Digital despotism in India

মোদীর ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদে ভারত ফের শাটডাউন রাজধানী

জাতীয়

 মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়! টানা পাঁচ বছর বিশ্ব রেকর্ড ধরে রাখলো ভারত। ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট শাটডাউন বলবৎ করার ক্ষেত্রে এই নিয়ে টানা পাঁচ বছর বিশ্বের সব দেশকে পিছনে ফেলে এবারও ‘বিশ্বগুরুর মর্যাদা’ আদায় করে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’। গ্লোবাল ডিজিটাল রাইটস গ্রুপ অ্যাক্সেস নাউ এবং #কীপইটঅন কোয়ালিশনের প্রকাশিত সঙ্কলিত ডেটা অনুসারে ২০২২ সালে ইচ্ছাকৃত ইন্টারনেট শাটডাউনে ভারত হলো সবচেয়ে বড় অপরাধী। শুধু ’২২ সালেই এদেশে অন্তত ৮৪টি শাটডাউন কার্যকর করা হয়েছে। এই সংখ্যাটা এই বছরে যে কোনও দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
আজব শোনালেও ভারতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার রেকর্ড রাখার তেমন কোনও চল নেই। মোদীর ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের জেরে কাশ্মীর হোক বা দিল্লি, যখন যেখানে, যেমন খুশি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এখন রেওয়াজ হয়ে গেছে। ডিপার্টমেন্ট অব টেকনোলজি বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেউই অবশ্য সেই ইন্টারনেট বন্ধ সংক্রান্ত রেকর্ডগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করে না। সম্প্রতি যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে সংসদে রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানেই এব্যাপারে রেকর্ড রাখা ও রেকর্ড পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রযুক্তি দপ্তর ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার এই সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতেই নারাজ।
টানা পাঁচ বছর ধরে বিশ্বের ইন্টারনেট শাটডাউন রাজধানীর সম্মান দখলে রাখা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকেই কটাক্ষ উড়ে আসছে মোদী সরকারের উদ্দেশ্যে। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, এ হলো মোদীর ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ। স্টপ ডেটাবেসের রিপোর্ট একথাও জানিয়ে দিল যে মোদী সরকার ‘সেন্সরশিপ বাড়িয়ে, ওয়েবসাইটগুলি ব্লক করে এবং সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে টেকডাউন (পোস্ট সরানোর) আদেশ জারি করে তাদের প্লেবুককে শান বাড়িয়েছে’। তাঁর আহ্বান, ‘গণতন্ত্রের এমন ধ্বংস প্রতিরোধ করুন।’
২০১৬ সালে #কীপইটঅন ৭০টি সংস্থাকে নিয়ে একটি কোয়ালিশন করে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধের হিসেব রাখার অভিযান চালু করেছিল। তারপর থেকে গত সাত বছরে অ্যাক্সেস নাও-এর শাটডাউন ট্র্যাকার অপ্টিমাইজেশান প্রকল্পে (স্টপ ডাটাবেস) নথিভুক্ত সমস্ত শাটডাউনগুলির ৫৮শতাংশই হয়েছে ভারতে। ‘‘ইন্টারনেট বন্ধ করা ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের বিপজ্জনক কাজ,’’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে এই সংক্রান্ত রিপোর্টে। 
অ্যাক্সেস নাও-এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০২১, এই ৫ বছরই বিশ্বজুড়ে যতবার ইন্টারনেট শাটডাউন হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি হয়েছে ভারতে। ২০১৭ সালে বিশ্বে ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছিল ১০৬টি। ভারতে সেবছর শাটডাউন হয়েছে ৬৯বার। তেমনই ২০২১-এ বিশ্বে ১৮৪টি আর ভারতে শাটডাউন তার মধ্যে ১০৭টি। আর ২০২২সালে বিশ্বের ৩৫ দেশজুড়ে অন্তত ১৮৭টি ইন্টারনেট শাটডাউন হয়েছে। তার মধ্যে ভারতে হয়েছে ৮৪টি। যে ৩৫ দেশের হিসাব এই রিপোর্টে রয়েছে তার মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনও রয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ করার সংখ্যায় সে দেশকেও পিছনে ফেলে পয়লা নম্বর জায়গা দখলে রেখেছে মোদীর ভারত। 
পর্যায়ক্রমে জি ২০-র বৈঠক আয়োজনের বরাত মেলাকে মোদী যেভাবে তাঁর সাফল্য বলে চালাতে চাইছেন, এই রিপোর্ট দেখলে জি ২০ দেশে রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে চোখে চোখ রাখার সাহস জুটবে না ৫৬ ইঞ্চির ছাতির। ওই জি ২০ দেশগুলির মধ্যে ভারতই একমাত্র দেশ যারা দুইবারের বেশি ইন্টারনেট বন্ধ করেছে, আদপে সংখ্যাটি অনেক বেশি ৮৪। ২০২২ সালে রাশিয়া দুটি এবং ব্রাজিল একটি ইন্টারনেট শাটডাউন কার্যকর করেছিল।
ইন্টারনেট শাটডাউন হলো অনলাইন যোগাযোগ মুছে ফেলার একটি মাধ্যম। যা ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিশ্বে প্রতিদিনের কার্যকারিতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তবে এগুলির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুতর প্রভাব ফেলে। এবং কখনও কখনও হিংসাকে আড়াল করতেও সাহায্য করে। কিন্তু সব মিলিয়ে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে ওঠে। ভারতের কাশ্মীরের মানুষ প্রায়শই এই অভিজ্ঞতার সাক্ষী হন। গত বছর শুধু জম্মু-কাশ্মীরেই অন্তত ৪৯বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছে প্রশাসন।

এ হলো মোদীর ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ। স্টপ ডেটাবেসের রিপোর্ট একথাও জানিয়ে দিল যে মোদী সরকার সেন্সরশিপ বাড়িয়ে, ওয়েবসাইটগুলি ব্লক করে এবং সোশাল মিডিয় প্ল্যাটফর্মগুলিকে টেকডাউন (পোস্ট সরানোর) আদেশ জারি করে তাদের প্লেবুককে শান বাড়িয়েছেগণতন্ত্রের এমন ধ্বংস প্রতিরোধ করুন।
-সীতারাম ইয়েচুরি
 

Comments :0

Login to leave a comment