নতুনপাতা
গল্প
ঋতুরাজ
সৌরীশ মিশ্র
রবিবার বিকেলবেলার কিছুক্ষণ বাড়ির কাছের পার্কটায় কাটানো দীঘি আর ওর মা প্রতিমা দেবীর মোটামুটি রুটিনের মধ্যেই পড়ে। পাঁচটা নাগাদ যায় ওরা। ঘন্টা খানেক মতোন থাকে। অষ্টাদশী দীঘির আর ওর মা-এর, দু'জনেরই, পার্কে সময়টা কাটে বেশ। তাই, রবিবারের বিকেলগুলোর জন্য একপ্রকার মুখিয়েই থাকে মা-মেয়ে দু'জনেই।
এই যে গেল রোববার, বিকেলে সেই রকমই পার্কে গিয়েছে ওরা দু'জন। পার্কটা বিশাল না হলেও ছোটো মোটেই নয়। পার্কটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পাঁচিলের গা ঘেঁষে-ঘেঁষে বড়-বড় সব গাছ। কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, পলাশ...। গাছগুলোর নীচে-নীচে একটা করে কংক্রিটের তৈরি বেঞ্চ। পার্কে ঢুকে তারই একটাতে গিয়ে বসল ওরা মা-মেয়ে।
পার্কে আজ লোকজন বেশি নেই। কয়েকটা বাচ্চা ক্রিকেট খেলছে। দু'জন বয়স্ক মানুষ দূরের একটা বেঞ্চিতে বসে। আর, দীঘি আর ওর মা।
বসে আছে ওরা। টুকটাক কথাবার্তা চলছে। হঠাৎ দূর কোথা থেকে যেন ভেসে এল কোকিলের কুহু কুহু ডাক।
"মা, কোকিল ডাকছে!" মা-কে বলে বিস্মিত দীঘি।
"ডাকবে না! মাঘ মাস তো প্রায় শেষ হতে চলল। এরপরই তো ফাল্গুন। বসন্ত কাল তো দরজায় কড়া নাড়ছে রে। দেখছিস না, পার্কের গাছগুলোয় এরই মধ্যেই কুঁড়ি এসে গিয়েছে। আর ক'দিন বাদেই তো ফুলে-ফুলে ভরে উঠবে প্রতিটা গাছ।"
মা-র কথা শুনে দীঘি বেঞ্চি থেকে উঠে পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সত্যিই তো! কুঁড়িতে-কুঁড়িতে ভরে গিয়েছে গাছটা। ফিরে এসে ফের বেঞ্চিতে বসে দীঘি। আর, বসতে বসতেই বলে সে, "প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধ সবকিছুই কেমন দারুণ হয়ে যায় বছরের এই সময়টায়, তাই না মা?"
"হবে না! বসন্ত যে ঋতুরাজ। ঋতুদের মধ্যে সেরা যে সে। সেই বসন্তের ডাকে সাড়া না দিয়ে প্রকৃতি পারে কখনো!" বলেন প্রতিমা দেবী।
ঠিক তখনই, আবারো কোথা থেকে যেন ভেসে আসে কোকিলের কুহু কুহু ডাক ফের আর একবার।
দীঘির মনে হল, কোকিলটা যেন ওর মা-এর কথাতেই সায় দিল ঐভাবে ডেকে উঠে।
Comments :0