Nehru Name Changed

তিন মূর্তি চত্বর থেকেই নেহরুর এবার নাম মুছে দিলেন মোদীরা

জাতীয়

Nehru Name Changed

এবার জওহরলাল নেহরু নামাঙ্কিত মিউজিয়াম ও লাইব্রেরির নামও বদলে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার! তিন মূর্তি ভবন চত্বরের ওই সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগারের নাম বদলে ‘প্রাইম মিনিস্টার্স মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি সোসাইটি’ করা হয়েছে। বস্তুত, মোদীদের আমলে নেহরু-গান্ধী পরিবারের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প, রাস্তা কিংবা স্টেডিয়ামের বদল নতুন কোনও ঘটনা নয় অবশ্য। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্তরের পাঠক্রম থেকে জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী সংক্রান্ত নিবন্ধও বাদ দেওয়া হয়েছে আরএসএস-বিজেপি’র ফতোয়ায়। একারণেই নেহরুর নামাঙ্কিত সংগ্রহশালা এ গ্রন্থাগারের নাম বদলের ঘটনাকে শুক্রবার ‘সঙ্কীর্ণ ও প্রতিহংসার রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।


প্রায় এক বছর আগে ওই তিন মূর্তি চত্বরেই প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেছিলেন মোদী। এবার সোসাইটির নামই বদলে দেওয়া হলো সুচারুভাবে। বৃহস্পতিবার নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি সোসাইটি তড়িঘড়ি ডাকা বিশেষ বৈঠকে বসে নাম বদলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলে। ওই বৈঠকে সভাপতি হিসাবে থাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং নাম বদলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে গিয়ে যুক্তি দেন, ‘এখন থেকে ওই সংগ্রহশালায় জওহরলাল নেহরু থেকে নরেন্দ্র মোদী—সব প্রধানমন্ত্রীর অবদানই তুলে ধরা হবে।’ শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। উল্লেখ্য, রাজনাথ সিং আবার এই সোসাইটির সহ সভাপতি। এই সোসাইটির চেয়ারম্যান হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। এছাড়া সোসাইটিতে রয়েছেন অমিত শাহ, জি কিষান রেড্ডি, নির্মলা সীতারামন, অনুরাগ ঠাকুরের মতো কেন্দ্রীয় নেতারা।
আবার এদিন কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি সোসাইটি’র নতুন নাম হবে ‘প্রাইম মিনিস্টার্স অ্যান্ড সোসাইটি’। ঐতিহ্যশালী গ্রন্থাগারটি আর সংগ্রহশালার অংশ থাকছে না। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রন্থাগার অধিকর্তা এন রঙ্গরাজন ইস্তফা দিয়েছেন। এদিন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক জানিয়েছে, রঙ্গরাজনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ফতোয়া জারি করে ওই নাম বদলের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ কংগ্রেস। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ওই সিদ্ধান্তকে ‘নিম্ন মানসিকতার ও স্বৈরাচারি’ বলে অভিযোগ করেছেন।  কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে শূলে চড়িয়েছেন।

 তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘ছোট ছোট বিষয় নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভোগেন নরেন্দ্র মোদী।’ টুইট বার্তায় রমেশ লেখেন, ‘আপনার মন ক্ষুদ্র এবং প্রতিহিংসায় পূর্ণ। আপনার নাম মোদী। ৫৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের বৌদ্ধিক চর্চার অন্যতম গন্তব্যস্থল হলো ওই সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার। এখানে বই ও পুরানো নথি এবং তথ্যের বিশাল সম্ভার রয়েছে। তবে এখন থেকে এটাকে প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহশালা ও সোসাইটি বলা হবে। ভারতীয় জাতি-রাষ্ট্রের স্থপতির নাম ও ইতিহাসকে বিকৃত করতে, অপমান ও ধ্বংস করতে মোদী কী না করতে পারেন!’ রমেশের কটাক্ষ, ‘একজন অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষ নিরাপত্তাহীনতার বাড়তি বোঝা সামলাতে না পেরেই স্বঘোষিত বিশ্বগুরুর তকমা গায়ে সেঁটে নিয়েছেন।’ সরব হয়েছেন কংগ্রেসের আরেক শীর্ষ নেতা কে সি বেণুগোপালও। তাঁর অভিমত, ‘তিন মূর্তি ভবন হলো একটি ঐতিহাসিক সৌধ, যেখানে ভারতের ভবিতব্য নির্মিত হয়েছিল।’ কংগ্রেস স্পষ্টই মনে করে, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অবদান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না সঙ্ঘ পরিবার।
বিজেপি আবার নাম বদলের সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ পরিবারতন্ত্রকেই টেনে এনেছে। উলটে কংগ্রেস কেন নাম বদলের সিদ্ধান্তকে মানতে পারছে না সেকথা বোঝাতে গিয়ে দাবি করেছেন, ‘‘আসল ওরা একটি পরিবারের বাইরে কোনও কিছু গ্রহণ করতে অক্ষম। এটাই হলো ‘রাজনৈতিক বদহজমের’ প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’’


প্রসঙ্গত, ১৯২৯-৩০ সালে তৈরি হয়েছিল তিন মূর্তি চত্বর। এটি ভারতের ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’র বাসভবন ছিল। ১৯৪৮ সালের অগস্ট মাসে এটা ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকারি বাসভবন হিসাবে পরিণত হয়। ১৯৬৪ সালের ২৭ মে মৃত্যু হয় তাঁর। এই ১৬ বছর এখানে বাস করতেন জওহরলাল নেহরু। এরপর ভারত সরকার তিন মূর্তি চত্বরটি নেহরুর সম্মানে নামাঙ্কিত করে। ১৯৬৬ সালে তৈরি হয় ‘নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি’। ২০১৬ সালে এই চত্বরেই দেশের সব প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মোদী। গতবছর সেই সংগ্রহশালা উদ্বোধন করেন তিনি। আর এক বছরের মধ্যেই বদলে ফেলা হলো নামও।

Comments :0

Login to leave a comment