শারদ মুক্তধারা
গল্প
শারদপ্রাতে
কিংশুক রায়
আজ খুব মনে পড়ে। এভাবে আগে তেমন কোন অনুভব হয়নি। অনুভবের জীবন জুড়ে এখন শুধু বাণিজ্যিক জগতের সোনালী হাতছানি। শেয়ার বাজারের ওঠানামা থেকে আন্তর্জালে বাণিজ্যিক কাজকর্ম। আজ তবে কেন শৈশবের স্মৃতি ভেসে উঠছে মানস চোখে।
প্রতিবছর শারদোৎসবের সময় আর দশটা মানুষের মতন নতুন জামা পরে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে বেড়ানো। আজও সমানতালে বহমান। মাঝখান দিয়ে কেটে গেছে তেত্রিশ বসন্ত। ঋতু মরশুমের শেষ বসন্ত। কিন্তু শরতের মন মাতানো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া শুনে মনের ভিতর গুঞ্জরিয়া ওঠে হারানো সুর। এতদিন সুরটা খুঁজে পায়নি অনুভব। এবার আচমকাই স্মৃতির মণিকোঠায় ভেসে উঠলো কুমারটুলি।
সেদিন আশ্বিনের শারদপাতে,,,
ধীরে ধীরে অনুভবের সব মনে পড়ে যায়। বাপ ঠাকুদার কুমোরপাড়া। মহালয়া শোনার পর কি এক অমোঘ টানে পায়ে পায়ে পৌঁছে যেত সেখানে। অনেক আগেই কাঠামো গড়ে মাটি চাপানো শেষ হয়েছে। রঙের কাজও শেষ। মহালয়ার দিনটি বরাদ্ধ থাকে চক্ষুদানের জন্য। সেদিন সকাল থেকেই কুমারটুলি ব্যস্ত থাকে চক্ষুদান থেকে অঙ্গসজ্জায়। অনেকেরই বায়নানামা আগেই শেষ হয়েছে। নতুন অনেকেই আসে এবারে শারদোৎসবের জন্য বায়না দিতে। সে এক ভীষন ব্যস্ততা। তারই মাঝে অনুভবের মতন ছোট খুঁজে চলে কার হাতের কাজ এবার সেরা হতে পারে। বন্ধুরা মিলে এবার উত্তর ছাড়িয়ে দক্ষিণে পা রাখবে কিনা। সেই পরিকল্পনাও সমান তালে চলতে থাকে।
কর্মজগতে ব্যস্ততার কারণে কয়েক বছর কুমারটুলিতে আসা হয়নি। এবার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ শুনতে শুনতে অনুভবের স্মৃতিতে শৈশব ভিড় করে আসে।
অশ্বিনের শারদপাতে শুনতে শুনতে দরজায় তালা লাগিয়ে, স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ভুবনেশ্বর থেকে ভোর ছয়টায় জন শতাব্দী ধরার জন্য।
Comments :0