POLITICAL VIOLENCE BENGAL RTI

রাজনৈতিক হিংসা কমিয়ে দেখাচ্ছে রাজ্য, ফাঁস তথ্য আইনে

রাজ্য

রাজনৈতিক হিংসা এবং তাতে প্রাণহানির তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকারের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বা এনসিআরবি’র ২০২১ সালের রিপোর্টে রাজ্যে মাত্র ৩৪টি রাজনৈতিক হিংসা এবং ৭টি রাজনৈতিক খুনের উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তথ্যের অধিকার আইনে পৃথক পৃথকভাবে পুলিশ জেলা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে২০২১ সালে কেবলমাত্র ১০টি জেলাতেই ৬০ জন রাজনৈতিক খুনের শিকার হয়েছেন। রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে অন্ততপক্ষে ১০১৭টি। উদ্বেগজনক এই চিত্রও অসম্পূর্ণ বা আংশিক। কারণ এক ডজনের বেশি পুলিশ জেলা কর্তৃপক্ষ এই সংক্রান্ত প্রশ্নের হয় কোনো উত্তরই দেয়নিনয়তো এমন ঘটনা শূন্য বলে জানিয়েছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে হাইকোর্ট যখন কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার নির্দেশ দিচ্ছে তখন রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যকে শান্তিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক হিংসাবিহীন বলে প্রচার করছেন।  কিন্তু বাস্তব চিত্রটা উঠে এসেছে সমাজ ও আইন গবেষক এবং আরটিআই কর্মী বিশ্বনাথ গোস্বামীর পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে। রাজ্যের ৩০টি পুলিশ জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে পৃথকভাবে আরটিআই অ্যাক্ট বা তথ্যের অধিকার আইন ২০০৫ অনুসারে জানতে চেয়েছিলেন রাজনৈতিক হিংসা ও রাজনৈতিক খুনের ঘটনা সম্পর্কে। ১২টির বেশি পুলিশ জেলা কর্তৃপক্ষ হয় কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে অথবা উত্তর দিতে অস্বীকার করেছে। বাকি জেলাগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে২০২১ সালে অন্তত পক্ষে ১০১৭টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। কেবলমাত্র ১০টি জেলাতেই ৬০ জন রাজনৈতিক খুনের শিকার হয়েছেন। 

তথ্যের অধিকার আইনে পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে দেখা যাচ্ছে২০২১ সালে কোচবিহার জেলায় ২০৬টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে, রাজনৈতিক হিংসায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমান পুলিশ জেলায় ১২৩টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছেরাজনৈতিক হিংসায় ৯জন এবং নির্বাচনী হিংসায় ৭জনের মৃত্যু ঘটেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ জেলায় ১৩২টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা এবং ২জনের মৃত্যু ঘটেছে। হুগলী গ্রামীন পুলিশ জেলায় ৩৭টি রাজনৈতিক হিংসা এবং ৬জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়াও কৃষ্ণনগরবারুইপুরবসিরহাট এবং জলপাইগুড়ি পুলিশ জেলায় ২ জন করে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। 

রাজনৈতিক হিংসা ও তাতে নিহতদের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ কীভাবে চেষ্টা চালিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় তথ্যের অধিকার আইনে তথ্য প্রদানে অস্বীকারের মনোভাবেও। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলা কর্তৃপক্ষ ‘তথ্য নেই’ বলে জানিয়েছে। আবার অনুব্রত মন্ডলের বীরভূম জেলার পুলিশ কর্তৃপক্ষ নির্বাচনী হিংসায় ১৬জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও জেলায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা শূন্য বলে জানিয়েছে। আবার আসানসোল পুলিশ জেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৩২টি রাজনৈতিক হিংসা ঘটলেও মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য। শাসকদলের সন্ত্রাসে পরিচালিত ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ জেলা কর্তৃপক্ষ তো প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতেই অস্বীকার করেছে। চন্দননগর এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনারেটও তাই করেছে। 

বিশ্বনাথ গোস্বামীর অভিযোগ, আসলে রাজ্যে অপরাধের তথ্য পরিসংখ্যান গোপন করাতথ্য বিকৃতি এবং তথ্যের জালিয়াতি ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকার রাজ্যের তথ্য কমিশনের পুরো দখল নিয়েছে, গোটা কমিশন চলছে পুলিশ দিয়ে। এরা নবান্নের নির্দেশে তথ্য গোপন করছেতথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী তথ্য জানাচ্ছে না। অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য গোপন এবং তথ্য জালিয়াতির কারণে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি থেকে শুরু করে রাজ্যবাসীর নিরাপত্তা প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড়িয়েছে। 

Comments :0

Login to leave a comment