গল্প
পাগল
অমল কর
কাক ডাকার আগেই গাঁয়ের খোড়ো-কুঁড়ের ভেঙেছে ঘুম। উপোসে যাদের রাত কাবার,
রাত ভাঙতেই খোঁজ পড়ে কোথায় খাবার। কাকের ঠোকর আর কুকুরের ঘেউ
উপেক্ষা করে আবর্জনার স্তূপে কলহ-কোঁদল লেগে যায় অভুক্ত-উপোসি কাক-কুকুর-মানুষে।
একজন উদভ্রান্ত উশকো-খুশকো মানুষ আবর্জনার স্তূপের দখলদার।
তোলপাড় খুঁজে চলেছে কী এক হিরে-জহরৎ মণিমানিক্য। লোকটার ভিন্ন স্বাদের খিদে হয়তোবা ।
কখনো চুপচাপ, কখনো স্বরে জোর এনে বলে চলেছে ' কোথায় গেল, কী হল, খুব মূল্যবান, পাচ্ছি না,পাচ্ছি না।'
উপোসিরা নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রেখে হাতড়াচ্ছে আবর্জনার পাহাড়।
কাকেরা তক্কে তক্কে চক্রাকারে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে ছোঁ মেরে চলেছে ।
কুকুরেরা ঘেউ দিয়ে ভয় ছড়িয়ে কেড়ে নিচ্ছে হিসসা।
হঠাৎ উপোসিদের ভিড় ঠেলে মাঝবয়সি একজন উপোসির প্রশ্ন ' কী খোঁজো বলো দি নি!
কী পাচ্ছ না! মাছের মুড়ো, পাঁঠার টেংরি, নাকি মুরগির ঠ্যাং!
তা বাছা! গাঁয়ের ভাগাড়ে কুথা পাবা অমূল্যরতন ! গঞ্জে যাও না কে নে!'
চোখে আগুন জ্বেলে বড়ো চোখ করে বিড়বিড় করে কখনো, কখনো গলা চড়িয়ে বলে ওঠে ' পেলি ইখেনেই,
না-পেলি কুথাও নি। আছে, কিন্তু নি। কুথায় গেল বলো দি নি!আছে আছে।
পেতি চাই। পেতি হবে। হবেই। নিউটন যদি পায়, আইনস্টাইন পেলি,
আম্মোও পাব। পেতি হবেই। কিন্তু কুথায় লুকিয়ে সেঁধিয়ে রয়েছিস
বাছা! কুথায় ডুবকি মেরি বসে আছে বল দি নি!'
কুকুর ঘেউ দেয়। কাক ঠোকর দেয়।একটা বাচ্চা মেয়ে বলে ওঠে 'পাগল'।
Comments :0