SHAHZAHAN'S FANS CLUB

শাহজাহান ফ্যানস ক্লাব’ মুছে দিলেন গ্রামবাসীরা

রাজ্য জেলা

এমনই বিক্ষোভ ফেটে পড়ছে বারবার।

প্রবীর দাস: বসিরহাট
 শাহজাহানেরও ‘ফ্যানস ক্লাব’ ছিল সন্দেশখালিতে। সেই ক্লাবের ছিল দখল করা মাঠ। বৃহস্পতিবার সেই ক্লাবের দেওয়াল লিখন মুছে দখল করা মাঠে নিজেদের অধিকার কায়েম করলেন সন্দেশখালির মানুষ। 
এদিন ঝুপখালিতে শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিনের দখল করা মাছের ভেড়ির আলঘরেও আগুন লাগিয়ে দেন গ্রামবাসীদের একাংশ। মানুষের তাড়ায় বাইকে পালিয়ে যায় সিরাজউদ্দিন।
তৃণমূলের নেতা শাহজাহান সেখ এখনও ফেরার। তার বিরুদ্ধে দেদার চুরি, রেশনের চাল, গম বিক্রি করা, কৃষকের জমি দখল করে মাছের ভেড়ি বানানো, মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা তোলা, ভোট দিতে না দেওয়ার মতো অনেক অভিযোগ। এমন ঘৃণিত এক ব্যক্তির নামে ‘ফ্যানস ক্লাব’ বানিয়েছিল তৃণমূলীরা। তৃণমূলের মন্ত্রী, নেতারা সেই ক্লাবের পৃষ্টপোষক ছিল। শাহাজাহান শুভেন্দু অধিকারীরও খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ ছিল মারাত্মক।
সিরাজউদ্দিনের ভেড়িতে মানুষের জমায়েতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ডিআইজি (বারাসত রেঞ্জ) ভাস্কর মুখার্জির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী। তাদের সামনে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। সিরাজউদ্দিনের নানা কুকীর্তির উল্লেখ করে তারা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের সামনে নিরুপায় ডিআইজি দখল হয়ে যাওয়া জমি, দোকানঘর, ভেড়ি দখলমুক্ত করার আশ্বাস দেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এভাবে সে কারও চাষের জমি, কারও মেছো ঘেড়ি, আবার কারও দোকানঘর দখল করে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজউদ্দিনের ভেড়ির কাছে জড়ো হন স্থানীয়রা। সামনে ছিলেন মহিলারা। সিরাজের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। লাঠি উঁচিয়ে সিরাজের দিকে তেড়ে যান মহিলারা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাইকে চড়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায় সিরাজউদ্দিন।
এদিন সন্দেশখালি থানার অদূরে ঋষি অরবিন্দ মিশন ময়দানের দখল নেন গ্রামবাসীরা। বনসৃজনের কয়েক হাজার গাছ কেটে এই মাঠ দখল করে শাহজাহান ও তার অনুগামীরা। সেখানে ‘শাহজাহান ফ্যানস ক্লাব’ তৈরি করা হয়। মাঠে সাধারণের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। এলাকার মানুষ এই মাঠ ফিরে পেতে চলতি মাসের শুরুতেই সন্দেশখালি থানা, বিডিওর দ্বারস্থ হন। থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে এবং পরবর্তীতে সন্দেশখালি-২’র বিডিও স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। 
বুধবার সন্দেশখালিতে আসেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতীম সরকার। বৃহস্পতিবার মর্নিং ওয়াক সেরে রাজীব কুমার বৈঠক করেন সুপ্রতীম সরকারের সঙ্গে। তারপরে তিনি যান সন্দেশখালিতে। লঞ্চে ওঠার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে তিনি এসেছিলেন গ্রামবাসীদের আস্থা ফেরানোর জন্য। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তাঁরা যেন পুলিশকে জানান। আইন যেন তাঁরা হাতে তুলে না নেন। এই বার্তা দিতেই তিনি এসেছিলেন সন্দেশখালিতে। ডিজি বলেন, যারা আইন ভেঙেছেন, তারা সবাই গ্রেপ্তার হবেন। 
এদিন সিপিআই(এম) সন্দেশখালি-১ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারি, সিপিআই(এম) নেতা নিরাপদ সর্দারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং জোর করে দখল করে নেওয়া জমি ফেরত ও মা-বোনদের সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে যারা, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কালিনগরে মিছিল হয়। মিছিল কালিনগর বাজার সহ অন্যান্য এলাকা প্রদক্ষিণ করে। অন্যদিকে এদিন সন্দেশখালিতে আসে জাতীয় এসটি কমিশনের ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিরা সন্দেশখালির বিভিন্ন গ্রামে যান এবং নির্যাতিত গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। এদিনই আবার নতুন করে সন্দেশখালিতে ১৪৪ নম্বর ধারা জারি করা হলো পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা পর্যন্ত ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৯টি জায়গায় ১৪৪ নম্বর ধারা জারি থাকবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment