সূতাকলে রবীন্দ্রনাথ
কৃশানু ভট্টাচার্য
সে ছিল এক বিচিত্র ঘটনা। ঘটনাটা বিচিত্র লেগেছিল তার কাছেও। তিনি তো বলেই ফেলেছিলেন ,"কবি বলিয়া পরিচিত এক ব্যক্তিকে কাপড়ের কলের উদ্বোধন করিবার নিমিত্ত আহবান এক অদ্ভুত অসামঞ্জস্য শিল্প প্রচেষ্টার আধুনিক ইতিহাসে ইহার দৃষ্টান্ত নাই।"
কিন্তু সেই অদ্ভুত কান্ডটিই ঘটিয়ে ছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রসায়নবিদ তখন বাঙালির শিল্প প্রচেষ্টার কান্ডারী। নিজের স্থাপন করেছেন বেঙ্গল কেমিকাল। পরিচিত সকলকেই বলছেন নিজেদের শিল্প তৈরি করবার জন্য। ১৯৩৪ সাল সেপ্টেম্বর মাস। কলকাতা থেকে ব্যারাকপুরগামী বিটি রোড- তার উপরেই তৈরি হল একটি কাপড়ের কল। যেসময়ের সবচেয়ে ভালো যন্ত্রপাতি দিয়ে এই কলটি তৈরি হয়েছিল। এই কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা প্রত্যেকেই ছিলেন তাদের জগতে অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত মানুষ। যেমন ডাক্তার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী স্যার নৃপেন্দ্রনাথ সরকার ডাক্তার নীলরতন সরকার কলকাতার মেয়র শ্রীযুক্ত নন্দিনীঅঞ্জন সরকার আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী প্রফুল্ল কুমার সরকার সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার এবং মাখন সেন। পিছনে অবশ্যই ছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। কারখানাটি গড়ে উঠেছিল বেঙ্গল কেমিক্যাল এর বেঙ্গল কেমিক্যাল এর পানিহাটি কারখানার ঠিক উল্টোদিকে।
কারখানার কর্তৃপক্ষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এর শুভ উদ্বোধন করার জন্য। দিনটা ছিল ২৫ শে সেপ্টেম্বর ,১৯৩৪।
কারখানার নামকরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর নামে । তিনিও সেদিন ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন। যাত্রা শুরু করেছিল বাসন্তী কটন মিল- রবীন্দ্রনাথের হাতে উদ্বোধন হওয়া একটি কারখানা। আর সেই কারখানার উদ্বোধনী ভাষণে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, বাসন্তী মিলের কর্তৃপক্ষ যেন একটি পূজা বেদী নির্মাণ করেন যেখানে তাদের উপার্জন জাতীয় অর্থ বলে বিবেচিত হবে এবং সেই অর্থের একটা অংশ এ দেশের মানুষের নিরক্ষরতা ,অসাস্থ্য এবং নিরানন্দ দূর করতে ব্যবহার করা হয়।
বাসন্তী কটন মিল এখন আর চালু নেই । তবে এখনো রয়ে গেছে তার সেই ঐতিহাসিক কারখানা এবং কবির স্মৃতি বিজড়িত সভাস্থল।
Comments :0