Protest against Manipur Violence

মণিপুরের জের ছড়াচ্ছে এবার মিজোরামে, প্রতিবাদে সরব দেশ

জাতীয়

মহিলাদের নগ্ন করে হাঁটানোর ঘটনায় শনিবার আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে মণিপুর পুলিশ। এরই পাশাপাশি ওই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার মণিপুর সহ গোটা দেশ। এদিন মণিপুরের চুরাচাঁদপুরে রাস্তায় টায়ার জ্বেলে বিক্ষোভ দেখানো হয়। আসামে প্রতিবাদ জানায় বিরোধী দলগুলি। 
মণিপুরের ঘটনায় গত তিনদিনে ৬ জন গ্রেপ্তার হল। প্রথমে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে আদালতে তোলা হলে ১১ দিন হেপাজতে নিয়েছে পুলিশ। নগ্ন করার ঘটনা সামনে আসার পর অনেকেই সাহস করে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের উপর যে সব ঘটনা ঘটেছে তাতে ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিমদের উপর আক্রমণের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। গুজরাট গণহত্যার প্রথম কয়েকদিন যেভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রাখে রাজ্য সরকার, একইভাবে মণিপুর সরকারও করেছে। আক্রমণের শিকার যেসকল পীড়িতরা ধীরে ধীরে মুখ খুলছেন, তাঁদের বক্তব্য থেকে বোঝা  যাচ্ছে ৩ মে থেকে ১৫ মে রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল বীরেন সিং সরকার। এই সময়কালে অসংখ্য মহিলা পুলিশের সামনেই ধর্ষিতা হয়েছেন, খুন হয়েছেন। বিশেষ করে কুকি পুরুষের চেয়ে মহিলাদের নিশানা করে উগ্র মেইতেইরা। ইম্ফল শহরে পাঠরত কুকি ছাত্রী, হাসপাতালে কর্মরত নার্স, শিক্ষিকা, দোকান কর্মচারী অসংখ্য মহিলার সম্ভ্রমহানি ঘটেছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ধর্ষণের পর অনেক মহিলাকে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। আবার খুন করার সুযোগ থাকলেও অনেককে ধর্ষণ করে ছেড়ে দিয়েছে। ধর্ষিতারা যাতে বাকি জীবন ভয়ে কাটান কিংবা ভয়ে মণিপুর ছেড়ে পালিয়ে যান, সেই উদ্দেশ্যেই ইচ্ছে করেই খুন করেনি বলে মনে করা হচ্ছে।  
স্পষ্ট হচ্ছে, রাজ্যে ৩ মে থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও একটি অংশ কোনওভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। মহিলাদের নগ্ন করার ঘটনায় জড়িত হুইরেস হিরোদাস মেইতেইকে প্রথমদিন তাঁর দোকান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 
এদিকে, মণিপুরে মহিলাদের নগ্ন করার ঘটনা ‘ছোট বিষয়’ বলে দাবি করেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তাঁর কথায়, মণিপুরের ঘটনা নিন্দাজনক। তবে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটে। শর্মার মতে, মণিপুরের একটি ছোট ঘটনাকে নিয়ে হইচই করে বিরোধীরা উত্তর-পূর্বকে বদনাম করতে চাইছে। হিমন্তবিশ্বের এমন মন্তব্যে রাজ্যের বিভিন্ন দলসংগঠন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শনিবার ১২টি বিরোধী দল মণিপুরের ঘটনার প্রতিবাদে গুয়াহাটিতে হিমন্তবিশ্ব শর্মার কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ পালন করে। এছাড়া বীরেন সিং-য়ের ইস্তফা দাবি করে বিরোধীরা। বীরেন সিং-এর ইস্তফার দাবিতে এদিন মণিপুরের সেনাপতি জেলায় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার নাগা মহিলা ও পুরুষ মিছিল করেন।
মণিপুরে উপজাতিদের আক্রমণের প্রতিবাদে এদিন বিজেপি থেকে পদত্যাগ করেছেন গোয়ার বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ পি কান্নান। গত সপ্তাহে মিজোরাম বিজেপি’র প্রদেশ কমিটির উপ সভাপতি আর ভানরামচুঙ্গা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। মণিপুরের বিজেপি বিধায়ক পাওলিয়েনলাল হাওকিপ এদিন বলেন, বীরেন সিং পদত্যাগ না করলে রাজ্যে শান্তি ফিরবে না।
এদিকে, মণিপুরের আগুনের আঁচ এবার অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানোর ভিডিও সামনে আসার পর এর প্রভাব পাশের রাজ্য মিজোরামেও পড়েছে। মিজোরামের বসবাস করা মেইতেইদের উপর আক্রমণের হুমকি দিয়েছে কয়েকটি উগ্র মিজো সংগঠন। ‘এমএনএফ রিটার্নি অ্যাসোসিয়েশন’ প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে মেইতেইদের রাজ্য থেকে বিতাড়নের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশে রাজ্যের মেইতেইদের উপর হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 
মণিপুরের কুকিদের উপর আক্রমণ, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদির কিছু কিছু ভিডিও সামনে আসার পর থেকে মিজোরামে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কুকি ও মিজো নিকট জনগোষ্ঠীর। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভাসের মিল রয়েছে। এমএনএফ’র বিবৃতি প্রকাশের পর মিজোরামের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। মেইতেই বসতি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাঁচজন বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেটকে পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জরুরিকালীন টোল ফ্রি নম্বর খোলা হয়েছে। তবে মিজোরামের মেইতেইরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। তাঁরা আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে আছেন। মিজোরামের বসবাসরত মেইতেইদের বেশিরভাগই আসামের। বাকি অংশ মণিপুরের। মিজোরামের মেইতেইদের ফিরিয়ে আনতে মণিপুর সরকার শনিবার আইজলে দুটি বিমান পাঠিয়েছে। রবিবার সকালে একটি বিমান আইজল থেকে ইম্ফল ও আরেকটি বিমান আইজল থেকে শিলচর বিমানবন্দরে মেইতেইদের নিয়ে ফিরবে। বিমান ধরতে এদিন অন্তত হাজারখানেক লোক আইজল বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছেন। বেশিরভাগেরই টিকিট মিলেনি। অনেকে সড়কপথে আসামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তবে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা বলেছেন, মেইতেইদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এ রাজ্যে সকলের নিরাপত্তা দেবে তাঁর সরকার।

 

Comments :0

Login to leave a comment