Editorial Desire Subhash Chandra

সুভাষচন্দ্র চাইতেন সমস্ত বন্ধন থেকেই স্বাধীনতা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Desire Subhash Chandra

 


ভারতে বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ছিলেন গান্ধীজী, ভীমরাও আম্বেদকর ও জওহরলাল নেহরু সহ দেশের কমিউনিস্ট ও মার্কসবাদীরা। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুও এই মানবতাবাদী আদর্শের একজন প্রকৃত অনুসারী ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক পন্থা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পক্ষে তার একনিষ্ঠ অবস্থান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গৌরবোজ্জ্বল ধারা ছিল। তত্ত্বগতভাবে ও মতাদর্শগতভাবে সাম্প্রদায়িকতার সম্পূর্ণ বিপরীত হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা রাজনীতি থেকে ধর্মকে সর্বাংশে বিচ্ছিন্ন করে, দূরে রাখে। আভিধানিক ও ধ্রুপদী অর্থে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ হলো ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে অসংশ্লিষ্ট কিংবা ধর্মীয় অনুশাসন মুক্ত বা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন যা ধর্মের থেকে পুরোপুরি বিযুক্ত। কিন্তু ভারতে প্রচলিত অর্থে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ তার এই প্রকৃত অর্থের থেকে পৃথক। ভারতে ঔপনিবেশিক বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের যুগে ‘সর্বধর্ম সমভাব’ই ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী তত্ত্ব বা আদর্শ। 

 

প্রচলিত অর্থে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝায় ‘সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করা, তাদের সমন্বয় সাধন করা। ভারতের ক্ষেত্রে আলোচনা প্রসঙ্গে এই বিশেষ প্রচলিত অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা, যদি তা সত্যিই যথাযথভাবে অনুসৃত হয়, অন্তত ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চেয়ে উত্তম ও গ্রহণযোগ্য।


সন্দেহের অবকাশ নেই যে সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন সেই জাতীয়তাবাদী নেতাদের অন্যতম, যারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ও মননে প্রকৃত অর্থেই ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন, সম্পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গেই বাস্তবে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন রাখার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন, প্রকৃত নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গেই প্রয়াসী হয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার দুরূহ কাজে। এই ক্ষেত্রে তিনি তাঁর রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু চিত্তরঞ্জন দাশেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন, তারই দৃষ্টিভঙ্গি ও মনন অনুযায়ী গড়ে তুলেছিলেন নিজের চিন্তাধারা। ব্যক্তিগতভাবে নিষ্ঠাবান ধর্মবিশ্বাসী হলেও সুভাষচন্দ্র  কিন্তু মনে করতেন, ধর্ম হলো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়। অন্যদিকে রাজনীতি তাঁর কাছে‍‌ ছিল সমষ্ঠিগত আচরণের ক্ষেত্র। তিনি এই প্রত্যয়ে দৃঢ় ছিলেন যে, ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়টিকে সমষ্টিগত আচরণের ক্ষেত্রে টেনে আনা যায় না এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাস দ্বারা সমষ্ঠিগত আচরণের ক্ষেত্রটিকে নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করা অনুচিত। আর সেই কারণেই তিনি তাঁর রাজনীতি থেকে ধর্মকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রেখেছিলেন। আর এই ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বনের সঙ্গেই তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার কাজে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুভাষচন্দ্র যে নতুন কোনও তত্ত্ব দিয়েছিলেন, বা এই সকল প্রশ্নে তিনি যে তাত্ত্বিকভাবে নতুন কিছু সংযোজন করেছিলেন, তা নয়। কিন্তু এই তত্ত্বকে বাস্তবে রূপায়ণের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে আন্তরিকভাবেই প্রয়াসী হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ভারত পথিক-এ লিখেছেন যে ছোটবেলায় কটকে থাকার সময় তাঁদের পারিবারিক বাসস্থান ছিল একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। ফলে তাঁদের সঙ্গে গভীরভাবে অন্তরঙ্গ যোগাযোগ, মেলামেশা ও বন্ধুত্ব স্থাপনের সুযোগ বসুর হয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘বস্তুত আমার মনে হয় না যে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া ছাড়া আর কোনোভাবে নিজেকে তাঁদের সঙ্গে পৃথক ভেবেছি।’’ শুধুমাত্র বাল্য বা কৈ‍‌শোরেই নয়, রাজনৈতিক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি তার প্রমাণ রেখেছিলেন। সুভাষচন্দ্র মনে করেছিলেন, অন্যান্য জাতীয় প্রশ্নগুলির সঙ্গে খিলাফৎ প্রশ্নকে যুক্ত করার মধ্যে প্রকৃত ভুলটি নিহিত ছিল না। কিন্তু অন্যত্র সুভাষচন্দ্রের লেখায় পাচ্ছি ভিন্ন সুর। 

 

