিকে ভোট প্রচার শেষ হতেই বালুরঘাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার বেশ বুঝতে পারছেন, শুধু দুটো রেল চালু করানোই উন্নয়ন বলে মেনে নিচ্ছে না ভোটারেরা। ভোট প্রচারের জন্য বিজেপি ট্রাকটরের সঙ্গে ট্রলি জুড়ে রেলগাড়ির মডেল বানিয়ে একটা কামরায় লেখা হয়েছিল বালুরঘাট-শিয়ালদহ, অন্য কামরায় লেখা ছিল বালুরঘাট-দিল্লী। ভোটপ্রচারের শেষে সেই ডামি রেল বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা নাগাদ যুবশ্রী মোড়ের সামনের বড় রাস্তা দিয়ে বিজেপি পার্টি অফিসের দিকে যাচ্ছিল, এক দোকানদার জোরেই বললেন, রেল দেখিয়ে চিঁড়ে ভিজবে না! ইঙ্গিতটা স্পষ্ট।
বালুরঘাট কেন্দ্রের কংগ্রেস সমর্থিত বামফ্রন্ট প্রার্থী জয়দেব সিদ্ধান্ত বলছেন,ভোটের দিন নিজের ভোট দিয়েই বুথে বুথে যাব। আমাদের জোট ঐক্যবদ্ধ। ভোটের দিন কে কোথায় থাকবে সব ঠিক করা আছে। গত ১০ বছরে মানুষ বিজেপি আর তৃণমূলকে দেখে বুঝেছে ভরসা রাখা যায় কোদাল-বেলচায়। ভোটারের মনে জায়গা করে নিয়েছে আমাদের প্রতীক। শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে সবাই যেন ভোট দিতে পারেন।
বালুরঘাট ডিসিআরসি কেন্দ্র ভোট কর্মীরা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুয়ায়ী, গোটা গেশের সঙ্গে তৃতীয় দফায় ভোট হবে মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে ৭ মে। চতুর্থ দফায় বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর, বীরভূম কেন্দ্রগুলিতে ভোট হবে ১৩ মে। পঞ্চম দফায় ভোট হবে ২০ মে বনগাঁ, বারাকপুর, হাওড়া, উলুবেরিয়া, শ্রীরামপুর, হুগলী, আরামবাগ কেন্দ্রে। ষষ্ঠ দফায় তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে ভোট হবে ২৫ মে। বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ২৯ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র জমা হবে ওইদিন থেকেই। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ৬ মে, প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ মে। সপ্তম ও শেষ দফায় ভোট হবে ১ জুন, দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ, কলকাতা উত্তর কেন্দ্রগুলিতে। বিজ্ঞপ্তি জারি ও মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরুর তারিখ ৭ মে। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার শেষ দিন ১৪ মে, তা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ মে। ৪ জুন হবে ভোট গণনা।
ছবিগুলি তুলেছেন, জয়ন্ত সাহা, অপূর্ব মন্ডল, বিশ্বনাথ সিংহ এবং অনিন্দিতা দত্ত।
Comments :0