Probandha — SOURAV DUTTA / MUKTADHARA- 8 NOVEMBER

প্রবন্ধ — সিনেমাওয়ালা ঋত্বিক ঘটক / মুক্তধারা

সাহিত্যের পাতা

Probandha    SOURAV DUTTA   MUKTADHARA- 8 NOVEMBER

মুক্তধারা

প্রবন্ধ

সিনেমাওয়ালা ঋত্বিক ঘটক
সৌরভ  দত্ত

কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক, সিনেমাওয়ালা ঋত্বিক ঘটক জন্মেছিলেন ৪ঠা নভেম্বর,১৯২৫ তখনকার দিনে অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশের )রাজশাহী শহরের মিয়াঁপাড়ায়।পিতা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ও মাতা ইন্দুবালা দেবী।শৈশবে স্বল্প কিছু সময় বড় ভাই সাহিত্যিক মণীশ ঘটকের সাথে কোলকাতায় অতিবাহিত করলেও।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাতে তাঁকে আবার রাজশাহী ফিরে আসতে হয়।রাজশাহীতে থাকাকালীন নাট্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।এমনকি স্কুল পালিয়ে নাটকের রিহার্সালও করতেন।


পরে যদিও দুর্ভিক্ষ ও ছে'চল্লিশের দাঙ্গার সময় স্থায়ীভাবে এ দেশে চলে আসেন।বাংলা চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়,মৃণাল সেন প্রমুখের সাথে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়।নিজের নির্মিত চলচ্চিত্র  'মেঘে ঢাকা তারা'র(১৯৬০) মতো  কখনই তিনি প্রচারের আলোয় আসতে চাননি।দেশভাগের ফলে ছিন্নমূলের যন্ত্রণা তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রের অন্যতম বিষয়।ঋত্বিক ঘটকের লেখা প্রথম নাটক 'কালো সায়র'(১৯৪৮)।বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী ঋত্বিক ঘটকে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন (১৯৫১) সালে।ক্ষুধা-দারিদ্র্যতার সংকট নিয়ে তিনি 'জ্বালা' নাটক লেখেন।চলচ্চিত্র পরিচালক নিমাই ঘোষের হাত ধরে তাঁর চলচ্চিত্রে প্রবেশ 'ছিন্নমূল' চলচ্চিত্রে সহকারি চলচ্চিত্র পরিচালকের দায়িত্ব তিনি পালন করেছিলেন।বাংলা সিনেমায় যথার্থ অর্থেই তিনি এক রেভলিউশন ঘটিয়েছেন।'কোমল গান্ধার'(১৯৬১),'সুবর্ণরেখা'(১৯৬২),'অযান্ত্রিক(১৯৫৮','নাগরিক'(১৯৭৭) 'তিতাস একটি নদীর নাম'(১৯৭৩) প্রভৃতি একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।শুধু চলচ্চিত্রকার হিসাবে নয় তিনি কথাসাহিত্যেও ব্যতিক্রমী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।'দেশ', 'অগ্রণী' প্রভৃতি একাধিক পত্রপত্রিকায় তিনি কলম ধরেছেন।'দ্য লাইফ অফ দ্য আদিবাসিজ ','রঁদেভু','ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান','আমার লেনিন','প্রভৃতি শর্টফিল্ম ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন।

 তাঁর অসমাপ্ত উল্লেখযোগ্য ছবি 'রামকিংকর' ১৯৭০ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন।শরণার্থী মানুষের জীবনযন্ত্রণা আর স্বপ্নভঙ্গের ধ্বনি ফুটে ওঠে তাঁর সেলুলয়েডে।'ছিন্নমূল','তিতাস একটি নদীর নাম' এর মতো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে নিজ অভিনয়ের ক্ষেত্রে বেশ দক্ষতা ও পারদর্শিতার ছাপ রেখেছেন।সিনেমায় তিনি আকস্মিক কোনো জাগলারি সৃষ্টি করতে চাননি।মহানগরের চলতি পথে দৈনন্দিন বাস্তবতার ছায়াছবি উঠে এসেছে তাঁর সিনেমায়। ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড অভাব,অটন থাকলেও নিজ দর্শনের ক্ষেত্রে তিনি সর্বদা আপোষহীন থেকেছেন।এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন '‘আমৃত্যু আমার জীবনে কম্প্রোমাইজ করা সম্ভব নয়।'১৯৭৬ এর ৬ই ফেব্রুয়ারি বাংলা চলচ্চিত্রের 'মেঘে ঢাকা তারা' ঋত্বিক ঘটকের জীবনাবসান হয়।

Comments :0

Login to leave a comment