Malda Women Death

রাস্তার বেহাল দশা নয়, গৃহবধূর মৃত্যুতে ‘ভাগ্যকে’ দুষলেন মন্ত্রী!

রাজ্য

‘পথশ্রী’র এক নিদারুণ বিজ্ঞাপনই বটে! গ্রামবাসীদের কথায়, তৃণমূল যে উন্নয়ন, উন্নয়ন বলে চেঁচায় তারই তো শিকার হলো গ্রামের মহিলা। সামান্য জ্বরেও চিকিৎসা পেল না স্রেফ রাস্তা নেই বলে!
ঘটনাস্থল বামনগোলার গোবিন্দপুর-মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। শুক্রবার থেকেই সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিও দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন মানুষজন। খাটিয়ায় শয্যাশায়ী এক অসুস্থ মহিলা। দড়ি দিয়ে বাঁশে সেই খাটিয়া ঝুলিয়ে কাঁধে নিয়ে টানতে টানতে যাচ্ছেন দুজন গ্রামবাসী। তার কারণ মূল সড়ক থেকে মালডাঙা গ্রামের সেই ৫ কিলোমিটার রাস্তায় অবস্থা ভয়াবহ, কোনও গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। বছরের পর বছর একই দশা। তাই হাসপাতালে পৌঁছাতেই সময় লেগেছে দীর্ঘ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। আগে এলে হয়তো বাঁচানো যেত রোগীকে। কিন্তু তা হয়নি বেহাল রাস্তার জন্যই। মৃত্যু হয়েছে গৃহবধূ মামনি রায়ের (২৫)! অবশ্য মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রীসভার সদস্য সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির যুক্তি, ‘‘রাস্তা খারাপ নয় আসলে মহিলার ‘ভাগ্য’ খারাপ, তাই মৃত্যু হয়েছে!’’
বছরের পর বছর পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। এলাকটি হবিবপুর বিধানসভার অন্তর্গত, বিধায়ক বিজেপি’র। লোকসভার সাংসদও বিজেপি’র। দুই শাসক দলের ভূমিকাই এখানে গুরুতর প্রশ্নের মুখে। গত ৩ বছরের অন্তত বার পাঁচেক বিডিও, পঞ্চায়েত দপ্তরে সিপিআই(এম)’র তরফে মালদল-লালগোলা সড়ক পথের ধারে গোবিন্দপুর-মহেশতলা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রাস্তাটির বেহাল দশার কথা জানিয়ে সংস্কারের দাবি তোলা হয়েছিল। একের পর এক ডেপুটেশন দেওয়া হয়। কর্ণপাত করেনি পঞ্চায়েত, প্রশাসন। আর সেই নিস্পৃহতার মর্মান্তিক পরিণামের শিকার হলেন গ্রামেরই গৃহবধূ। 
মামনি রায় সামান্য জ্বরে অসুস্থ ছিলেন কয়েকদিন ধরে। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হওয়ায় শুক্রবার কার্তিক রায় তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু হাসপাতালে যেতে গেলে গ্রাম থেকে মূল রাস্তার সড়কের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। কিন্ত সেই রাস্তায় কোনও অ্যাম্বুলেন্স ঢোকার মতো অবস্থা নেই। তাই পথশ্রী’র বিজ্ঞাপনে মুখ ঢাকা রাজ্যে খাটিয়ায় রোগীকে শুয়ে বাঁশে ঝুলিয়ে ভাঙাচোরা সঙ্কীর্ণ রাস্তা পায়ে হেঁটে পেরোতে হয়েছে কার্তিক রায়কে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। 
এই ঘটনার পরেই শাসক দল ও বিডিও’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। শনিবার সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ পলাশবাড়ি-মালডাঙার রাস্তা দিয়ে যেখানে ওই গ্রামে ঢুকতে হয়, সেই মাহাতা মোড় অবরোধে শামিল হন গ্রামের মহিলা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে সেই অবরোধ। স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা এলাকা। বামগোলায় জাতীয় সড়কেও চলে অবরোধ।
আবার এরই মাঝে মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রীসভার সদস্য সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির মন্তব্য গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আগুন ঘি ঢালে। মন্ত্রী বলেছেন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘‘রাস্তা খারাপ নয়, ভাগ্য খারাপ, তাই মৃত্যু হয়েছে, রাজ্যের সর্বত্র উন্নয়ন হয়েছে। কোনও একটা ঘটনার জন্য ৯৯টা ঘটনাকে খারাপ বলব কেন।’’ খোদ মন্ত্রীর এমন অমানবিক মন্তব্যে বিস্মিত বামনগোলার মানুষজন। এই মনোভাবেরই প্রতিফলন শাসক তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যেও। 
এদিন দুপুরে বামনগোলায় অবরোধের পরেই ছুটে আসেন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত রাস্তা সংস্কারের লিখিত আশ্বাস দেন বিডিও। তবে দ্রুত রাস্তা সংস্কার না হলে ফের অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাসিন্দারা। বিডিও এবং বামোনগোলা থানার আইসি লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানিয়েছেন আগামী তিন মাসের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে রাস্তা। প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে ২ কোটি টাকা বরাদ্দে। রাস্তা হবে মালডাঙা গ্রাম থেকে গঙ্গাপ্রাসাদ কলোনি পর্যন্ত। গ্রামবাসীরা ক্ষোভের সঙ্গে প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনে বলেন, ‘‘বছরের পর বছর দাবি করেছি আমরা। শেষমেষ কী একজনের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিল সরকার? কেউ না মারা গেলে কি সরকার দাবি মানবে না?
 

Comments :0

Login to leave a comment