Mob Lynching

এবার পিটিয়ে খুন তারকেশ্বরে

রাজ্য

মুচিপাড়া, সল্টলেক, ঝাড়গ্রাম, পাণ্ডুয়ার পর এবার তারকেশ্বর। তার আগে উত্তর ২৪ পরগনায় ‘শিশু চুরি’র গুজব ছড়িয়ে একের পর পিটিয়ে মারার ঘটনা। নৃশংসতার বৃত্ত যেন ক্রমেই বাড়ছে। 

এবার তারকেশ্বরে ‘চোর’ সন্দেহে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করা ২৫ বছরের এক যুবক। মৃতের নাম বিশ্বজিৎ মান্না। বর্বরতায় বিস্মিয় এলাকার সাধারণ বাসিন্দারাও। সামাজিকভাবেই যেন এক ব্যাধি ক্রমেই সংক্রামক হয়ে উঠছে, পাল্লা দিয়েই পুলিশ প্রশাসনের নিস্পৃহতা।

ঘটনার বিস্তারিত কোনও তথ্য জানাতে না পারলেও পুলিশ শুধু জানিয়েছে  দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হুগলী জেলার এসপি (গ্রামীণ) কমনাশিস সেন জানান আমরা ধৃতদের নতুন ন্যায় সংহিতার ধারায় গ্রেপ্তার করেছি’। আইপিসি’র পরিবর্তে এখন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা- সোমবার থেকে দেশ আইপিসি, সিআরপিসি ও এভিডেন্স অ্যাক্টের পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্য আইন কার্যকর হয়েছে। পাণ্ডুয়ায় পিটিয়ে মারার ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে সম্ভবত এরাজ্যে প্রথম ন্যায় সংহিতার ধারা লাগু হলো। জানা গেছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩ নম্বর ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

জানা গেছে,  তারকেশ্বর থানার নাইটা মাল পাহাড় পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের  রানাবাঁধ এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মান্না। পেশায় গাড়ি চালক। পরিবারের অভিযোগ, বিশ্বজিৎ মান্নার প্রতিবেশি বিকাশ সামন্ত ও তার ছেলে মিলেই চুরির মিথ্যা অপবাদে বেধড়ক মারধর করে। তাতেই বিশ্বজিৎ মান্নার মৃত্য হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ চৌধুরি জানান বিকাশ সমন্তের পরিবার বিয়েবাড়িতে গিয়েছিল। তাঁরা গভীর রাতে বাড়ি ফিরে দেখে বাড়িতে চুরি হয়েছে। তাঁরা প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ মান্নাকে সন্দেহ করে। তাঁকে ডেকে চুরির কথা জিজ্ঞাসা করে এবং বেধড়ক মারে। লাঠি লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারা হয় বলে অভিযোগ। গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটায় গ্রামবাসীরা তেমন টের পাননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ যদি সে অপরাধীও  হয় তাহলে তাকে এরকম বেধড়ক মারা হবে কেন? যদি দরকার পড়তো পুলিশের হাতে তুলে দিত। পিটিয়ে মেরে দেওয়া যায় কোন সভ্য সমাজে? বিশ্বজিৎ মান্নার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিল বিশ্বজিৎ মান্নাই।

রাস্তায় ফেলে পিভিসি পাইপ লাঠি দিয়ে  বেধড়ক মারধর করা হয়।নৃশংসত ভাবে। জ্ঞান হারান বিশ্বজিৎ। তাঁর মা রুমা মান্না ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করে। তা সত্ত্বেও তোকে তাঁকে মারধর করা হয়। এরপর বিশ্বজিতের দাদাকে ফোন করে মা জানান পুলিশকে খবর দিতে। বিশ্বজিতের দাদা অভিজিৎ চাপাডাঙ্গায় পুলিশকে জানায় ঘটনার কথা।পুলিশ গিয় আহত বিশ্বজিৎকে উদ্ধার করে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয় যায়। সেখানে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।মৃত বিশ্বজিতের মায়ের দাবি ছেলে চুরি করেনি। তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।

ঘটনায় বিকাশ সামন্ত ও তার ছেলে দেবকান্ত সামন্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ সেই বিকাশ সামন্তের স্ত্রীও স্বীকার করেছেন এই মারধরের কথা । শুধু তাই নয়, যে টাকা চুরির কথা বলে ওই ২৫ বছরের যুবককে মারধর করা হয়েছিল, সেই টাকা পরে নিজেদের তাঁর বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে অভিযুক্তের স্ত্রী! টাকা নিজেদের ঘর থেকেই পাওয়া গেছে অথচ স্রেফ সন্দেহের বশে পিটিয়ে খুন!

বিশ্বজিতের দাদা অভিজিৎ জানান,যারা মারধর করেছে ভাইকে তারা তাঁদেরই আত্মীয়।ভাই চুরি করেনি তাও তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে লাঠি পাইপ দিয়ে মারধর করা হয়েছে। নিহত বিশ্বজিৎ মান্নার স্ত্রী রিম্পা মান্না জানান, সামন্ত বাড়ির এলাকায় প্রভাব আছে। ওরা আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। আমার স্বামী কোনোভাবেই দোষী নয়। বড় বড় পাইপ দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল ওরা আমার স্বামীকে। আমি চাই এরা যেন কঠিন শাস্তি পায়।

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ প্রশাসনের আস্থা হারানোর ফলেই সাধারণ মানুষ এভাবে আইনকে হাতে তুলে নিচ্ছে, হতাশা থেকেই এতটা হিংস্র হয়ে বলে মনে করছেন মনস্তত্ববিদরা। 

Comments :0

Login to leave a comment