প্রবন্ধ — মুক্তধারা
বিস্মৃত বাঙালির জীবনচরিত: রাজনারায়ণ এবং 'সেকাল-একাল' সম্পর্ক
সৌ র ভ দ ত্ত
বাঙালির মননশীলতা তার প্রজ্ঞাদর্শন, আত্মচরিতের মধ্যে দিয়ে সদা প্রতিফলিত হয়।উনিশ শতকীয় রেঁনেশাসের প্রাণপুরুষ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব মাইকেল মধুসূদন দত্তের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু হলেন রাজনারায়ণ বসু।বাজারি সংস্কৃতির আগ্রাসনে বর্তমানে যাকে প্রায় ভুলতে বসেছে আত্মবিস্মৃত বাঙালি পাঠক সমাজ।যিনি প্রথম মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'মেঘনাদবধ' কাব্যের ইংরেজি তরজমা করেন।অনুবাদ সাহিত্যে তাঁর লেখনী ছিল অসাধারণ।দেবেন ঠাকুরের অনুরোধে তিনি উপনিষদের কয়েকটি কবিতাও ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন।অসীম প্রতিভাবান রাজনারায়ণ বসুর জন্ম ৭ই সেপ্টেম্বর ১৮২৬ সালে তৎকালীন বঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার মাগুরা পরগণার অন্তর্গত বোড়াল গ্রামে।নিজ দ্রৌহিত্রী কুমুদিনী মিত্রের কাছে যত্নে রক্ষিত স্বহস্তে লিখিত 'রাজনারায়ণ বসুর আত্মচরিত'(অসম্পূর্ণ) গ্রন্থে ব্রিটিশ ভারতবর্ষে সেসময়ের শিক্ষাদীক্ষা প্রণালী,ব্রহ্মধর্মের বিস্তৃত ইতিহাস জানা যায়।তাঁদের আদি নিবাস ছিল কলকাতার গড় গোবিন্দপুর গ্রামে।রাজনারায়ণ বসুর আত্মচরিত পাঠ করলে বোঝা যাবে তার মাতা তাকে কতটা স্নেহ করত।আমরা বিশিষ্ট মনীষা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-ভগবতী দেবীর সুমধুর সম্পর্কের কথা জানি।ব্রহ্মধর্মে আসক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত রাজনারায়ণ বসুর জন্মদিন পালিত হত বেশ অভিনব কায়দায়।
তাঁর কথায়–"প্রতি জন্মতিথি দিবসে মাতা ঠাকুরাণী আমাকে পীতবস্ত্র পরাইতেন ও আমা দ্বারা একটি মাছ পুকুরে ছাড়িয়া দেওয়াইতেন"।জন্মদিন উপলক্ষ্যে মায়ের কাছ থেকে নতুন বস্ত্র প্রাপ্তি।এবং মাতা কর্তৃক উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পুনরুজ্জীবন এর মধ্য দিয়ে সন্তানকে প্রকৃতির পাঠ দেওয়ার আভাসটুকু পাওয়া যায়।পরিবেশ ভাবনাজাত এ ঘটনা বর্তমানে যেকোনো পাঠকের মনোহরণ করবে।শিশু রাজনারায়ণের বাল্য শিক্ষার সূচনা নিজ জ্যাঠামণি মধুসূদন বসু কর্তৃক "মা নিষাদ"," চাণক্য শ্লোক" প্রভৃতি একাধিক সংস্কৃত শ্লোক মুখস্থ করানোর মধ্যে।মধুসূদন বাবু শিশু রাজনারায়ণকে তাঁর হাঁটুতে চড়িয়ে "গাড ঈশ্বর, লাড ঈশ্বর" পড়াতেন।মধুসূদনের পুত্র দুর্গানারায়ণ বসুকে বাল্যকালে রাজনারায়ণ যমের মতো ভয় করতেন।একবার "রাজনারায়ণ" বলে হাঁক পাড়লে তার পিলে চমকে যেত।যখন রাজনারায়ণের বয়স সবেমাত্র সাত তখন তাঁর পিতা তাকে কলকাতায় আনেন। এবং এক সংস্কৃত পণ্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন।পিতার ইচ্ছা ছিল উন্নতমানের প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে রাজনারায়ণকে ইস্পাতের বলিষ্ট ভাষার মতো মানুষ তৈরি করা। ইংরেজি শিক্ষার কারণ হেতু তার স্থান হয় বৌবাজারের ঘুপচি,অন্ধকার ঘরে। শম্ভু মাস্টারের স্কুলে।শম্ভুবাবু ছিলেন একাধারে গোঁড়া হিন্দু এবং ইংরেজি স্বল্পই জানতেন।
(চলবে)
Comments :0