নতুনপাতা
গল্প
দাদুর বিষপাথর
সৌ র ভ দ ত্ত
গ্রামবাংলায় তখনকার দিনে একটা প্রবাদ প্রচলিত ছিল–"সব তীর্থ বারবার ; গঙ্গাসাগর একবার "। দাদুর ছিল বিরাট তীর্থভ্রমণের নেশা।কোথা থেকে তীর্থভ্রমণ করে ফিরলে সদর উঠোনে দাদুর পায়ে জলঢালা ও প্রণাম করার জন্য আমরা মাসির সাথে উন্মুখ দাঁড়িয়ে থাকতাম।আমাদের ছিল এক একান্নবর্তী পরিবারের চওড়া উঠোন।এই বসুপরিবার ছিল মাহিনগর বসু সমাজের অন্তর্গত।যেখানে সকাল-সন্ধ্যা ভাইবোন ও পাড়ার ছেলেমেয়েরা মিলে দাপিয়ে বেড়াতাম।দিদার মুখে শোনা গঙ্গাসাগরে রয়েছে কপিল মুণির আশ্রম।পৌষমেলায় নাকি সেখানে প্রচুর লোকসমাগম হয়।একটা ঘটনার কথা বলি।সেবার গঙ্গাসাগরের মেলায় গিয়েছিল দাদু, রবিকাকা আর বাড়ির বিশ্বস্ত সহচর নিতাই জ্যেঠু।গঙ্গাসাগর মেলায় নাগা সন্ন্যাসীদের ভিড়ে রবিকাকা আর নিতাইদার থেকে দাদু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।তারপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে দাদুর হদিস পায় না। মেলা থেকে হতাশ,বিমর্ষ হয়ে রবিকাকারা ফিরে পড়ে।সদর উঠোনে ঢুকেই রবিকাকার হাপুস নয়নে কান্না –"জ্যেঠাইমা কটাই কাকাকে মেলায় হারিয়ে ফেলেছি।"বাড়িতে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে।মা, মাসিরা কান্না রোল তোলে।এভাবে বেশকিছুদিন কাটে।খিড়কির দিকের গোয়ালে দাদুর পোষা গোরুগুলোকে কেউ খড়,খল,ভুসি প্রভৃতি দিতে গেলে তারা মুখ পর্যন্ত দেয় না।তখন গ্রামে মোবাইল তো দূর অস্ত; কাছে পিঠে টেলিফোনও আসেনি।মামারাও হন্যেহয়ে খোঁজ করতে থাকে।প্রভাতদা বলে–"দেখিস তোর দাদুর যা এলেম ঠিক ফিরে আসবে"।মামারা খবরের কাগজে নিঁখোজ হওয়ার বিজ্ঞাপন দেবে বলে মনস্থ করেছে।এমন সময় হঠাৎ একদিন কাঁধে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে মামার বাড়িতে দাদুর প্রবেশ।দাদুকে দেখে সবাই তো একেবারে থ বনে গেছে।দাদুর থেকে হারিয়ে যাবার বর্ণনা শোনার জন্য একে একে রবিকাকা,নিতাইদা,শিববাবু সবাই এসে হাজির হয়েছে।একটু জিরিয়ে নিয়ে।চণ্ডীমণ্ডপে বসে দাদু হারিয়ে যাওয়ার গল্প পাতেন।
নিজের হাতে তৈরি তালপাতার পাখা নাড়তে নাড়তে দাদু বলেন–"জানিস রবি যখন আমি তোদের থেকে দলছুট হলুম।তখন বাড়ি ফেরার আসা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলুম।" পাশ থেকে রবিকাকা বলে–"আমি আর নিতাইদা তোমাকে গরুখোঁজা খুঁজে অবশেষে ফিরে আসি।" দাদু ঈষৎ হাসেন বলেন–"লক্ষ লোকের ভিড়ে হারিয়ে গিয়ে আমি ভিড় ঠেলে হাঁটতে হাঁটতে ছোট একটা পাহাড়ি রাস্তায় এসে পড়ি।সেখান থেকে দূরে একটা টিলার উপর ক্ষীণ আলোর শিখা দেখতে পাই।" মুন্না মামা কৌতূহল প্রকাশ করে বলে-"মনাই তারপর, তারপর…"
(চলবে)
Comments :0