মুক্তধারা
প্রবন্ধ
ভারতীয়ত্বের খোঁজে
বাসব বসাক
ভারত ভূখণ্ডে বসবাসকারী মানুষ মাত্রই ভারতীয়, নাকি তারা অন্য কোনো এক
মানব গোষ্ঠীর উত্তরসূরি যারা যুগ যুগ ধরে এই ভূখণ্ডে জন্মেছে, মরেছে, বংশ
রক্ষা করেছে, আর বার বার বিদেশি হানাদারদের মোকাবিলা করেছে? মহম্মদ বিন
কাসেম, মাহমুদ শাহ থেকে শুরু ক’রে তৈমুর লঙ হয়ে জাহিরুদ্দিন বাবুরদের আক্রমণ
ও দখলদারির শিকার হতে হয়েছে যাদের তারাই কি ভারতীয়? নাকি তারও বহু আগে
খ্রিস্টের জন্মেরও ২০০০ থেকে ১৫০০ বছর আগে দক্ষিণ পূর্ব ইয়োরোপের
বিস্তীর্ণ তৃণভূমি স্তেপিস থেকে হিন্দুকুশ পেরিয়ে এই ভূখণ্ডে লোহার অস্ত্র হাতে
ঢুকে পড়া ঘোড়সওয়ার যাযাবর আর্যরা যাদের পরাস্ত করে ক্রমশ ভূখণ্ডের দক্ষিণ
দিকে ঠেলে দিয়েছে সেই দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীই আসল ভারতীয়? অথবা যেমনটা বলে
থাকে বিজেপি-আরএসএস—ইয়োরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে যতই মিল থাকুক না
কেন আর্যদের সংস্কৃত ভাষার, আদতে আর্যরাই খাঁটি ভারতীয়, এই ভূখণ্ডেই
তাদের উৎপত্তি, এখান থেকেই তারা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে ইয়োরোপ অভিমুখে! এই
শেষতম মতটি প্রতিষ্ঠিত করার ব্যর্থ প্রয়াসে অবশ্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি
হিন্দুত্ববাদীদের। ১৯৯৯-এর জুলাইয়ে জনৈক এন এস রাজারাম ও নটবর ঝা বৈদিক
সভ্যতা যে হরপ্পার থেকেও প্রাচীন এবং হরপ্পার মানুষ যে ঘোড়াকে পোষ
মানিয়েছিল এ কথা প্রতিষ্ঠিত করতে হরপ্পায় পাওয়া ঘোড়ার ছবিওয়ালা সিলমোহর
পর্যন্ত তথাকথিত প্রামাণ্য নথি হিসাবে পেশ করে বসেন; যদিও পরবর্তীকালে
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারততাত্ত্বিক মাইকেল উইটজেল ও স্টিভ ফার্মার
হাতেনাতে প্রমাণ করে দেন যে, আর্যদের উৎপত্তি ভারত ভূখণ্ডেই একথা প্রমাণ
করতে মরিয়া শ্রী রাজারাম হরপ্পার সিলমোহর বলে যা দেখিয়েছেন তা ভুয়ো।
এতদিন পর্যন্ত ভারতীয় কাদের বলা হবে তার খোঁজে আমরা বহুলাংশে নির্ভর
করেছি সাংস্কৃতিক নৃতত্ব ও পুরাতাত্বিক প্রমাণের ওপর। ভারতের নানা প্রান্তে
থাকা মানুষের ভাষাগত, সংস্কৃতিগত এবং চেহারাগত বৈচিত্র্যের মধ্যেও খোঁজ
চলেছে ভারতীয়ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলির।
[ক্রমশ]
Comments :0