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় রাজনীতিতে খিলাফৎ প্রশ্নকে স্থান দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক হয়েছিল। এর আগে যেমন বলেছি, যদি খিলাফৎ-পন্থী মুসলমানেরা একটি পৃথক দল গঠন না করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করতেন, তাহলে এরকম অবাঞ্ছিত পরিণাম হতো না। এ ক্ষেত্রে তুর্কীদের নিজেদের কাজের দ্বারাই যখন খিলাফৎ প্রশ্ন বাতিল বলে গণ্য হলো, তখন খিলাফৎপন্থী মুসলমানেরা জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিশে যেতেন।’’


বিংশ শতাব্দীর বি‍‌শের দশকের প্রথমার্ধে বাংলার জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রাণপুরুষ ও কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক চিত্তরঞ্জন দাশ ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু ও নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব, কিন্তু সমষ্টিগত আচরণের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও জাতীয় আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের একনিষ্ঠ সমর্থক এবং এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে তিনি যে কোনও মূল্য দিতে প্রস্তুত ছিলেন। সুভাষচন্দ্রও এই নীতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত ছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে যে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ (১৯২৩) আজও ভারতের জাতীয় আন্দোলনে হিন্দু-মুসলমান ঐক্য ও সম্প্রীতির চূড়ান্ত নিদর্শন রূপে চিহ্নিত, যার মাধ্যমে কলকাতা পৌরসভায় অন্তত চাকরি ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু জনসংখ্যার সমানুপাতিক হারে সংরক্ষণ-ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, তা আজ ইতিহাস। জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি রূপে ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রূপে নেতাজীর তীক্ষ্ণ নজর ছিল যাতে ভারতীয় জনগণের জাতিগত, ধর্মগত, ভাষাগত সম্প্রীতি ও সমন্বয় সর্বোচ্চ স্তরে উত্তীর্ণ হয়। আইএনএ-তে বাহিনীর পঙ্‌ক্তি-ভোজনে হিন্দু-মুসলমান-শিখ-জৈন সব ধর্মের সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ পাশাপা‍‌শি বসে খাদ্য গ্রহণ করতো। ফৌজে বিভিন্ন উচ্চ পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন আবিদ হাসান, শাহনওয়াজ খান, কিয়ামির মতন মুসলিম নেতৃবৃন্দ। 

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে জিন্না, সাভারকার, গোলওয়ালকার প্রমুখ মুসলিম লিগ ও হিন্দু-মহাসভা নেতৃত্বের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বহুবার আলাপ-আলোচনা চালিয়েছিলেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে থাকলে দেশ-বিভাগের কলঙ্কের হাত থেকে ভারতভূমি হয়তো মুক্ত থাকত!
সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক মতাদর্শে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘সমাজতন্ত্র’ বিষয়ক চিন্তা। সমাজতন্ত্রে তাঁর প্রত্যয়ের কথা তিনি বারবার ব্যক্ত করেছেন, ঘোষণা করেছেন যে তিনি চান ভারতে একটি ‘সমাজতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র’। তবে ভারতে সমাজতন্ত্র কী রূপ নেবে সে বিষয়ে তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনা ছিল। সেই চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে কোনও সুসংবদ্ধ তত্ত্ব নির্মাণের অবকাশ পাননি। ১৯৩৭-এর ডিসেম্বর মাসে আত্মজীবনী লেখার সময় তিনি তার দার্শনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আদর্শ ও চিন্তাধারা সম্বন্ধে তিনটি স্বতন্ত্র প্রবন্ধ লেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কর্মব্যস্ততার জন্য তাঁর আত্মজীবনী রচনার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তার আদর্শ ও চিন্তাধারা বিষয়ক কেবল একটি প্রবন্ধ— ‘আমার জীবন দর্শন’ লেখার অবকাশ তিনি পেয়েছিলেন। সমাজতন্ত্রের ভাবধারার প্রতি সুভাষচন্দ্রের আকর্ষণ আমরা প্রথম লক্ষ্য করি যখন তিনি বিলেতে পড়াশুনো করছিলেন। ইতিপূর্বে ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে রাশিয়ায় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই যুগান্তকারী ঘটনা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। ওই সময় বিলেতে অধ্যায়নরত তার বন্ধু দিলীপকুমার রায় লিখেছেন, ‘‘সে সময় লেনিন ও ট্রটস্কির ব্যক্তিত্বের গুণগান করতে সুভাষ প্রায় আত্মহারা হয়ে পড়ত।’’ দিলীপ কুমারের সাক্ষ্যে আমরা আরও জান‍‌তে পারি গ্যারিবন্ডি, মাৎসিনি, মেটারনিখ, ক্রপটকিন প্রমুখের বইয়ের সঙ্গে লেনিনের বইও তিনি পড়তেন। এই সময় সুভাষচন্দ্রের নিজের লেখা চিঠিতেও দেখা যাচ্ছে রুশ বিপ্লবের সপ্রশংস উল্লেখ। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস গ্রন্থে সঠিকভাবেই বলেছেন, ‘‘ইন্ডিয়ান স্ট্রাগলের অপরিণত চিন্তাভাবনা ইউরোপে কয়েক বছর (১৯৩৪-৩৮) কাটাবার ফলে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। বারবার রাশিয়ার উল্লেখ, এমনকি শেষ উদ্ধৃতিতে সিপিজিবি’র উল্লেখ ট্রেড ইউনিয়ন, কিষানসভা, সাম্যবাদী দলগুলির কংগ্রেসে সামূহিক যোগদানে সম্মতি, কংগ্রেস সোশালিস্ট পার্টির প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন, সকল বামপন্থী শক্তিকে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তাকে আরও গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী করার আহ্বান... সবই যেন একই রাগিনীর বিচিত্র বিস্তার।’’ বস্তুত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও তার নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গ সংযোগ ছিল।


