Mamata Jakir

‘সেফ অ্যান্ড সাউন্ড’ জাকিরের কাটমানি মমতার কাছে ‘প্রাপ্তি’

রাজ্য

অনির্বাণ দে: সাগরদিঘি, 
কাটমানির নাম দিলেন ‘প্রাপ্তি।’ তারপরও দেদার চুরি করা দলের নেতা, কর্মীদের মুখ্যমন্ত্রী এখন ‘ক্ষমা’ চাইতে পরামর্শ দিলেন। 
মমতা ব্যানার্জি পরোক্ষে স্বীকার করে নিলেন যে, দলের নেতা, কর্মীরা চুরি করেছেন।
সোমবার সাগরদিঘিতে ভাষণ দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। মুর্শিদাবাদের প্রশাসনিক বৈঠক উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, “যদি কেউ কারো কাছ থেকে কোন প্রাপ্তি নিয়ে থাকেন। তাঁকে গিয়ে ফেরত দিয়ে দিন। মনে রাখবেন, তাতে মানুষের অনেক ভালো হবে। তাতে মানুষও আপনাকে ভুল বুঝবে না”। 
কিন্তু আমফানের ত্রাণ চুরির পর তিনি বলেছিলেন ‘গ্রেপ্তার করা হবে।’ সে সব হয়নি। এবার চুরির টাকা ফেরত দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতে বলেছেন। 
দলের কর্মীদের বারবার ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মমতা বলেন, “বারবার করে ক্ষমা চাইলে মানুষও ক্ষমা করে দেবে। এবং আমি মনে করি, মা, মাটি, মানুষ না থাকলে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবে না”।
এবার মমতা ব্যানার্জির ‘অস্তিত্ব’ প্রশ্ন চিহ্নের মুখে।
লোভ না করার জন্যও তৃণমূল কর্মীদের কাছে অনুরোধ করেন মমতা। বলেন, “আমি শুধু তৃণমূল কর্মীদের কাছে একটা অনুরোধ করব। লোভ করবেন না কেউ। একজন দু’জন খারাপ হতে পারে, সবাই খারাপ নয়। যদি কেউ অন্যায় করে থাকেন মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিন।’’
অথচ এদিনই প্রশাসনিক সভায় এসে তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বুধবার জাকির হোসেনের বাড়ি, অফিস, চাল মিলে হানা দেয় আয়কর দপ্তর। সেসব জায়গা থেকে প্রায় ১১ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়। এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেন, “জাকির একটা বিড়ি শিল্পপতি। তোমার যদি দোষ থাকে, তুমি (আয়কর দপ্তরের উদ্দেশ্যে)  নিশ্চয়ই আইনত ব্যবস্থা করবে। কিন্তু জাকির শুধুমাত্র তৃণমূল করে বলে তার যে বিশ হাজার বিড়িকর্মী আছে, সেটা তোমরা চোখে দেখো না?” মমতা ব্যানার্জি আরও বলেন, “চাষিদের টাকা দেবে। কটা চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে?” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জাকির যথেষ্ট সেফ অ্যান্ড সাউন্ড। ওরা বুঝে নেবে নিজেদেরটা”।
তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর এদিন দরাজ সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়ে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে? উনি চিরকালই চোর, জোচ্চোর, ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাদের হয়েই সওয়াল করেছেন। 
এদিকে, মমতার বাণীতে কার্যত আশ্বস্ত জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেন। তিনি এদিন বলেন, “সাহস পেলাম। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সব সময় সাহস দেন। পাশে থাকেন”। তাঁর বাড়ি, অফিস ও চালমিল থেকে ১১কোটি টাকা উদ্ধার হলেও জাকির হোসেন দাবি করেছিলেন, বাড়ি থেকে মাত্র ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছে আয়কর দপ্তর। চালকলের টাকা নিয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন জাকির হোসেন। জাকির যদিও প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিলেন, বাজেয়াপ্ত টাকা বিড়ি শ্রমিকদের মজুরির টাকা। এই টাকাই নাকি কৃষকদের ধান কেনার সময় দেওয়া হয়। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছে জাকির হোসেনের দেওয়া সাফাইয়ের প্রতিধ্বনি। যদিও ধান কেনার টাকা কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকারই কথা।
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের ব্যর্থতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাফাই, “ব্যাঙ্ক অনেক টাকা ফেলে রেখে দিয়েছে। যদি না করে, আগামীদিনে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকেও আমরা কাজ করবো। এটা মাথায় রাখবেন”।
সরকারি মঞ্চে তৃণমূলে প্রকল্পের কথাও টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “আমি চাই মানুষ পরিষেবা পাক। তারপরেও যদি বাকি থাকে। আপনাদের বাড়ি বাড়ি লোক যাবে। দূতরা যাবে। তাঁদের কাছে আপনাদের নামগুলো, অ্যাড্রেসগুলো, ফোন নাম্বারগুলো লিখিয়ে দেবেন”।
প্রসঙ্গত, দু’বছর আগেও ‘দিদির দূত’ চালু করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেবার সামনে ছিল বিধানসভা নির্বাচন।
এবার সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ফের ‘দিদির দূত’ চালু হয়েছে। কিন্তু একটি তফাত এবার হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার শহরাঞ্চল থেকে নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সোমবার জানিয়েছেন, ‘‘২০২১-র ফেব্রুয়ারিতে যে দিদির দূত চালু হয়েছিল, সেবার মানুষের এত ক্ষোভের সামনে পড়তে হয়নি। এবার রোজ খবর আসছে রাস্তা আটকানোর, ধ্বস্তাধ্বস্তির।’’
সোমবারও ‘দিদির দূত’দের ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। যেমন উত্তর ২৪পরগনার বাগদা। নিজের বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত বগদার আষাঢু গ্রাম পঞ্চায়েতের আমডোব গ্রামে গিয়েছিলেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তিনি তৃনমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতিও। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের নেতারা। গাড়ি নিয়ে এলাকায় ঢুকতেই কয়েকজন স্থানীয় মহিলা বিধায়কের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁদের দাবি এলাকার কাঁচা রাস্তাটি পাকা করে দিতে হবে। কারণ বর্ষার সময় এই রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এব্যাপারে বিধায়ক মহিলাদের আশ্বাস দেন দ্রুত রাস্তাটি পাকা করার ব্যবস্থা করতে তিনি পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। মানুষের আরও অভিযোগ শৌচাগার তৈরি হয়েছে বহুদিন। বিদ্যুতের অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। বিশ্বজিৎ দাস এলাকায় যেতেই ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিতে বাধ্য হন বিধায়ক।

Comments :0

Login to leave a comment