Rahul Gandhi Jail

রাহুল কি এবার সাংসদ পদ খোয়াবেন?

জাতীয়

 মানহানির মামলায় দু’বছরের জেল হওয়ার পর রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গিয়েছে। বিতর্ক শুরু হয়েছে, আর কি রাহুলকে সংসদে দেখা যাবে? কংগ্রেস সাজা ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইতিমধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে। তবুও রাজনৈতিক মহলে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনও ফৌজদারি অপরাধে দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি সাজা ঘোষণার দিন থেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার হারাবেন। মুক্তির পর ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। এদিন রায় ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি আর সাংসদ থাকতে পারছেন না রাহুল গান্ধী। নাকি ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১) ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাবে। 
বিজেপি’র দাবি, নিম্ন আদালত যেহেতু রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেছে, কাজেই তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হওয়াই উচিত। অন্য দিকে, রাহুলের আইনজীবীরা বলছেন, আদালত সাজা ঘোষণার পাশাপাশি তাঁর জামিনের আবেদনও মঞ্জুর করেছে। অর্থাৎ, সাজা এখনই কার্যকর হচ্ছে না। ফলে উচ্চতর আদালতে জামিনের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সাংসদ পদ খারিজের সম্ভাবনা নেই। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী সহ কংগ্রেসের একগুচ্ছ নেতা জানিয়ে দিয়েছেন, নিম্ন আদালতের এই সাজা ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে আপিল করবেন রাহুল।
১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের দুটি ধারার ভিত্তিতেই যদিও রাহুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই আইনের ৮(৩) ধারায় বলা রয়েছে, ফৌজদারি অপরাধে দু’বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি সাজা ঘোষণার দিন থেকেই তিনি আর জনপ্রতিনিধি থাকতে পারেন না। কিন্তু ওই আইনেরই ৮(৪) ধারায় আবার বলা হয়েছে, সাজা ঘোষণার সময় যদি কেউ জনপ্রতিনিধি থাকেন, তা হলে পরবর্তী তিন মাস বা উচ্চতর আদালতে সাজা পুনর্বিবেচনার আবেদনের নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত তাঁর সদস্যপদ খারিজ হবে না। 
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের এই ৮(৪) ধারার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন জনৈক লিলি টমাস এবং এস এন শুক্ল। ২০১৩ সালে বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক এবং বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায়ের ডিভিসন বেঞ্চ ৮(৪) ধারাকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল, নিম্ন আদালত সাজা কার্যকরের নির্দেশ দিলেই ‘দোষী সাব্যস্ত’ জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ হবে। ঘটনাচক্রে, ২০১৩ সালে শীর্ষ আদালতের সেই রায় আটকানোর জন্যই তড়িঘড়ি একটি অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করতে সক্রিয় হয়েছিল তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। কিন্তু সে সময় রাহুল স্বয়ং সাংবাদিক বৈঠক করে ওই অধ্যাদেশের খসড়া বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলার দাবি তুলেছিলেন। রাহুলেরই চাপে শেষ পর্যন্ত দাগী জনপ্রতিনিধিদের ‘রক্ষাকবচ’ দেওয়ার সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করেছিল ইউপিএ সরকার।
রাহুলের ক্ষেত্রে যদিও সাজা কার্যকর ৩০ দিনের জন্য মুলতুবি ঘোষণা করেছে সুরাট জেলা আদালত। তাই সাজা যেহেতু কার্যকর হচ্ছে না, তাই সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রাহুলের আইনজীবী বাবু মাঙ্গুকিয়ার কথায়, ‘নিম্ন আদালত সাজা কার্যকর মুলতুবি রেখে জামিন মঞ্জুরের পরেও জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ করা হয়েছে, এমন কোনও নজির নেই।’
আদালত এদিন তার রায়ে বলেছে যে, অভিযুক্ত একজন সংসদ সদস্য এবং জনসাধারণের কাছে তার বক্তৃতা হিসাবে তিনি যা কিছু বলেন তা ব্যাপক প্রভাব ফেলে, তার ফলে তার অপরাধের গম্ভীরতা আরও বেড়ে যায়। বিচারপতির কথায়, ‘এমন একজন অভিযুক্তকে যদি কম শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে জনসাধারণের কাছে ভুল বার্তা যায়। এমন হলে যে কেউ সহজেই কাউকে অপবাদ দিতে পারে, তার মানহানি করতে পারে। 
এর আগে ২০১৮সালে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের জন্য রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই রাহুলকে সেই মামলায় সতর্ক থাকতে বলেছিল। এদিন বিচারপতি সেই নির্দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেখে মনে হচ্ছে অভিযুক্তের আচরণে কোনও পরিবর্তন হয়নি। 
 

Comments :0

Login to leave a comment