Ssc Scam

নিয়োগ দুর্নীতিতে ওএমআর শিটের বরাত পাওয়া সংস্থার কর্তা গ্রেপ্তার

রাজ্য

নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম কৌশল ছিল ওএমআর শিট বিকৃত করে অযোগ্যদের টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া। ওএমআর শিট বিকৃত করার যে নেটওয়ার্ক চলেছিল তা নজিরবিহীন, ভারতের অন্য কোনও রাজ্য নিয়োগ দুর্নীতির এমন কদর্য চেহারা দেখা যায়নি, জানিয়েছে সিবিআই।
নায়সা কমিউনিকেশন প্রাইভেট লিমিটেড নামে যে সংস্থা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগের পরীক্ষায় ওএমআর শিট তৈরি করত, সেই সংস্থারই শীর্ষ আধিকারিককে শুক্রবার গ্রেপ্তার করে সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, পরিকল্পিতভাবেই এই সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। গোটাটাই ছিল নিয়োগ দুর্নীতির অংশ।  
উত্তর প্রদেশের নয়ডার সংস্থা ‘নায়সা কমিউনিকেশন প্রাইভেট লিমিটেড’। শিক্ষা দপ্তরের সবুজ সঙ্কেত নিয়েই সেই সংস্থাকে নিয়োগ করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে আগেই প্রতারণার অভিযোগ ছিল ভিন রাজ্যে। সন্দেহজনক সংস্থা। সংস্থার বিরুদ্ধে ‘আই বি কোড, ২০১৬’ ধারায় মামলাও আছে।
সেই সংস্থাকেই ২০১৬ সালে এসএসসি গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের পরীক্ষায় বরাত দেয়। ওএমআর শিট মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেই সন্দেহজনক সংস্থাকেই। যদিও পরবর্তীতে সেই সংস্থাকেই আবার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ওএমআর শিটের পুনর্মূল্যায়নের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছে কমিশন। সিবিআই’র বক্তব্য, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত এই সংস্থার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
আর তদন্তের সেই গতিপথেই শুক্রবার সিবিআই উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে নায়সা’র অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক নীলাদ্রি দাসকে গ্রেপ্তার করে। নিয়োগ দুর্নীতিতে এখনও পর্যন্ত গত জুলাই মাস থেকে মোট ২২জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি ও সিবিআই। গত ২২জুলাই নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জিকে। তারপর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যত এগিয়েছে ততই সামনে এসেছে শাসক তৃণমূলের যোগ। 
নায়সার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করেছিলেন ধৃত ব্যক্তি। সংস্থার গাজিয়াবাদ ও দিল্লির অফিসে তল্লাশিও চালায় সিবিআই। সেখান থেকেও বিপুল নথি উদ্ধার হয়। এই ব্যক্তির সঙ্গে কমিশনের একাধিক অফিসার ও এমনকি তৎকালীন চেয়ারম্যান ধৃত সুবীরেশ ভট্টাচার্যর ঘনিষ্ঠতা ছিল। ওএমআর শিট বিকৃত করার এই কারবারে বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছিল। দিল্লিতে বসে কমিশনের সঙ্গে যোগসাজশে নিয়োগ দুর্নীতিতে নেপথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এই ব্যক্তি। সুবীরেশ ছাড়াও মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও যোগ ছিল ধৃত নীলাদ্রি দাসের। কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল এই গোটা কারবারে, দাবি সিবিআই’র। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সংস্থার শীর্ষ আধিকারিক ধৃত নিলাদ্রী দাস রাজ্য সরকারের এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিল যে একটি ঘটনায় পুলিশ তাঁকে আটক করলেও সরকারের প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে তিনি দ্রুত ছাড়াও পেয়ে যান।
কেন এই সংস্থাকে নিয়োগ করা হলো, কেন পরীক্ষার পরবর্তীতে আবার কমিশন ওই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করল তা জানতে চাইছে সিবিআই। ওএমআর শিটের স্ক্যান সব বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল এই সংস্থা। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সামনে এসেছে ‘সাদা উত্তরপত্রের খেলা’। সেখানেও নির্দিষ্ট চিহ্ন দিয়ে খালি পাতা, তাতে উত্তর বসানো এমন বিভিন্ন প্রতারণার খেলায় স্ক্যান করা, ওএমআর শিটের মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবেই নিয়োগ দুর্নীতির এই বিস্তৃত চক্রে এই সংস্থার কতটা ভূমিকা তা খতিয়ে দেখতে চাইছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। 
এসএসসি দুর্নীতি সামনে আসা এই সংস্থার সদর দপ্তর উত্তর প্রদেশের নয়ডায়। মুম্বাইতেও একটি দুর্নীতির ঘটনায় যুক্ত ছিল এই সংস্থা। মূলত প্রযুক্তিগত সহায়তা, পরীক্ষা গ্রহণ করা, পরীক্ষাপত্রে মূল্যায়ন সহ বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত এই সংস্থা। 
নিয়োগ দুর্নীতিতে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগাম টাকা তোলার পরে ওএমআর শিট বিকৃত করাটা ছিল এই অপরাধের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়েছিল গ্রুপ-সি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে ৩৪৭৭টি ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছিল। তারপরে খোদ এসএসসি যে তালিকা প্রকাশ করে তাতে দেখা যায় ৩৪৭৮টি ওএমআর শিট বিকৃত করে টাকার বিনিময়ে সুপারিশে চাকরি হয়েছিল। আর এখন তদন্তের এই পর্যায়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই’র একটি সূত্রের দাবি, এসএসসি’র গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগে সাত থেকে আট হাজারের মতো ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছিল। পরীক্ষায় শূন্য অথচ বিকৃত ওএমআর শিটে বেমালুম ‘৫৫’ নন্বর পেয়ে তাই টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়ে যান অযোগ্যরা।
ফলে ভিন রাজ্যের সন্দেহজনক সংস্থাকে বেছে আনা এবং তার শীর্ষ আধিকারিকের মাধ্যমে উত্তরপত্র বিকৃত করে অবৈধ নিয়োগের এই চক্র চলেছে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি হেপাজতে রেখে ধৃত নিলাদ্রী দাসকে জেরা করে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের নতুন কিছু তথ্য মিলতে পারে।
 

Comments :0

Login to leave a comment