গল্প
শতবর্ষে ঋত্বিক ঘটক - মুক্ত ঋত্বিক
সৌরভ দত্ত
মুক্তধারা
যুক্তিতর্ক গল্পের মাঝখানে পড়ে আছে রঙিন জীবন। অনিমেষ ভাবছিল মাধবীলতাকে বুঝিয়ে বলবে । উত্তাল সময় এসে দাঁড়ায়।দাউ দাউ জ্বলছে দুর্ভিক্ষের আগুন ।মানুষ মরছে।হাড় জিরজিরে শিশু।দাবদাহে পুড়ছে কলকাতা।সাদা অ্যাম্বাসেডর থেকে উঁকি কলকাতার মারলেন অভিনেত্রী।দেখলেন কাঁচাপাকা দাড়ি।ভিক্ষা পাত্র হাতে দাঁড়িয়ে অত্যাশ্চর্য মানুষ।–একি ঋত্বিকদা আপনি? আমাকে চিনতে পারছেন ? সেই শান্তিনিকেতনে দেখা!হ্যাঁ, আপনি তো অমুক। টালিগঞ্জের লোক।বলে তার সামনে ভিক্ষাপাত্র নাড়াচ্ছেন সেই কালো চশমা পরিহিত ব্যক্তি।বাটিতে কিছু খুচরো পয়সা।এক পলক ঘুরে দাঁড়ালেন সেই ব্যক্তি ।এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে দাঁড়িয়ে শরণার্থী শিবিরের জন্য হাতে ভিক্ষা করছেন হাত পেতে। চোখের কালো চশমা খুলে অভিনেত্রী বলে উঠলেন অনেক হয়েছে ঋত্বিকদা এবার বাড়ি যান।চারিদিকে অস্থিরতার ছায়া।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঢেউ তোলপাড় করে রমেশকে রমেশ ফিল্ম বানাতে চায়। মানুষের জীবনের বায়োপিক । গণনাট্য ঋত্বিক ছবিগুলো ফুটে ওঠে ।হাতে সেরকম পয়সা নেই রমেশের। সিনেমা দেখতে ভালোবাসে।সিনেমাওয়ালার চরিত্রটা তার প্রিয়। ঋত্বিকের শতবর্ষ আগুনে পোট্রেট আঁকছে এক শিল্পী। কিন্তু ঋত্বিক ঘটকের জীবনকে ধরা খুব মুশকিল ।ধোঁয়া ধূমায়িত ঘর, হোল্ডারে একটা লাল আলো ঝুলছে ।সেই আলোর মাঝখানে দাড়িয়ে রমেশ নতুন চলচ্চিত্রের কথা।বিভিন্ন ঋত্বিক সংক্রান্ত পত্রিকার সংখ্যা, সাদাকালো ছবি,পুরনো সিনেমা। মাটিতে বসে রমেশ দেখছে কিভাবে ডকুমেন্টারিটা তৈরি করা যায় ।দেওয়ালে লটকানো মেঘে ঢাকা তারার অমোঘ সংলাপ–“দাদা, আমি বাঁচতে চাই। আমি বাঁচবো; আমার বাঁচতে বড় ইচ্ছে করে!”একবার আড্ডার ঠেক থেকে টানা রিক্সায় ফিরছে একজন লোক অন্ধকার রাত্রি ,কালো কুয়াশা। রিক্সাওয়ালা পয়সা চেয়েছেন।সত্যজিৎ এর বাড়ির সামনে এসে তর্জনী উঁচিয়ে ঋত্বিক বলে উঠলেন পয়সাটা এনার থেকে নিয়ে নেবেন।ঋত্বিক স্বপ্ন আসেন রমেশের লেলিনের ডাক ভেসে ওঠে সেলুলয়েডে। স্টুডিওতে অপ্রকাশিত কত ফিল্ম জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তার মাঝখান থেকে উঠে আসছে এক স্বপ্নদর্শী মানুষের মুখ।
Comments :0