সুভাষচন্দ্রের কাছে স্বাধীনতার অর্থ নিছক ব্রিটিশ অধীনতা পাশ থেকে মুক্তি নয়। স্বাধীনতা বলতে তিনি বুঝতেন সর্বাঙ্গীণ স্বাধীনতা, সকল প্রকার বন্ধন থেকে মুক্তি। ১৯২৩ সালের মে মাসে ‘তরুণের স্বপ্ন’ শীর্ষক রচনায় তারুণ্যের জয়গান গেয়ে তিনি লেখেন, ‘‘মনুষ্য জীবন আমাদের নিকট একটা অখণ্ড সত্য। সুতরাং যে স্বাধীনতা আমরা চাই সে স্বাধীনতা ব্যতীত জীবন ধারণই একটা বিড়ম্বনা— যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগে যুগে আমরা হাসিতে হাসিতে রক্তদান করিয়াছি সে স্বাধীনতা সর্বতোমুখী। ...সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, ধর্মনীতি জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমরা সত্যের আলোক, আনন্দের উচ্ছ্বাস ও উদারতার মৌলিক ভিত্তি লইয়া আসিতে চাই।’’ স্বাধীনতার রূপ তার কাছে কি ছিল তা ব্যাখ্যা করে ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৯-এ মেদিনীপুর যুব সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন: ‘‘সর্বাঙ্গীণ মুক্তির বাণী গ্রামে, নগরে নগরে, ঘরে ঘরে প্রচার করিতে হইবে। স্বাধীনতার প্রকৃত স্বরূপ কি তাহা সকলকে বুঝাইয়া দিতে হইবে। স্বাধীনতার অখণ্ড রূপ আমরা অনেকেই আজও উপলব্ধি করি নাই। যেদিন জাতি এই অখণ্ড রূপের উপলব্ধি লাভ করিবে সেই দিন জাতি পূর্ণভাবে মুক্ত হইবার জন্য পাগল হইয়া উঠিবে। 

 

 

পূর্ণ সাম্যবাদের উপর নতুন সমাজকে গড়িয়া তুলিতে হইবে। জাতিভেদের অচল আয়তনকে একেবারে ধূলিসাৎ করিতে হইবে, নারীকে সর্বভাবে মুক্ত করিয়া সমাজ ও রাষ্ট্রে পুরুষের সহিত অধিকার ও দায়িত্ব পালন করিতে হইবে, অর্থের বৈষম্য দূর করিতে হইবে এবং বর্ণ-ধর্ম-নির্বিশেষে প্রত্যেকে (কি পুরুষ কি নারী) যাহাতে শিক্ষার ও উন্নতির সমান সু‍‌যোগ ও সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা করি‍‌তে হইবে। সমাজতন্ত্রমূলক সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র যাহাতে স্থায়ী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য সচেষ্ট হইতে হইবে। এককথায় আমরা চাই ভারতের পূর্ণ ও সর্বাঙ্গীণ স্বাধীনতা।’’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ও সমাজতন্ত্রের প্রতি সুভাষচন্দ্রের এই নিষ্ঠা প্রতিফলিত হয়েছিল স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণয়নেও। আম্বেদকর, জওহরলাল নেহরু প্রবর্তিত সংবিধানে নেতাজীর আদর্শই প্রতিফলিত। গান্ধীজীর হত্যাকারীরা দীর্ঘ সময় ধরে বাধা দিয়ে এসেছে যাতে ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ওই মহৎ সেক্যুলার আদর্শগুলি বাস্তবে রূপায়িত হতে না পারে। সংখ্যালঘু ও দলিত দলনের যে মতাদর্শ ঔপনিবেশিক ভারতের সময় থেকেই সাভারকার, গোলওয়ালকার থেকে মোহন ভাগবৎ, লালকৃষ্ণ আদবানি হয়ে বর্তমানের মোদী-শাহ পর্যন্ত বলবৎ আরএসএস’র সেই নির্মম, অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস। বিগত তিন দশক ধরে ধীরে ধীরে পাঁচশো বছরের ঐতিহাসিক সৌধ বাবরি মসজিদ ধ্বংস থেকে সংসদ ভবনের চূড়ায় অশোক স্তম্ভের বিকৃতি সাধন ঘটিয়ে ভারতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির সর্বনাশ ঘটানো হয়েছে।


নেতাজী সুভাষচন্দ্রের প্রতি মেকি শ্রদ্ধা দেখিয়ে, সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনাদর্শকে প্রতি দিন অসম্মান করে, সুভাষ-দরদি হওয়া চলে না তা আজ দেশের সাম্প্রদায়িক শাসক গোষ্ঠীকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment