প্রবন্ধ
ছাড়পত্র
কৃশানু ভট্টাচার্য
এদেশে আজও শিশু ভূমিষ্ঠ হয় । আগামীতেও হবে। অতীতেও হয়েছিল । কারণ এটাই তো স্বাভাবিক ।
কিন্তু অস্বাভাবিক সেই উচ্চারণ । সেই শপথ । সেই অন্তরের অন্তস্থল থেকে বার করে আনা আকুতি । নিজের চারপাশ সম্পর্কে সেই নির্মম মূল্যায়ন।
পৃথিবীর সামাজিক জীর্ণতা, অর্থনৈতিক অত্যাচার আর শীর্ণ এবং মানসিক ও শারীরিক রোগাক্রান্ত মানুষের মিছিল এও স্বাভাবিক।
স্বপ্নদ্বীপ নিভে যায় । নিভে যায় আশার আলো। আবার অন্ধকারেই জ্বলে ওঠে আশার আলোকবর্তিকা । কারণ সেই ব্যতিক্রমী শপথ-' এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।'
তার যে ছবির সঙ্গে আমাদের পরিচয়, সেই ছবিতে তীব্র আবেদন নিয়ে জ্বলজ্বল করে তার দুটো চোখ - কি এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়। কবির অনুজ অশোক ভট্টাচার্য অগ্রজকে নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেছিলেন-' শ্যাম বর্ণের দোহারা গড়নের মাঝারি সাইজের মানুষ । মাথায় একরাশ ঘন চুল । যেন তারই ভারে মাথাটা ঝুঁকে পড়তো সামনের দিকে। পরনে ধুতি গায়ে শার্ট আর হাতা দুটো কনুই পর্যন্ত গোটানো। কাপড়ের কোচাটা বাঁ হাতে ধরেই অথবা মালকোচা দিয়ে রাস্তার একেবারে ধার ঘেঁষে হেঁটে চলা ছিল তার অভ্যাস।"
জীবনের শেষ লগ্নে যাদবপুর টিবি হাসপাতালের এল এমএইচ ব্লকের এক নম্বর বেডের শুয়ে থাকতে থাকতও তিনি স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন দেখতেন একদিন উঠে দাঁড়িয়ে স্বজন হারানো শ্মশানে মানুষের শত্রুদের শেষ বিচার করবেন । দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন মাস আগে সেই স্বপ্নকে সাকার না করার যন্ত্রণাতে বুকে নিয়েই তার চলে যাওয়া ১৩ ই মে, ১৯৪৭।
কেঁদেছিল পৃথিবীর বুক
গোপনে নির্জনে
ভাবমান পুঞ্জ পুঞ্জ নক্ষত্রের কাছে
পেয়েছিল অতীত বারতঈ?
মেরুদন্ড জীর্ণ তবু বিকৃত ব্যথায়
বারবার আর্তনাদ করে
আহত বিক্ষত দেহ মুমূর্ষ চঞ্চল ,
তবুও বিরাম কোথায় ব্যাগ্র আঘাতের।
[পরাভব]
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ১৪-১৫ বছর বয়সের সেই কিশোর বাংলা সাহিত্য জগতে তার স্বল্পকারের স্মৃতি দিয়েও ভাস্কর । অপরাজিত।
কারণ- যে মানসিক ,আর্থিক্ ,সামাজিক সংকট তাকে আলোড়িত করত ৭৭ বছর বাদেও সেই সংকট আজও বাস্তব । আর তাই বাস্তব তার আকাঙ্ক্ষা । ইতিহাস হয়ে উঠতে পারেনি সেই সংকট।
তাই এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবার লড়াই সংগ্রাম চলবে,। চলতেই হবে।
Comments :0