প্রাপ্য অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নেমে সরকারি কর্মচারী শিক্ষকরা কোনও অন্যায় করেননি, তাঁদের ওপরে লাথি ঘুঁষি চালিয়ে এবং গ্রেপ্তার করে পুলিশই অন্যায় করেছে। বুধবার আদালতের নির্দেশে আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের মুক্তির সংবাদ আসার পর সাংবাদিক বৈঠক করে আন্দোলনকারীদের কুর্নিশ জানিয়ে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, পুলিশি জুলুম ও ধরপাকড়ের মাধ্যমে তৃণমূল সরকার কী বোঝাতে চাইছে? প্রতিবাদের কণ্ঠ এভাবে দমন করতে পারবে? গ্রাম থেকে শহরে রাজ্যের সব অংশের মানুষ নিজেদের প্রাপ্য দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামছেন। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, লুটের বিরুদ্ধে যেভাবে রাস্তায় নামছেন সেভাবেই সব মানুষ নিজেদের দাবিতে আরও একজোট হয়ে রাস্তায় নামুন। আন্দোলনের চাপ এভাবেই বাড়িয়ে যেতে হবে।
সরকার এবং পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সেলিম বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি রোখার মুরোদ নেই, মহার্ঘ ভাতা দেওয়া বেলা আদালতে মিথ্যাচার! মন্ত্রী, বিধায়ক, সরকারের ওপরতলার অফিসারদের বেতন তো বাড়িয়ে নিয়েছেন, সাধারণ কর্মচারীদের বেলায় প্রাপ্য না দিয়ে মামলার নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই পুলিশ আইন এবং প্রোটোকল ভেঙে লাথি ঘুঁষি মেরেছে আন্দোলনকারীদের। পুলিশও তো ডিএ পায় না, সততার সঙ্গে আইন মেনে কাজ করা পুলিশ কর্মীদের দাবিও কর্মচারীদের সঙ্গে একই। তাহলে শান্তিপূর্ণ জমায়েতকে নিয়ন্ত্রণ করতে না জানা এই পুলিশ কর্মীরা কারা? যে আন্দোলনকারীদের নামে জামিন অযোগ্য ধারায় কেস সাজিয়েছিল আদালত আজ তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে, সিআরপিসি, আইপিসি না জেনে পুলিশ কাজ করছে কি করে? এরা ঠিকায় নিযুক্ত নাকি দুর্নীতিতে নিযুক্ত? চোর জোচ্চোর তৃণমূল নেতাদের জন্য পাহারা আর রাস্তায় কর্মচারীদের জন্য লাথি ঘুঁষি কামড়? সুদীপ্ত গুপ্ত, মইদুল মিদ্যাদের পিটিয়ে খুন? গণতন্ত্রে এসব সহ্য করা হবে না।
প্রাপ্যের দাবিতে বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ যত বাড়ছে, কালীঘাটে পুলিশের পাহারা ততই বাড়ছে। সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই কালীঘাটের বাড়িতে সরকারি অফিস নিয়ে গিয়েছিলেন, মুকুল রায়কে বসিয়েছিলেন। এখন সেখানে জনগণ অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ বাঁশ দিয়ে ঘিরে মারার বন্দোবস্ত করেছে কেন? বিধানসভা অভিযান করাও প্রতিবাদীদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
নিয়োগ দুর্নীতিতে বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের এবং ডিএ’র দাবিতে সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের পিছনে সিপিআই(এম) আছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। জবাবে সেলিম বলেছেন, মানুষ ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নামলেই ওরা সেখানে সিপিআই(এম) দেখতে পাচ্ছে এটা তো ভালো কথা। শিক্ষক, কর্মচারী, শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর, ছাত্র, যুব, মহিলা যে যেখানে ন্যায্য দাবিতে লড়ছে, আমরা তাদের সমর্থন করি। এবার চাপের মুখে মমতা ব্যানার্জি আবার দিল্লি ছুটবেন, কলকাতা-দিল্লি-নাগপুর সেতুবন্ধনের চেষ্টা করবেন, সেটাও আমরা জানি।
এদিকে ‘সুপার নিউম্যারিক’ নামে নিয়োগ পদ্ধতিতে শিক্ষক পদপ্রার্থীদের আন্দোলন থামানোর চেষ্টা হাইকোর্টে ভেস্তে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী চাকরি দিতে না পারার জন্য সিপিআই(এম)’কে দায়ী করেছেন। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, হাইকোর্ট সঠিক প্রশ্ন তুলেছে। সব চোর জোচ্চোররা যে ভাষায় কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রীও সেই ভাষায় কথা বলছেন। চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির পরে উনি বলেছিলেন, যা গেছে তা গেছে। ধর্ষণের ঘটনার পরে ভুলে যেতে বলেছিলেন। এখন আবার দুর্নীতির পথে নিযুক্তদের আড়াল করতে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টির কথা বলছেন। তাহলে নিয়োগের পদ্ধতি, পরীক্ষা এসবের কী মূল্য রইল? যারা নিলামে শিক্ষক পদ কিনে ঢুকেছে তারা থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থা টিকবে? দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ঘুরপথে মুখ্যমন্ত্রী যাদের নিয়োগের কথা বলছেন তাঁদের নিয়োগ আইনি হবে? মুখ্যমন্ত্রী যে পরিমাণে দুর্নীতি মুখে নিয়েছেন তা গিলতে পারছেন না, মুখ খুললেই বেরিয়ে আসছে। এই ধাপ্পায় কেউ ভুলবেন না। দুর্নীতির তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে, আদালতের বাইরে সমঝোতা করতে মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, সচিব সহ যারা যারা যুক্ত হয়েছেন তাঁদের সবার শাস্তি হওয়া উচিত।
রাজ্যজুড়ে প্রায় প্রতিদিন যেভাবে বেআইনি অস্ত্র ও বোমা পাওয়া যাচ্ছে, বিস্ফোরণে শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে তাতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সেলিম বলেছেন, সিপিআই(এম)’র ওপরে সন্ত্রাস চালিয়ে এখন নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুনোখুনি করছে তৃণমূল। আমতা থানার চন্দ্রপুরে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে, পুলিশ লাশ গায়েব করে দিয়েছে। কিন্তু মানুষ আর সহ্য করতে রাজি নয়, চন্দ্রপুরের মানুষ আমাকে ডেকেছে, আমি রবিবার ওদের পদযাত্রায় অংশ নিতে যাবো।
বিশ্বভারতীর ঘটনা প্রসঙ্গে সেলিম বলেছেন, বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কিন্তু রাজ্য সরকারের মতো কেন্দ্রীয় সরকারও রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শনের বিশ্বভারতীকে পরিচালনা করতে পারছে না। তারা এমন অপদার্থ একজনকে উপাচার্য পদে বসিয়েছে যিনি ছাত্রবিক্ষোভে গুলি চালানোর কথা বলেন। এই অযোগ্যকে অপসারণ না করলে বিশ্বভারতীকে বাঁচানো যাবে না।
সিপিআই(এম)’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফ থেকে এর আগে একটি কিউ আর কোড প্রকাশ করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পার্টির তহবিলে দানের জন্য মানুষের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। এদিন সেলিম জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। ৪৮০০ জন দান করেছেন, এরমধ্যেই সংগৃহীত হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়াও অনেকে ফোন করে নানাভাবে সাহায্য করার কথা জানিয়েছেন। আমরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পার্টির তহবিলে ডিজিটাল মাধ্যমে দানের জন্য সোসাল মিডিয়াতে আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
Comments :0