STORY — SOURISH MISHRA | RABITHAKURER CHABI — NATUNPATA | 12 MAY 2024

গল্প — সৌরীশ মিশ্র | রবি ঠাকুরের ছবি — নতুনপাতা | ১২ মে ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  RABITHAKURER CHABI  NATUNPATA  12 MAY 2024

গল্প

রবি ঠাকুরের ছবি

সৌরীশ মিশ্র

নতুনপাতা 


চার মাস আগের এক রবিবারের সকাল। দশ বছরের ছোট্ট রুমি ওদের বাড়ির বসার ঘরে এসে ঢুকল। হাতে ওর একটা ম্যাগাজিন। এই বহুলপ্রচারিত মাসিক ছোটদের পত্রিকাটি রুমির জন্য রাখা হয় এ বাড়িতে।
রুমি ঘরে ঢুকে দেখল, ওর বাবা খবরের কাগজ পড়ছেন ইজি-চেয়ারে বসে। সে বাবার সামনে এসে দাঁড়াতেই উনি বললেন, "কি রে, কিছু বলবি?"
রুমি হাতে ধরা ম্যাগাজিনটার পাতা উল্টে একটা পাতা বের করে ওর বাবার চোখের সামনে মেলে ধরল। "বাবা, এই নোটিশটা দেখেছো?"
"না রে, এবার এখনো ম্যাগাজিনটা ভাল করে দেখা হয়নি। কিসের নোটিশ রে?"
"এই দেখোনা পড়ে।" বাবার হাতে ম্যাগাজিনটা ধরিয়ে দেয় রুমি।
রুমির বাবা নোটিশটা পড়েন। নোটিশটায় লেখা, এই পত্রিকাটি এ বছরের বৈশাখ মাসের সংখ্যাটি 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশেষ সংখ্যা' রূপে বের করতে চলেছে। এবং সেই উপলক্ষ্যে তারা আয়োজন করছে একটা অংকন প্রতিযোগিতার। তাই, ওরা পাঠক-পাঠিকাদের কাছ থেকে আঁকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি আহ্বান করছে। বিচারকমণ্ডলীর দ্বারা বাছাই করা পাঠক-পাঠিকাদের আঁকা রবি ঠাকুরের তিনখানা ছবি ছাপা হবে ঐ বিশেষ সংখ্যাটিতে।
রুমির বাবার বুঝতে অসুবিধা হয়না মেয়ে প্রতিযোগিতাটায় অংশ নিতে চায়। সে কথাই বলতে এসেছে ও।
"তুই কি পারটিসিপেট করতে চাস এই কম্পিটিশনে?" রুমির বাবা জিজ্ঞেস করেন মেয়েকে।
"পারটিসিপেট করতে তো চাই, কিন্তু..."
"এতে আবার কিন্তু কি? একটা কম্পিটিশনে পারটিসিপেট করবি, এতো খুব ভাল কথা। আর, তুই তো আঁকিস-ও বেশ।"
"কিন্তু বাবা, যদি আমার ছবিটা সিলেক্টেড না হয়?"
"সিলেক্ট না হলে হোলো না, তাতে কি? পারটিসিপেসনটাই আসল ব্যাপার। বুঝলি? আর তুই ধরেই নিচ্ছিস বা কি করে যে তোর আঁকা ছবিটা সিলেক্ট হবে না? হতেও তো পারে সিলেক্ট। তুই ওসব ভাবিস না। দারুণ করে একটা রবি ঠাকুরের ছবি আঁক তো। তারপর আমাকে দিস সেটা। আমি ওটা পাঠিয়ে দেব পত্রিকা দপ্তরে। তবে, দেরী করিস না। লাস্ট ডেট সাবমিসনের কিন্তু এ মাসের শেষেই।"
"ঠিক আছে বাবা।"

ঐ রবিবারের ঠিক আটদিনের মাথায় একটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মোমরঙে আঁকা ছবি ওর বাবার হাতে দেয় রুমি। রুমির বাবাও সেইদিনই সেটা স্পিড পোস্ট করে দেন হেড পোস্ট অফিস থেকে।

আজও রবিবার। রুমিদের বসার ঘরের ঢং ঢং ঘড়িটার কাটা দুটো এই মুহূর্তে জানান দিচ্ছে এখন বাজে সকাল আটটা পাঁচ।
রুমি এখনও ঘুমোচ্ছে। হঠাৎই রুমির বাবা আর মা দু'জনই একপ্রকার ছুটেই এলেন রুমির কাছে। 
"অ্যাই রুমি, ওঠ্, ওঠ্।" রুমির মা ডেকে তোলার চেষ্টা করেন মেয়েকে। সফলও হন।
রুমি শুয়ে শুয়েই ঘুম জড়ানো চোখে দেখল বাবা-মা দু'জনই বিছানায় ওর পাশে বসে।
"আরে, ওঠ্ না। কি দারুণ ব্যাপার হয়েছে দ্যাখ।" মেয়েকে একপ্রকার হাত ধরে টেনেই বিছানায় বসিয়ে দিলেন রুমির মা।
"কি হয়েছে মা?"
এবার বললেন রুমির বাবা, "এই দ্যাখ, তোর আঁকা রবি ঠাকুরের ছবিটা ছেপেছে ম্যাগাজিনে। এইমাত্র কাগজের সাথে ম্যাগাজিনটা দিয়ে গেল।" ম্যাগাজিনটার একটা পাতা খুলে মেয়ের হাতে ধরিয়ে দেন রুমির বাবা।
রুমি দেখে, তাই তো, ওর আঁকা ছবিটা তো ছাপা হয়েছে। তাও আবার একটা পুরো পাতা জুড়ে। আর ছবিটার নিচে লেখা ওর নামও- সেঁজুতি বন্দ্যোপাধ্যায়।
রুমি কি করবে, কি বলবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। শুধুই তাকিয়েই থাকে তার আঁকা ছাপা ছবিটার দিকে।
রুমির বাবা ফের বলতে থাকেন, "দ্যাখ তো, তুই কম্পিটিশনটায় পারটিসিপেট করবি না করবি না ভাবছিলিস। এখন ভেবে দ্যাখ, তুই যদি পারটিসিপেট না করতিস এই সুন্দর মোমেন্টটা তোর জীবনে আসতো, না, এই অ্যাচিভমেন্টটা হোতো?"
"ঠিক বলেছো বাবা, তুমি এক্কেবারে ঠিক বলেছো।" তার আঁকা ছাপা রবি ঠাকুরের ছবিটায় আলতো করে হাত বোলাতে-বোলাতে বলে রুমি।

Comments :0

Login to leave a comment