STORY \ NABANN — PRADIP KUMAR CHAKRABORTY \ NATUNPATA \ 17 NOVEMBER 2024

গল্প \ অয়নের হৈমন্তিক অভিযান — প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী \ নতুনপাতা \ ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  NABANN  PRADIP KUMAR CHAKRABORTY  NATUNPATA  17 NOVEMBER 2024

গল্প  

অয়নের হৈমন্তিক অভিযান 
প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী 
নতুনপাতা


খুব মন দিয়ে আওয়াজটা শুনছিল অয়ন । প্রথমে অনেক দূর থেকে কেমন ঝনন ঝন , ঝনন ঝন,,,,, করে তার কানে আসছিল। আরো কাছে আসতে অয়ন বুঝতে পারে এই আওয়াজের সাথে সে পরিচিত বহুদিন থেকে।অয়ন জানে এটা অঘ্রাণ মাস । মাঠের সব ধান হলুদ বর্ণ হয়েছে। মানে পেকে গেছে।ওদের তোলার মরশুম এখন ।
   অয়ন তাদের টালির চাল যুক্ত এক কামরার মাটির বাড়ির রদ্দি মার্কা জানালা দিয়ে মুখ বাড়ালো । সঙ্গে সঙ্গে মা জিজ্ঞেস করে, "কি দেখছিস অমন উতলা হয়ে ।"
  "  দেখছি কাদের ধান আসছে । আমি একটু মাঠে যাচ্ছি মা ।"
 "কেন?"
  "তুমি জানো তো, এই ধান তোলার সময় নাড়ার মাঝে অনেক ধানের শিষ পড়ে থাকে । আমি সেভেনে পড়ছি বটে , কিন্তু সেই ছোটবেলার অভ্যেসটা আমার থেকেই গেছে । ওই ফেলে যাওয়া শিষ কুড়িয়ে জড়ো করি । মা , তুমি তো অনেকগুলো শিষ্যকে বিনুনি করে তোমা মা লক্ষ্মীর বেদীর কাছে রেখে দাও ।" 
- মা খুব খুশি হয় ছেলের বক্তব্যে।
   অয়ন যখন বাড়ি থেকে বার হলো , হাতে একটা সাবল আর একটা ঝোড়া নিয়ে গেল ।
   বাড়ির সামনে জমির আল ধরে সে হাঁটছে ।দেখছে ও পাড়ার মোড়ল , পাল আর ঘোষদের ধান উঠে যাচ্ছে ।মজুরদের পাশ কাটিয়ে সে মাঠের অনেক দূরে এগিয়ে যায় । ধান তোলার পরে পরিত্যক্ত নাড়ায় তার পা দুটো মাঝে মাঝে আটকে গেলেও সে অনেকের সঙ্গে শিষ কুড়াতে আরম্ভ করে । অনেকগুলো পেয়েও গেল‌। অয়ন জানে তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই ।তবে বাবা দশ কাটা জমি ভাগ চাষী হিসাবে চাষ করে ।এই বছর তাদের জমির ধান দামোদরের বন্যায় সব ডুবে গিয়ে পচে গেছে ।
তাই এই বছরে বাড়িতে কোনো ধান আসবে না । খুব মন খারাপ বাবা ও মায়ের ।
    অয়নের বাবা ফটিক মণ্ডল তাই বলে , "আমাদের এ থেকে রেহাই নেই ।" 
  অয়নের মা বাবাকে বোঝায় ," দেখো , ভেসে পড়ো না । ছেলেটা বড়ো হোক ।‌ তখন ওই আমাদের সব দুঃখ কষ্ট দূর  করে দেবে ।"
 অয়ন  মাঠে ঘুরে ঘুরে এর মধ্যে বেশ অনেকগুলো শিষ কুড়িয়েছে। ঝোড়াতে রেখে সে মাঠের এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে ।
এবার অয়ন শুরু করলো তার দ্বিতীয় অপারেশন। সে বন্ধু মাধবকে ডেকে নিল ।ওকে বললো , "চল‌ কোথায় ইঁদুরের গর্তে আছে  দেখি ।"
 অয়ন দেখতে পায় মাঠের এক কোণে ইঁদুরের গর্ত ।সাবল দিয়ে সে গর্তের মুখ বরাবর আরো মাটি তুলতে থাকে । এইভাবে তুলতে তুলতে দেখে গর্তের মধ্যে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে রাখা আছে গোছা গোছা ধানের শিষ। বেচারা কত কত ইঁদুর তাদের আগামী দিনের কত খাদ্য সামগ্রী এইখানে সঞ্চয় করে রেখেছিল। সেই চোরাই মালে  অয়নরা ভাগ বসালো ।অয়নরা বেশ অনেকখানি ধান এইভাবে একদিনে পেয়ে গেলো।
     এমন সময়  অয়নের চোখ পড়ে তাদের  পাশের পাঢড়ার  পল্টু মাঠে ঘুড়ি ওড়াতে এসেছে । মাধব পল্টুকে বলে , "দে একটু তোল্লাই দে । বেশ হাওয়া আছে ।"
    পল্টুর ঘুড়ি বেশ অনেকটা হাওয়া পেয়ে ওপরে উঠে গেল‌। পল্টুকে অয়ন বলে, সুতো ছাড় ।ঘুড়ি টাকে আরো ওপরে তোল । ভালো হাওয়া পেয়ে ঘুড়িটি শূন্যে কেমন ফর ফর ,, ফর ,,, করে এদিক ওদিক দাপাদাপি করতে লাগলো । ঘুড়ি যত ওড়ে , ওদের সকলের মনে খুব আনন্দ।পল্টু সুতো ছেড়েই যাচ্ছে,,,,,।
    উড়ন্ত ঘুড়ির ছোটাছুটি দেখতে দেখতে অয়ন ধানসুদ্ধ ঝোড়া নিয়ে বাড়ির পথে ধরলো ।

 

Comments :0

Login to leave a comment