অন্যকথা
নতুন ধানের গন্ধ
কৃশানু ভট্টাচার্য
মুক্তধারা
ইট কাঠ পাথরের এই ইমারতের পৃথিবীতে আমের মুকুলের সাথে দেখা হওয়াটাই তো একটা দুর্ঘটনা। জীবন যখন আধুনিকতার সুবাতাস মেখে উড়তে ব্যাকুল, মনিগ্রামের চাষের মাঠে যখন তখন উড়ে এসে পড়ে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই, তখন কানে কানে কেউ যেন বলে দিয়ে যায় শহুরে জীবনে প্রকৃতির প্রকাশভঙ্গি একেবারেই আলাদা। তবু নবান্ন আসে। বাংলা মাস নামচার পাতা ধরে। পা টিপে টিপে এগিয়ে আসে ভাদ্র, আশ্বিন , কার্তিক----। গীতবিতানের পাতা থেকে উঁকি মারে হেমন্ত। বাতাসে তখন হাল্কা হিমের আভাস। চালকলের চিমনি দিয়ে গল গল করে বেরিয়ে আসতে থাকে ধোঁয়া। আর বাদকুল্লা, বীরনগর , জাহাঙ্গীরপুরের গ্রামে গ্রামে সোহাগ মেখে উঠোন কে আলোকিত করে ধান। জীবন বদলে যায়, বদলে যায় অভ্যাস তবু ওই মাছ নামচার পাতা বারে বারে মনে করিয়ে দেয় আমরা কি ছিলাম? কি ছিল আমাদের অতীত?
নতুন ধানের গন্ধ, নতুন গুড়ের গন্ধ, বাতাসে পিঠে পুলির গন্ধ, আর সেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে গ্রামান্তরে এক অনাবিল আনন্দের গন্ধ। সময় বদলায়, গন্ধও হয়তো বদলায় বদলায় না ভালো লাগা।
ভালোলাগারও একটা গন্ধ আছে। ইচ্ছা করলেও যেমন বাতাসে ক্যাম্বিস বলের গন্ধ সত্যি সত্যিই আর পাওয়া যাবে না, কিন্তু মনের মধ্যে তারা রেশ রেখে যাবে ঠিক সে রকমই নারকেল , গুড়, নতুন চালের গুঁড়ো, নতুন চালের ভাতের গন্ধ মনের গভীর কোণে তার রেশকে অমলিন রাখবে। রোজনামচা মেনে সে গন্ধ নাকে নাই বা আসতে পারে। ১৪ তলা ইমারতের ১২ নম্বর তলায় দাঁড়িয়ে চোখে সেই ধান ক্ষেত নাইবা পড়তে পারে। কিন্তু এখনো সেই দ্রিমি দ্রিমি দ্রুম দ্রুম তাল মনে করিয়ে দিয়ে যাবে নবান্নের সময়। মনে করিয়ে দিয়ে যাবে এবার নতুন মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন।
Comments :0